শিরোনাম
বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

শতবর্ষের বর্ণাঢ্য আয়োজন আজ

রফিকুল ইসলাম রনি

শতবর্ষের বর্ণাঢ্য আয়োজন আজ

‘আমি হিমালয় দেখিনি। তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমান।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো এমন মন্তব্য করেছিলেন। যাঁর জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সৃষ্টি হতো না সেই মহান নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন আজ। আয়োজন করা হয়েছে শত বার্ষিকীর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তদানীন্তন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিব নামের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। চার বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। পরাধীনতার নিকষ অন্ধকারে নিমজ্জিত বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে মুক্তির প্রভাকররূপে জন্ম নেওয়া ‘খোকা’ নামের সেই শিশুটি শিক্ষা-দীক্ষা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, মহত্তম জীবনবোধ, সততা, সাহস, দক্ষতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে হয়ে ওঠেন বাংলাদেশ নামক স্বাধীন-সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্রের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। আজ তাঁর ১০১তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস।

জাতির পিতার শততম জন্মবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক অনন্য মাইলফলক-স্পর্শকারী ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর

জন্মশতবার্ষিকী এমন একটি সময় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন সোনার বাংলাদেশ’ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের দ্বারপ্রান্তে। বিশ্বজুড়ে বাঙালি জাতির কাছে এক নবজাগরণের বারতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু যেন ফিরে এসেছেন তাঁর প্রিয় স্বাধীন বাংলাদেশে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিশ্বব্যাপী বাঙালি জাতিকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদ্যাপনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ‘মুজিববর্ষ’ ও স্বাধীনতার ‘সুবর্ণজয়ন্তী’ পালনের ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ১০ দিনের বর্ণাঢ্য আয়োজনে যোগ দিতে ঢাকায় আসছেন প্রতিবেশী দেশগুলোর পাঁচ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। আজ থেকে ২৬ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের কেন্দ্রীয় ওই আয়োজনের পাঁচ দিন তাঁরা যোগ দেবেন। ১০ দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সব কার্যক্রম এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছে উদ্যাপন কমিটি। আজ বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আলোচনা ছাড়াও থাকছে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। এজন্যই নিজেদের ঝালাই করে নিতে গতকাল (মঙ্গলবার) দিনব্যাপী মঞ্চে চলছিল শেষ মুহূর্তের রিহার্সেল। বঙ্গবন্ধুর কর্মজীবন নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হবে প্রতিটি পরিবেশনায়। গত বছর থেকে এ বছরের ২৬ মার্চ মুজিববর্ষ পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও করোনার কারণে তা বাড়িয়ে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি রাখা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গিপাড়ার চিরায়ত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আবেগ-অনুভূতি শিশুকাল থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজ-জীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজাপীড়ন দেখে চরমভাবে ব্যথিত হতেন। গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য জীবনের ১৪টি বছর পাকিস্তানি কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে বন্দী থেকেছেন, দুবার ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু আত্মমর্যাদা ও বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে কখনো মাথা নত করেননি, পরাভব মানেননি। দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং ’৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠন করেন। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ’৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। বঙ্গবন্ধুর সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপসহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে শত বছরের নির্যাতিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি। এরপর ’৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর এ ঐতিহাসিক ঘোষণার পর দেশজুড়ে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। ’৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ শুরু করেন ঠিক সে মুহূর্তে ’৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বিশ্বাসঘাতকদের নির্মম বুলেটে তিনি সপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু সাম্য, মৈত্রী, গণতন্ত্রসহ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন বিশে^র নির্যাতিত-নিপীড়িত ও শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির দূত- স্বাধীনতা ও শান্তির প্রতীক। বাংলা ও বাঙালি যত দিন থাকবে, এ পৃথিবী যত দিন থাকবে, পৃথিবীর ইতিহাস যত দিন থাকবে তিনি একইভাবে প্রজ্বলিত হবেন প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে, প্রতিটি মুক্তিকামী, শান্তিকামী, মানবতাবাদী হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন চিরকাল বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে, পথ দেখাবে। বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এ মহাপুরুষকে চিরকাল স্মরণ করবে। আজ এমন এক সময়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপিত হচ্ছে যখন তাঁরই উদার অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দর্শনে চমৎকার ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশ। ইতিহাস বিকৃতকারীরা আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপিত হয়েছে। প্রায় নিশ্চিহ্ন স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজে নতুন গতি এসেছে। একই সময়ে ভিড় বেড়েছে সুযোগসন্ধানীর। আলাদিনের চেরাগ হাতে রাজনীতি, এক চেয়ারে বসে আরেক চেয়ারের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা চাটুকার আমলা, লুটেরা ব্যবসায়ী, দুই হাত পেতে রাখা বুদ্ধিজীবী গণমানুষের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট করে চলেছে। এমন বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধুর ডাক দেওয়া মুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়ার সাধনায় শপথে উদ্যাপিত হচ্ছে মুজিববর্ষ। শেখ মুজিবুর রহমান আদর্শ রাজনীতির প্রতীক। দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য যে রাজনীতি তা আসলে কী? কেমন হয়? আজকের রাজনীতি দেখে উত্তর পাওয়া যায় না। ফিরতে হয় সেই বঙ্গবন্ধুর কাছেই। দেশের জন্য রাজনীতি করতে গিয়ে, জনগণের অধিকারের প্রশ্নে আপসহীন অবস্থান গ্রহণ করায় ১৩ বছর কারাগারে কাটাতে হয় তাঁকে। দেশ ও জনগণের প্রতি কমিটমেন্ট, নেতৃত্বের গুণ শেখ মুজিবুর রহমানকে সমকালীন অন্য রাজনীতিকদের চেয়ে আলাদা করে তোলে। তাঁর মাঝে ছিল বিরল সম্মোহনী ক্ষমতা। অদ্ভুত এক আকর্ষণ ছিল। সব মিলিয়ে বাঙালির প্রাণের স্পন্দন হয়ে ওঠেন তিনি। ঐক্যের প্রতীক হয়ে ওঠেন। দেশপ্রেমের বোধ, জাতীয় চেতনা জাগ্রত করতে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। বাঙালির মন ও মানস গঠনে তাঁর ছিল অসামান্য অবদান। প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক রূপকার তিনি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মহান স্থপতি। বাঙালি জাতিসত্তাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। এর আগে হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির আলাদা কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল না। এমনকি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন অবাঙালি। বিপরীতে বাঙালির জন্য বাংলাদেশ নামের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ইতিহাস রচনা করেন শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী হিসেবে রাজনীতি শুরু করলেও দেখা যায়, সুভাষচন্দ্র বসুর সশস্ত্র সংগ্রামের রাজনৈতিক দর্শন তাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। এ জাদুমন্ত্রে বাঙালিকে বশ করেছিলেন তিনি। সংগঠিত করেছিলেন। প্রস্তুত করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের জন্য। তারও আগে ভাষার অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান। কবির ভাষায়- ‘‘যতকাল রবে পদ্মা, মেঘনা গৌরী, যমুনা বহমান ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’’ মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দশ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এসব আয়োজনে যোগ দিতে ঢাকায় আসছেন প্রতিবেশী দেশগুলোর পাঁচ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। আজ থেকে ২৬ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের কেন্দ্রীয় ওই আয়োজনের পাঁচ দিন তারা যোগ দেবেন। জানা গেছে, ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি অতিথিরা ভার্চুয়ালি ও সশরীরে উপস্থিত থাকবেন। চলমান করোনা মহামারী বিবেচনায় অতিথি আমন্ত্রণ সীমিত করা হয়েছে। প্রতিদিনের জন্য ৫০০ করে অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সবাইকে করোনা পরীক্ষা করে অনুষ্ঠান স্থলে ঢুকতে হবে। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে নানান শৈল্পিকতায়। অনুষ্ঠানস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার, পদ্মা সেতু, গ্রামীণ জীবন যাপনের আবহ, জাতীয় মাছ ইলিশসহ নানা দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনা। এদিকে জাতির পিতার জন্মদিন ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীর বড় বড় ভবনে আলোকসজ্জার মধ্যেও ফুটে উঠেছেন বঙ্গবন্ধু। যেখানে লেখা ‘বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ’। বর্ণিল এমন সব সজ্জার সবটুকুই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে। এ সজ্জা চলবে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন পর্যন্ত। গত কয়েক দিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, মহানগরীর সরকারি-বেসরকারি দফতর থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেলগুলো সেজেছে বর্ণিল আলোকসজ্জায়। সড়কের দুই পাশ ও মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে বাহারি রঙের আলোর ঝলকানি। রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, মহানগরীর প্রধান সড়ক, স্থাপনাগুলোর বর্ণিল আলোকসজ্জায় চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। বাদ যায়নি সড়কের মোড়, ল্যামপোস্টও। সড়কদ্বীপগুলোয় আলোকসজ্জার পাশাপাশি বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের জাতীয় পতাকাও শোভা পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান নূর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থাকবেন। বঙ্গবন্ধু আবেগের একটি স্থল, সেই আবেগকে ধারণ করেই এসব ধরনের কাজকর্ম পরিচালনা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানগুলোর শুরুতে ভার্চুালি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পরবর্তীতে সশরীরে উপস্থিতি রেখে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সময় বাড়ানো হয়েছে।’ এই সময় বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে অনেক কাজ ব্যাহত হয়েছে। বাড়তি সময় পাওয়ায় অনেক কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। চিরন্তন আলোকশিখা প্রতিপাদ্য নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করা হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর নানা আয়োজন। তিনি বলেন, ‘জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন ভিন্নমাত্রায় অনুষ্ঠিত হবে। এ ধরনের এমন আয়োজন আগে কখনো হয়নি। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নযাত্রার ভালোবাসার অগ্রগতির মেলবন্ধন। ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।’ প্যারেড গ্রাউন্ডের আয়োজনে আজ ১৭ মার্চ সম্মানিত অতিথি হিসেবে থাকবেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ। এরপর ১৯ মার্চ শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে, ২২ মার্চ নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী, ২৪ মার্চ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং এবং ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যোগ দেবেন। সূত্রে আরও জানা যায়, আজ বিকাল সাড়ে চারটায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি সশরীরে উপস্থিত থাকবেন। শিশুশিল্পীদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হবে অনুষ্ঠান। পবিত্র গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হবে। মুজিব চিরন্তন থিমের ওপর একটি এনিমেশন চিত্র প্রদর্শিত হবে। থিম সং-এর মিউজিক ভিডিও প্রদর্শিত হবে। স্বাগত ভাষণ রাখবেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ভিডিওবার্তা প্রদর্শিত হবে। উপস্থিত থেকে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ। পরে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অতিথিদের কাছে স্মারক হস্তান্তর করা হবে মুজিব চিরন্তনের। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যা ছয়টার পর বাংলাদেশ এবং ভারতীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আজ সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।

জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে ভোরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল সাড়ে ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের বকুলতলায় শিশুসমাবেশে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা এতে সভাপতিত্ব করবেন। এর আগে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব এস এম সালাউদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী সমাধিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বেলা সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। এ ছাড়াও টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রতিনিধি দল টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন। দোয়া মাহফিল ও বিশেষ প্রার্থনার কর্মসূচি : বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

 এ ছাড়াও সকাল ৮টায় তেজগাঁও গির্জায়, সকাল ৯টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে।

এদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আগামী ২১ মার্চ বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভাপতির বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে সারা দেশে যথাযথ মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর