সোমবার, ২২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

২২ বছর পর সম্মেলন করে আটকে গেল কৃষক দলের কমিটি

শফিউল আলম দোলন

দীর্ঘ ২২ বছর পর জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সম্মেলন অনুষ্ঠানের ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। কমিটি ঘোষণা আটকে যাওয়ার পেছনে সদ্য বিলুপ্ত ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিনকে দায়ী করছেন কেউ কেউ।

বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর ধারণা, সম্মেলনে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার কারণেই কমিটি ঘোষণায় দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে। যোগ্য ব্যক্তিদের কাউন্সিলর না করে নিজের গ্রামের বাড়ি পাবনা এলাকা থেকে বাসবোঝাই করে লোক এনে কাউন্সিলর হিসেবে দেখিয়ে কমিটি করতে চেয়েছেন সদস্য সচিব। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের পর্যন্ত কাউন্সিলর করেননি তিনি। এমনকি তাদের কাউন্সিল অধিবেশনে ঢুকতে না দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে হাসান জাফির তুহিনের বিরুদ্ধে। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব শতভাগ বানোয়াট ও মিথ্যা। এ ধরনের কোনো কিছুই হয়নি। আমাকে হাইকমান্ড যে পদে রাখবেন, আমি সেখানেই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব। এমনকি কোনো পদে না রাখলেও আমি সন্তুষ্ট থাকব। খুব শিগগিরই কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।

সম্মেলন নিয়ে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে হাসান জাফির তুহিন বলেন, গত তিন বছর আহ্বায়ক কমিটিতে থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি কৃষক দলকে সংগঠিত করতে। এখন দল আমাকে যেভাবে মূল্যায়ন করবে, আমি সেভাবেই কাজ করব।  জানা যায়, কৃষক দলের সম্মেলনে কাউন্সিলরের সংখ্যা ছিল ৫৪৮ জন। এর মধ্যে ৭৯টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির প্রতি জেলা থেকে পাঁচজন করে ৩৯৫ জন এবং কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির ১৫৩ জন সদস্য কাউন্সিলর হিসেবে থাকার কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করায় ১৫৩ জনকে কাউন্সিলর হওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়। সম্মেলন সম্পর্কে কৃষক দলের বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস  চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, যে কোনো সম্মেলনে উচ্ছ্বাস থাকে, বাস্তবতা থাকে। তবে আগামী দিনে যে নেতৃত্ব আসবে, তারা কৃষকের অনুকূলে ভূমিকা পালন করবে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নিতে হবে। তাহলেই এই সম্মেলন নানা বিতর্কের মধ্যেও সফলতা অর্জন করবে। নানা ঘটনার মধ্যেও একটা সম্মেলন আমরা করতে পেরেছি, এটা নিঃসন্দেহে একটা আশাবাদের বিষয়। জানা যায়, গভীর রাত পর্যন্ত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাউন্সিলরদের কথা শোনেন তারেক রহমান। নতুন কমিটিতে কাউন্সিলরদের কেউ কেউ বিলুপ্ত কমিটির শীর্ষ দুই নেতাকেই আবারও রাখার কথা বলেন। অনেকে আবার পুরনোদের বাদ দিয়ে একেবারে নতুন মুখ আনার পক্ষে মতামত দেন। বিএনপি ও কৃষক দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতিমধ্যে পৃথকভাবে অনেকের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলেছেন। আবার কয়েকজন সম্পর্কে দলের স্থায়ী ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্যদের কাছ থেকে খোঁজখবরও নিয়েছেন।

সভাপতি পদে কৃষক দলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ছাড়াও দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমউদ্দিন আলমের নাম আলোচনায় রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক পদে বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন ছাড়াও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুল ইসলাম আলীম, তকদির হোসেন জসিম এবং মাইনুল ইসলামের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাকেই যে পদে মনোনয়ন দেবেন সে পদেই তিনি অভিষিক্ত হবেন। ফলে সবার দৃষ্টি এখন লন্ডনের দিকেই। গত ১২ মার্চ রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে সকাল ১০টায় কৃষক দলের এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কৃষক দলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে ১৯৯৮ সালের ১৬ মে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কৃষক দলের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। দীর্ঘ ২২ বছর পর গত ১২ মার্চ বিএনপির এ সহযোগী সংগঠনটির সম্মেলন হলো।

সর্বশেষ খবর