রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

সাত দেশে অক্সফোর্ডের টিকা দেওয়া স্থগিত

বন্ধ রাখার মতো কোনো কারণ নেই বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার কথা বলে বিশ্বের সাতটি দেশে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, বুলগেরিয়া এবং থাইল্যান্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার সব টিকা দেওয়া স্থগিত রেখেছে। আর ইতালি ও অস্ট্রিয়া নির্দিষ্ট কিছু ব্যাচের টিকা দেওয়া স্থগিত করেছে। তবে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া এবং মেক্সিকোসহ অন্যান্য দেশ জানিয়েছে তারা ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচি স্থগিত করছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গতকাল বলেছে, অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন থেকে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার সত্যতা সম্পর্কে কোনো প্রমাণ নেই এবং কোনো দেশের কভিড-১৯-এর এই টিকা দেওয়া বন্ধ করা উচিত নয়।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন গ্রহণের পর অনেকের দেহে রক্তজমাট বেঁধে যাচ্ছে এবং এ নিয়ে ইউরোপজুড়ে একরকমের ভয় ছড়িয়ে পড়েছে। জনমনের এই ভয় থেকে ইউরোপের দেশ ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং লুক্সেমবার্গ সাময়িকভাবে টিকা দেওয়া স্থগিত ঘোষণা করে। গতকাল থাইল্যাল্ডে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কভিড-১৯ টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ডেনমার্ক ও নরওয়েসহ কয়েকটি দেশে রক্ত জমাট বাঁধার মতো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার খবর আসার কারণে থাইল্যান্ড তাদের এই টিকা দেওয়ার কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। ইতালি এবং অস্ট্রিয়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই টিকার নির্দিষ্ট কিছু ব্যাচ ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, নরওয়ে এবং থাইল্যান্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া স্থগিত করার পর একই সিদ্ধান্ত নেয় বুলগেরিয়া। বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বয়কো বরিসফ বলেছেন, ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা নিয়ে সবরকম সন্দেহ যতক্ষণ না নাকচ করে দিচ্ছে, ততক্ষণ টিকাদান বন্ধ রাখার নির্দেশ আমি দিয়েছি।

যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি ইতিমধ্যেই বলেছে, এই টিকা থেকে রক্ত জমাট বাঁধার কোনো কারণ তারা পায়নি। তারা আরও বলেছে যে যারা এই ভ্যাকসিন নিয়েছে তাদের মধ্যে যে সংখ্যক মানুষের এই লক্ষণ দেখা গেছে তা সাধারণ জনসংখ্যার অনুপাতে বেশি নয়। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, ক্লিনিকাল ট্রায়ালের সময় এই টিকা নিরাপদ কি না তা নিয়ে ব্যাপক পরিসরে গবেষণা ও পরীক্ষা চালানো হয়েছে। জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা এই টিকা সম্পর্কে যতটা জানি, তাতে ঝুঁকির থেকে এই ভ্যাকসিনের উপকারিতা অনেক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস গতকাল বলেছেন, রক্ত জমাট বাঁধার সঙ্গে এই ভ্যাকসিনের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা খুবই ভালো ভ্যাকসিন এবং এর ব্যবহার বন্ধ করা উচিত নয়।

বিবিসির খবরে বলা হয়, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান স্থগিত করার কারণ এটা নয় এই ভ্যাকসিন অনিরাপদ। অল্প কিছু মানুষ সম্প্রতি টিকা নেওয়ার পর কেন তাদের রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে বিশেষজ্ঞদের তা খতিয়ে দেখতে সময় দেওয়ার জন্য টিকাদান সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। ইউরোপের প্রায় পঞ্চাশ লাখ মানুষ ইতিমধ্যেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণ করেছেন। ইউরোপে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধা বা ‘থ্রম্বোএমবলিক ইভেন্ট’-এর লক্ষণ পাওয়া গেছে মাত্র ৩০টি ক্ষেত্রে। ইতালিতে ৫০ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তি ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হয়ে মারা গেছেন এমন খবরও এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব খবর তদন্ত করে দেখছে। ব্রিটেনে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ ইতিমধ্যেই অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছে এবং এই টিকা নেওয়ার কারণে অতিরিক্ত মৃত্যুর বা রক্ত জমাট বাঁধার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সর্বশেষ খবর