বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বে-টার্মিনাল নির্মাণে চিঠি যাচ্ছে সিঙ্গাপুর-দুবাইয়ে

সমীক্ষা হবে নভেম্বরের মধ্যে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বে-টার্মিনাল নির্মাণে চিঠি যাচ্ছে সিঙ্গাপুর-দুবাইয়ে

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে সরকার যে বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে, সেখানে ৫টি দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরের পিএসএ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পোর্ট (ডিপি ওয়ার্ল্ড) সরকারের বিবেচনায় এগিয়ে আছে। এই দুটি দেশের কাছে কৌশলগত ও আর্থিক প্রস্তাবনা চেয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চুক্তি সহায়ক সমীক্ষা নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার জন্য পিপিপি কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পিপিপি অফিসের সূত্রগুলো জানিয়েছে, বে-টার্মিনাল প্রকল্পের সমীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। সমীক্ষা শেষে প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী কোম্পানিকে চিঠি দেওয়া হবে। আলোচ্য সমীক্ষায় প্রকল্পের আর্থিক বিশ্লেষণ, আগ্রহী কোম্পানির সঙ্গে পিপিপি কনসেশন চুক্তির বিজনেস মডেলসহ নানা বিষয় উঠে আসবে।

 

সূত্র জানায়, বে-টার্মিনাল নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে সম্প্রতি একটি সভা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে ৫টি দেশের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করা হয়। এগুলো হচ্ছে- ভারতের আদানি গ্রুপ, সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়ার ওশান ও ফিশারিজ মন্ত্রণালয়, সিঙ্গাপুরের পিএসএ এবং আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড। শেষ দুটি দেশের কোম্পানি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট ধারণাপত্র দেওয়ায় সরকার তাদের প্রস্তাবগুলোই বিবেচনা করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের বৃহত্তম এই প্রকল্পটি বেশ কয়েকটি ফেজে বাস্তবায়ন হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৩টি টার্মিনালের কথা উল্লেখ রয়েছে। এসব টার্মিনাল নির্মাণে পৃথক পৃথক কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চলছে। গত ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে যে সভাটি হয়েছে, সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব অর্থাৎ পিপিপি মডেলে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চুক্তি ত্বরান্বিত করতে সরকারের বিবেচনাধীন সিঙ্গাপুরের পিএসএ এবং আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে পৃথকভাবে বিস্তারিত টেকনিক্যাল ও ফিন্যানশিয়াল প্রস্তাব চেয়ে চিঠি পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, বে-টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনায় আগ্রহ ব্যক্ত করেছে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে। তবে দেশটির সঙ্গে কোনো সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়নি। চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। ভারতের আদানি গ্রুপও ড্রেজিং ব্যতীত টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনায় আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এ নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গেও কোনো সমঝোতা চুক্তি হয়নি। দক্ষিণ কোরিয়া সরকার সমঝোতা চুক্তি করলেও তাদের প্রস্তাবটি সুনির্দিষ্ট নয়। জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ৩টি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ৪টি জেটি সংবলিত একটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। অপর দুটি টার্মিনালের নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পেতে পারে সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। চুক্তির আগে বে-টার্মিনালের পরিধি বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে যৌক্তিকভাবে বিভিন্ন টার্মিনালের দৈর্ঘ্য নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)-কে। নতুন ডিজাইনের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল নির্মাণে প্রাথমিকভাবে কিছু ড্রয়িং, ডিজাইন করা হয়েছিল। এখন নতুন করে একটি পূর্ণাঙ্গ নকশা করার জন্য পরামর্শক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি এ বছরের শেষের দিকে কনসালট্যান্ট নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।  

বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর যে ৩০ বছর মেয়াদি কৌশলগত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে সেখানে এই প্রকল্পটির ধারণা দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে এর কারিগরি ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হয়। প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী প্রস্তাবিত ৩টি টার্মিনালসহ মোট ৬টি কম্পোনেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ হেক্টর জমিতে কনটেইনার টার্মিনাল-১ নির্মাণ হবে যার প্রস্তাবিত দৈর্ঘ্য ১২২৫ মিটার, ২য় টার্মিনালের দৈর্ঘ্য ৮০০ মিটার এবং ৩য় টার্মিনালের দৈর্ঘ্য ১৫০০ মিটার। এ ছাড়া ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ব্রেক ওয়াটার, টার্মিনাল ও প্রবেশপথের জন্য ১৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন ঘনমিটার ড্রেজিং এবং বে-টার্মিনালের সঙ্গে সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগ প্রস্তাব রয়েছে।

চবক বলছে, প্রকল্পের প্রস্তাবে রেল, সড়ক, নৌ ও এয়ারপোর্টের সংযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে। প্রায় ১২ মিটার ড্রাফট এবং ২৮৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৫ হাজার টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সমপরিমাণ ইউনিট) ধারণক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। এ ছাড়া জাহাজ বার্থিংয়ের ক্ষেত্রে নাইট নেভিগেশনসহ ২৪ ঘণ্টা জাহাজ চলাচল করতে পারবে। টার্মিনালটি কার্যকর হলে চট্টগ্রাম বন্দরের জট অনেকাংশে কমে যাবে, এতে যেমন সময় বাঁচবে, কমবে ব্যবসায়িক খরচ। কনটেইনার জাহাজ ভাড়া প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর