বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন শিল্পে বিনিয়োগের সুবিধা অব্যাহত রাখুন

এনবিআরকে বাজেট প্রস্তাবে বিএলডিএ-রিহ্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী অর্থবছরের বাজেটে আবাসন শিল্পের জন্য বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন-বিএলডিএ ও রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব। সংগঠন দুটি বলেছে, বাড়ি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধন খরচ কমিয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হোক। এই খাতের সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থা গতিশীল করতে নিবন্ধন খরচ মোট ৩ শতাংশ নির্ধারণ এবং অর্থ সরবরাহ বাড়াতে বিশেষ তহবিল গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছে বিএলডিএ এবং রিহ্যাব।

গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচার রাজস্ব ভবনে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে দেওয়া প্রস্তাবে এসব কথা বলেছে বিএলডিএ এবং রিহ্যাব। এতে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল ও সহসভাপতি কামাল এবং বিএলডিএ সচিব নওশেরুল আলম প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। বিএলডিএর বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়- বর্তমানে বাংলাদেশের আবাসন শিল্প খাত নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। করোনা মহামারী সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা, আকাশচুম্বী জমির মূল্য ও জমির অপ্রতুলতা, বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে এই খাতে প্রচ- পরিমাণ তারল্য সংকট এবং সর্বোপরি রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফি ও করের উচ্চ হারের কারণে অমিত সম্ভাবনাময় আবাসন খাতটি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এই অবস্থায় সরকারের আশু পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই সংকটের উত্তরণ অসম্ভব। বিএলডিএ প্রস্তাবে আরও বলেছে- দেশের আবাসন চাহিদার শতকরা ৮০ ভাগই জোগান দিচ্ছেন বেসরকারি উদ্যোক্তারা। আবাসন খাতের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই শিল্প খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ৪৫৮টি পণ্যভিত্তিক উপখাত দেশে প্রায় ৩ কোটি লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় কোষাগারে আবাসন খাত আয়কর, ভ্যাট ও নিবন্ধন ফি বাবদ বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব প্রদান করে। এ ছাড়াও পণ্যভিত্তিক উপখাতসমূহ শুল্ক, কর, ভ্যাট ইত্যাদি বাবদ বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব প্রদান করে। সর্বোপরি, প্রবাসী আয়ের একটি বড় অংশ আবাসন খাতে বিনিয়োগ হওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, নিবন্ধন অধিদফতরের হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা নিবন্ধন খাতে ৭ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এর আগের কয়েক বছর এ আয়ের পরিমাণ ছিল প্রতি বছর ১১ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা। করোনাকালীন সংকটে ফ্ল্যাট ও প্লট বিক্রি কমে যাওয়ায় নিবন্ধন খাতে আয় কমেছে। নিবন্ধন ছাড়াও আবাসন খাত থেকে ভ্যাট ও অন্যান্য কর বাবদ সরকারের আয় কয়েক হাজার কোটি টাকা। করোনাকালীন সংকট কাটিয়ে উঠতে আগামী বাজেটে রাজস্ব খাতে ছাড় দেওয়া প্রয়োজন। সংগঠন দুটি বলেছে, করোনা মহামারীর কারণে দেশের আবাসন শিল্প মহাসংকটে আছে। গত এক বছরের অর্থনৈতিক মন্দা, জমির আকাশচুম্বী মূল্য ও বাড়ি বা ফ্ল্যাট নির্মাণে জমির সংকট, দেশের অভ্যন্তরে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তিতে সাময়িক স্থগিতাদেশ এবং নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই খাত স্থবির হয়ে পড়েছে। ওদিকে শেয়ারবাজারের ধস এবং বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ায় এই খাতে ভয়াবহ তারল্য সংকটসহ মূলধন ব্যয় জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী অর্থ বছরে আবাসন খাতকে বাঁচাতে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে।

সর্বশেষ খবর