রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
মামলা দায়ের কমাতে হবে অভিমত আইনজ্ঞদের

কমছে না মামলাজট

বিচারাধীন মামলা ৩৮ লাখ ছাড়িয়েছে

আরাফাত মুন্না

কমছে না মামলাজট

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন বহুমাত্রিক লেখক ও অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ। তাকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরদিন তার ছোট ভাই মঞ্জুর কবির বাদী হয়ে রমনা থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। হুমায়ুন আজাদ ২২ দিন সিএমএইচে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে জার্মানির মিউনিখে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই বছরের ১২ আগস্ট মারা যান। তার মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। মামলার পর ১৭ বছর কেটে গেলেও বিচার শেষ হয়নি। শুধু এটি নয়, দেশের আদালতগুলোয় ঝুলে আছে ৩৮ লাখের বেশি মামলা।

আইনজ্ঞরা বলছেন, বিচারক-স্বল্পতার পাশাপাশি আইনের ত্রুটি, সাক্ষী হাজির না হওয়াই মামলাজটের অন্যতম কারণ। তারা বলেন, বিশাল এ মামলাজট কমাতে হলে আইনি কাঠামোর আওতায় আদালতের মধ্যস্থতায় বাদী-বিবাদী ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের আইনজীবীদের নিয়ে ছোটখাটো মামলাগুলো দ্রুত বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) দিকে মনোযোগী হতে হবে। একই সঙ্গে পুরনো আইনগুলো যুগোপযোগী করা জরুরি। সুপ্রিম কোর্ট থেকে সর্বশেষ পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী (২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) মোট বিচারাধীন মামলা ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭২৮টি। এর সঙ্গে গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ১ লাখের বেশি মামলা যুক্ত হয়েছে বলে ধারণা সুপ্রিম কোর্ট সংশ্লিষ্ট সূত্রের। করোনা পরিস্থিতির কারণে সুপ্রিম কোর্টের বিবরণী শাখার কার্যক্রমে জটিলতা তৈরি হওয়ায় চূড়ান্ত হিসাব দিতে পারেননি কেউ। এদিকে এ বছরের শুরুতে বিচারাধীন মামলা ৩৮ লাখ বলে জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও। তিনি বলেন, চলতি বছর জটের তালিকা থেকে অন্তত ৬ লাখ মামলা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছি। কাজও শুরু হয়েছে।’

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হচ্ছে মামলার পরিসংখ্যান তৈরি করা। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বছরে  চারটি বিবরণীর পাশাপাশি একটি বার্ষিক বিবরণীও প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিবরণী শাখা। তবে চলতি বছরের প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও ২০২০ সালের বার্ষিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে পারেনি সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে কবে এ পরিসংখ্যান আসবে, তা সঠিকভাবে বলতে পারেননি কেউ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের পরিসংখ্যান কার্যক্রমে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে।’

মামলাজট নিরসনে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিচারকাজ বিলম্বিত হলে বিচারপ্রার্থীরা হতাশায় ভোগেন। আবার বিরোধের নিষ্পত্তি দীর্ঘায়িত হলে আরও বিরোধ সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। এ জন্য যেগুলো বাদী-বিবাদীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে (মীমাংসাযোগ্য) নিষ্পত্তি করা যায়, সেগুলো এডিআরের আওতায় নিষ্পত্তি করতে হবে। শফিক আহমেদ বলেন, শত বছরের পুরনো আইন দিয়ে বিচারকাজ পরিচালনা করায় নানা অসুবিধা হচ্ছে। তাই পুরনো আইনগুলো দ্রুত সংশোধন হওয়া জরুরি।

মামলাজট নিরসনে বিচারকদের ওপর চাপ কমানো প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন হাই কোর্টের সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একজন বিচারকের ওপর যে চাপ থাকে তা বিশ্বের কোথাও নেই। আমাদের হাই কোর্টের বিচারপতিরা প্রতিদিন দেড় শ থেকে দুই শ মামলার শুনানি গ্রহণ করেন। আবার যেসব মামলার রায় দেন সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিও লিখতে হয়। এটা অস্বাভাবিক।’ সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, ‘নিম্ন আদালতের বিচারকরাও ওভার লোড নিয়ে কাজ করেন। প্রতিদিন তাদেরও শত শত মামলার শুনানি গ্রহণ করতে হয়।’ তাই মামলাজট কমাতে হলে অধিকসংখ্যক বিচারক নিয়োগ দিয়ে বিচারকদের ওপর চাপ কমানো জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর