শুক্রবার, ২ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন

পোশাকশিল্পে প্রাণের সঞ্চার আনবে সম্মিলিত পরিষদ

রুহুল আমিন রাসেল

পোশাকশিল্পে প্রাণের সঞ্চার আনবে সম্মিলিত পরিষদ

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেছেন, দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পে প্রাণের সঞ্চার আনবে বিজিএমইএ নির্বাচনী জোট সম্মিলিত পরিষদ। নিজের দায়িত্ব পালনকালে গৌরবময় অর্জনের কথা তুলে ধরে সম্মিলিত পরিষদের এই শীর্ষ নেতা বলেন, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি-বিইউএফটি এখন সফলতম বিদ্যাপীঠ। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা চুক্তি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় শীর্ষের পথে এগিয়ে যাওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয় কোনো মুনফাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নয়।

রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় নিজ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বুধবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি ও সম্মিলিত পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ নেতা শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি। বিইউএফটির অন্যতম উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটির সাফল্য তুলে ধরে বলেন, পোশাকশিল্পের উন্নতির জন্য ও দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্য নিয়ে বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি-বিআইএফটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে এটি বিইউএফটি হিসেবে যাত্রা করে। যার লক্ষ্য- দক্ষ জনবলের ঘাটতি পূরণ ও বিদেশি বিশেষজ্ঞ নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় মেধাবী জনসম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন তুরাগের একটি মরোরম পরিবেশে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত দৃষ্টিনন্দন ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ৫২টি ল্যাব। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মূল্যায়নে বিইউএফটি প্রথম স্থান লাভ করেছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা ওয়ার্লমার্ট, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার, এইচঅ্যান্ডএমের মতো বিশ্বখ্যাত নামিদামি ব্র্যান্ড ও কোম্পানিগুলোতে সুনামের সঙ্গে শীর্ষ পদগুলোতে কাজ করছেন। সম্মিলিত পরিষদ থেকে নির্বাচিত হয়ে বিজিএমইএ সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়া পোশাকশিল্পের এই শীর্ষ নেতা বলেন, অতীতে সম্মিলিত পরিষদ থেকে নির্বাচিতরা বিজিএমইএতে দায়িত্ব পালনকালে ইউডি ও ইউপি ইস্যু করার ক্ষমতা লাভ করেছেন। আমরা তৈরি পোশাকশিল্পে শিশু শ্রমমুক্ত করেছি। শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করেছি। শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য পাঁচটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য ১২টি হেলথ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। চট্টগ্রামে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সার্টিফিকেট অব অরিজিন ইস্যু করার ক্ষমতা লাভ করেছি। এসএমই খাতে ৫ শতাংশ রপ্তানি প্রণোদনা অর্জন করেছি। নতুন বাজারে রপ্তানি প্রণোদনা অর্জন করেছি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ওয়ান স্টেপ জিএসপি ও ২০১১ সালে রপ্তানিতে সর্বোচ্চ সূচক অর্জন করেছি। শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সম্মিলিত পরিষদের সাফল্য তুলে ধরে আরও বলেন, আমরা আমদানি পণ্য খালাসের ধাপ ৩৩টি থেকে কমিয়ে ১৩টি এনেছি। রপ্তানি প্রক্রিয়া ২৩ ধাপ থেকে ৯ ধাপে আনা হয়েছে। ২৭০ জন রুগ্ন পোশাকশিল্প মালিককে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে স্বাভাবিক ব্যবসায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পোশাক খাতে রপ্তানি ৩৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছি। জিএসপি ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়া ১৭ ধাপ থেকে কমিয়ে ৭ ধাপে এনেছি। ক্রেতাদের ভিসা সংক্রান্ত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিমানবন্দরে এয়ারপোর্ট সেল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। চট্টগ্রামে বিজিএমইএ হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। সাফটা চুক্তির আওতায় পোশাক পণ্য বাদ দিয়ে শুল্ক সুবিধা নিশ্চিত করেছি। রানা প্লাজা ধসের পর শিল্পের পুনর্নির্মাণ করেছি। সব ধরনের নিরাপত্তা সামগ্রী থেকে কর প্রত্যাহার করানো হয়েছে। বিজিএমইএতে ফায়ার সেফটি ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উত্তরাতে নতুন বিজিএমইএর কমপ্লেক্স নির্মাণ ও স্থানান্তর করা হয়েছে। মিরসরাইয়ে গার্মেন্টস ভিলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিমানবন্দরে পোশাকশিল্পের  জন্য পৃথক ওয়্যারহাউস তৈরি করেছি। শ্রমিকদের কল্যাণে সেন্ট্রাল তহবিল গঠন করা হয়েছে। পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরসহ সব বন্দর সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশে সবুজ পোশাকশিল্পের সূচনায় ভূমিকা রেখেছি। সম্মিলিত পরিষদের পক্ষে প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের প্যানেল জয়ী হলে করোনা মোকাবিলা ও শিল্প পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ১৮ মাস থেকে বৃদ্ধি ও কিস্তির আকার ছোট করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সংকট প্রতিকারে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নেওয়া হবে। ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু ব্যাংকিং নীতিমালার মাধ্যমে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি পোশাকশিল্পের জন্য সুদের হার ও ব্যাংকিং চার্জ কমানোর ব্যাপারে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা চাওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী ও অন্যান্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে পোশাকশিল্পের জন্য কমপ্লায়েন্স সুবিধা নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো ও ভবন নির্মাণের জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হবে। যাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মালিকরা স্বল্পমূল্যে ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালাতে পারেন। শ্রমিকদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে অঞ্চলভিত্তিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হবে। শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন আরও বলেন, সম্মিলিত পরিষদে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা বিজিএমইএতে প্রাণের সঞ্চার করতে চাই। বিজিএমইএর আর্বিট্রেশন সেবাকে ডিজিটাল করা এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হবে। সরকার ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে কার্যকরী আলোচনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যাতে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরেও কমপক্ষে ২০৩১ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত রাখা যায়। পোশাকের শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত রাখতে বিজিএমইএ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এই টাস্কফোর্স প্রয়োজনীয় ধাপগুলো সম্পাদনের পাশাপাশি অ্যাপারেল ডিপ্লোম্যাসির মাধ্যমে জিএসপি প্লাস সুবিধা নিশ্চিত করবে। এ ছাড়া চীনে শুল্কমুক্ত পণ্যের তালিকায় পোশাকশিল্পের নিয়মিত পণ্যগুলো অন্তর্ভুক্তিকরণ, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানির বৃহৎ দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে পৃথক আরএমজি ডেস্ক প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারকে প্রস্তাব করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর