মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

শীতলক্ষ্যায় উদ্ধার লঞ্চে মিলল ২৫ লাশ

দুটি তদন্ত কমিটি গঠন, অভিযান স্থগিত

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

শীতলক্ষ্যায় উদ্ধার লঞ্চে মিলল ২৫ লাশ

শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবিতে স্বজনহারাদের আহাজারি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কোস্টার ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যাওয়া ‘সাবিত আল হাসান’ নামে মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চটি অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে সেই লঞ্চের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২৫ জনের মরদেহ। এ নিয়ে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩০ জনে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় শনাক্ত করছে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল সকাল থেকেই শীতলক্ষ্যার উভয় তীরে অপেক্ষমাণ হাজারো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। একে একে যখন লাশগুলো উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসা হয়, তখন কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন স্বজনরা। জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী নিখোঁজ ৩৩ জনের মধ্যে ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অর্থাৎ এখনো তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। ইতিমধ্যে শনাক্ত হওয়ায় কয়েকজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকার ব্রিজ-সংলগ্ন স্থানে কোস্টার ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় সাবিত আল হাসান নামে মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চটি। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পাঁচ নারীর লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীরা। রাতেই ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ পৌঁছায়। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছিল। পরে গতকাল সকাল থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে লঞ্চটি উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসা হয়। এরপর একে একে ভিতর থেকে বের করে আনা হয় ২৫টি লাশ। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক (ঢাকা) সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে এলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে শুরুতে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়। রবিবার রাত থেকেই আমাদের তিনটি ডুবুরি ইউনিট কাজ করছে। এখনো উদ্ধার তৎপরতা চলছে। আজ (গতকাল) রাত ৮টা পর্যন্ত ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।’

চারজনের লাশ হস্তান্তর : রবিবার উদ্ধার হওয়া পাঁচজনের মধ্যে চারজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি একটি লাশ অজ্ঞাতনামা হিসেবে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) মর্গে। রবিবার দিবাগত রাত ২টায় লাশ তীরে আনার পর স্বজনরা শনাক্ত করলে মরদেহ হস্তান্তর করে উপজেলা প্রশাসন। যাদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে তারা হলেন- মুন্সীগঞ্জ সদরের উত্তর চরমসুরা এলাকার অলিউল্লাহর স্ত্রী সখিনা বেগম (৪৫), একই এলাকার প্রীতিময় শর্মার স্ত্রী প্রতিমা শর্মা (৫০), মালপাড়া এলাকার হারাধন সাহার স্ত্রী সুনীতা সাহা (৪০) ও সদরের নয়াগাঁও পূর্বপাড়া এলাকার মিথুন মিয়ার স্ত্রী সাউদা আক্তার লতা (১৮)।

জেলা প্রশাসনের তালিকায় নিখোঁজ ও মৃতরা : রবিবার রাতে লঞ্চডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন এমন ৩৩ জনের নাম দিয়েছিলেন স্বজনরা। এদের মধ্য থেকেই মারা গেছেন ৩০ জন। এর মধ্যে ৫ জনের লাশ রবিবার রাতেই উদ্ধার করা হয়। বাকি ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয় গতকাল। মারা যাওয়া ৩০ জন হলেন- মুন্সীগঞ্জ সদরের নুড়াইতলী এলাকার মুখলেছের মেয়ে রুনা আক্তার (২৪), মোল্লাকান্দি চৌদ্দামোড়া এলাকার সমর আলী বেপারীর ছেলে সোলেমান বেপারী (৬০) ও তার স্ত্রী বেবী বেগম (৫৫), মালপাড়া এলাকার হারাধন সাহার স্ত্রী সুনীতা সাহা (৪০) এবং তার দুই ছেলে বিকাশ সাহা (২২) ও অনিক সাহা (১২), উত্তর চর মসুরা এলাকার অলিউল্লাহর স্ত্রী সখিনা (৪৫), একই এলাকার আরিফের স্ত্রী বীথি (১৮) ও তার মেয়ে আরিফা (১), মুন্সীগঞ্জ সদরের প্রীতিময় শর্মার স্ত্রী প্রতিমা শর্মা (৫০), মোল্লাকান্দি চর কিশোরগঞ্জের শামসুদ্দিন (৯০) ও তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫), সিরাজদিখান তালতলা এলাকার মুছা শেখের ছেলে মো. জাকির (৪৫), উজিরপুরের খায়রুল হাওলাদারের ছেলে হাফিজুর রহমান (২৪) এবং তার স্ত্রী তাহমিনা (২০) ও ছেলে আবদুল্লাহ (১), দক্ষিণ কেওয়ার দেবীন্দ্র চন্দ্র দাসের ছেলে নারায়ণ দাস (৬৫) ও তার স্ত্রী পার্বতী রানী দাস (৪৫), নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যাণদী স্কুল এলাকার সোলেমানের ছেলে সাইফুল (৪৫), টুঙ্গীবাড়ির বেতকা এলাকার মুছা শেখের ছেলে জাকির হোসেন (৪৫), রতন পাতরের স্ত্রী মহারানী (৩৭), ঢাকার শনিরআখড়া এলাকার রশিদ হাওলাদারের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৪৫) এবং তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৩০) ও মেয়ে মানসুরা (৭), মুন্সীগঞ্জ সদরের দক্ষিণ ইসলামপুরের মো. নুরুল আমিনের ছেলে মো. তানভীর হোসেন হৃদয় (২০), মালপাড়া এলাকার সিরাজের ছেলে রিজভী (২০), নোয়াগাঁও পূর্বপাড়া এলাকার মিঠুনের স্ত্রী ছাউদা আক্তার লতা (১৮), বিকাশ সাহা (৫৫), মধ্যকোণডগাও এলাকার মতিউর রহমান কাজীর ছেলে ইউসুফ কাজী এবং ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো. সোহাগ হাওলাদার।     

পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি : লঞ্চ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় রাতেই পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহর নির্দেশে সাত সদস্যবিশিষ্ট এবং বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকের নির্দেশে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে নিহতদের দাফন, কাফন ও সৎকারে জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মোবারক হোসেন জানান, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকের নির্দেশে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর