শিরোনাম
শুক্রবার, ১৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ-মালদ্বীপ বন্ধুত্ব আরও জোরদার

চার সমঝোতা স্মারক সই, সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়াতে ঐকমত্য, দুই দিনের সফর শেষে ঢাকা ছাড়লেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশ-মালদ্বীপ বন্ধুত্ব আরও জোরদার

বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে গতকাল স্বাক্ষরিত হয়েছে চারটি সমঝোতা স্মারক। বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল ও অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আগ্রহ দেখানো হয়েছে শীর্ষ বৈঠকে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা সফরে আসা মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ গতকাল রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে স্বাক্ষর হয়েছে চারটি সমঝোতা স্মারক। পাশাপাশি সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়াতে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে দুই দেশ। বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল ও অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের মতো বিষয়ে আগ্রহ দেখানো হয়েছে শীর্ষ বৈঠকে। দুই দিন ঢাকায় ব্যস্ত সময় কাটিয়ে গতকাল মধ্যরাতে ঢাকা ত্যাগ করেছেন প্রেসিডেন্ট। যৌথ সংবাদ  সম্মেলনে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পেয়েছে নতুন মাত্রা। দুই দিনের সফরে বুধবার ঢাকায় আসা মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে স্বাগত জানান। দুই নেতা প্রথমে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। পরে দুই দেশের প্রতিনিধি দল দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসে। সেই বৈঠক শেষে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দুই দেশের পক্ষে সংশ্লিষ্টরা চারটি সমঝোতা স্মারকে (এমওএইউ) স্বাক্ষর করেন। দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতার (কম্প্রিহেনসিভ কো-অপারেশন) জন্য যৌথ কমিশন গঠন বিষয়ক সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দ্বিপক্ষীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন বিষয়ক সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব। মৎস্য বিষয়ক ও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ বিষয়ক সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং মালদ্বীপের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রী। ২০২২ সাল থেকে ২০২৫ পর্যন্ত সংস্কৃতি বিনিময় বিষয়ক কর্মসূচি বিষয়ে এমওইউতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট সলিহর মধ্যে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উভয় নেতা দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করেন এবং উভয় দেশের বিভিন্ন সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, মালদ্বীপে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ, মানবসম্পদ ও যুব সম্প্রদায়ের উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ওষুধসামগ্রী, কৃষি, সামুদ্রিক সম্পদ ও মৎস্য, পর্যটন, সংস্কৃতি, দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, দুই দেশের মধ্যে বিমান ও নৌ-যোগাযোগ বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সমস্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও প্রশমন। এ সময় বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও বিস্ময়কর সফলতার প্রশংসা করেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। বৈঠকে উভয় নেতা দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্ভাবনা উন্মোচনের ওপর জোর দেন। বাংলাদেশ মালদ্বীপের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে বিশ্বমানের বিভিন্ন সামগ্রী আমদানি করতে মালদ্বীপের প্রতি আহ্বান জানান। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিষয়ক সমস্যা দূর করতে এক্ষেত্রে বিস্তারিত আলোচনার জন্য উভয় দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে দুই দেশের সরকার একমত হয়েছে। শুল্ক সহযোগিতা ও দ্বৈত কর পরিহার বিষয়ক প্রস্তাবিত চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি দ্রত চূড়ান্ত করার বিষয়ে উভয় পক্ষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া মালদ্বীপের রাজধানী মালে ও বাংলাদেশের তিনটি সমুদ্রবন্দরের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক জাহাজ চালু করতে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে উভয় নেতা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। বৈঠকে মালদ্বীপে অবস্থানরত সব প্রবাসীকে বিনামূল্যে টিকা প্রদানের বিষয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের ঘোষণার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টিকা প্রদানে সহায়তার জন্য বাংলাদেশের ১৮ সদস্যের ডাক্তার ও নার্সের একটি দল মালদ্বীপে প্রেরণ করা হয়েছে। মালদ্বীপের ডাক্তার ও নার্সের চাহিদা মেটানোর জন্য সেদেশে বাংলাদেশি ডাক্তার ও নার্স প্রেরণের অনুরোধ করেছেন প্রেসিডেন্ট সলিহ। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট উভয় দেশের অর্থনীতিতে মালদ্বীপে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবদানের প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালদ্বীপে অনিয়মিত শ্রমিকদের দ্রুত নিয়মিতকরণের অনুরোধ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে অত্যন্ত চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিদ্যমান এবং এ সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে আরও গভীর হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সলিহর বাংলাদেশ সফর দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছে। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ ও মালদ্বীপের ফার্স্ট লেডি ফাজনা আহমেদের সৌজন্যে নৈশভোজের আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। গতকাল মধ্যরাতে হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর থেকে বিশেষ বিমানে সফরসঙ্গীদের নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট।

সর্বশেষ খবর