বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি

আটক হয়নি ঘাতক জাহাজ মৃত্যু বেড়ে ৩৪

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবে যাওয়ার ঘটনায় গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে সর্বশেষ পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে সোমবার ২৪ জন ও রবিবার রাতে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। উদ্ধারকৃত মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

গত রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকার ব্রিজ সংলগ্ন স্প্যানে কোস্টার ট্যাংকারের ধাক্কায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় সাবিত আল হাসান নামে মুন্সীগঞ্জগামী এ লঞ্চটি। সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক জানান, জেলা প্রশাসকের ঘোষণা অনুযায়ী নিহতদের প্রত্যেকের দাফন ও সৎকারের জন্য ২৫ হাজার টাকা সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।

নাহিদা বারিক আরও জানান, রবিবার লঞ্চডুবির পর তৎক্ষণাৎ ২৯ জন নিখোঁজের নাম পাওয়া গিয়েছিল। পরদিন নিখোঁজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৭ জন। তবে ওই নিখোঁজের তালিকায় একই ব্যক্তির নাম দুবার উঠেছিল। এ ছাড়া নিখোঁজের তালিকায় থাকা দুজন তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন  বলে স্বজনরা নিশ্চিত করেছেন। যে কারণে আমাদের তালিকা অনুযায়ী নিখোঁজ কেউ নেই। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রবিবার লঞ্চডুবির পর ওইদিন রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পাঁচজন নারীর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীরা। রাতেই ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় পৌঁছলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়। পরে সোমবার সকাল থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে প্রত্যয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লঞ্চটি তীরে নিয়ে আসা হয়। এরপর একে একে ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে লাশ। সেসময় স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। সোমবার আরও ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে মঙ্গলবার পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত যারা : নিহতরা হলেন মুন্সীগঞ্জ সদরের নুড়াইতলী এলাকার মুখলেছের মেয়ে রুনা আক্তার (২৪), মোল্লাকান্দি চৌদ্দামোড়া এলাকার সমর আলী বেপারীর পুত্র সোলেমান বেপারী (৬০) ও তার স্ত্রী বেবী বেগম (৫৫), মালপাড়া এলাকার হারাধন সাহার স্ত্রী সুনিতা সাহা (৪০) এবং তার দুই পুত্র বিকাশ সাহা (২২) ও অনীক সাহা (১২), উত্তর চর মসুরা এলাকার অলিউল্লাহর স্ত্রী সখিনা (৪৫), একই এলাকার আরিফের স্ত্রী বীথি (১৮) ও তার মেয়ে আরিফা (১), মুন্সীগঞ্জ সদরের প্রীতিময় শর্মার স্ত্রী প্রতিমা শর্মা (৫০), মোল্লাকান্দি চর কিশোরগঞ্জের শামসুদ্দিন (৯০) ও তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৬৫), উজিরপুরের খায়রুল হাওলাদারের পুত্র হাফিজুর রহমান (২৪) এবং তার স্ত্রী তাহমিনা (২০) ও পুত্র আব্দুল্লাহ (১), দক্ষিণ কেওয়ার দেবীন্দ্র চন্দ্র দাসের পুত্র নারায়ণ দাস (৬৫) ও তার স্ত্রী পার্বতী রানী দাস (৪৫), নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যান্দী স্কুল এলাকার সোহাগের পুত্র আজমীর (১৫), মুন্সীগঞ্জ সদরের রিকাবিবাজার নূরপুর এলাকার মুশকে আলম মৃধার পুত্র শাহআলম মৃধা (৫৫), রতন পাতর এর স্ত্রী মহারানী (৩৭), ঢাকা শনিরআখড়া এলাকার রশিদ হাওলাদারের পুত্র আনোয়ার হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৩০) ও মেয়ে মানসুরা (৭), মুন্সীগঞ্জ সদরের দক্ষিণ ইসলামপুরের মো. নুরুল আমিনের পুত্র মো. তানভীর হোসেন হৃদয়, মালপাড়া এলাকার সিরাজের পুত্র রিজভী (২০), নোয়াগাঁও পূর্বপাড়া এলাকার মিঠুনের স্ত্রী ছাউদা আক্তার লতা (১৮), মধ্যকোনডগাও এলাকার মতিউর রহমান কাজীর পুত্র ইউসুফ কাজী, ঢাকা মিরপুর-১১ এর বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের পুত্র মো. সোহাগ হাওলাদার, আবদুল খালেক (৭০), জিবু (১৩), খাদিজা বেগম (৫০), মোহাম্মদ নয়ন (২৯), রিজভী (২০), সাদিয়া আক্তার (৭)। নিখোঁজ তালিকায় থাকা মুছা শেখের পুত্র মো. জাকির (৪৫) এর নাম দুবার উঠেছিল। তিনি নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন। এ ছাড়া নিখোঁজ তালিকায় থাকা নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যান্দী স্কুল এলাকার সোলেমানের পুত্র সাইফুল (৪৫) নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন।

আটক হয়নি ঘাতক জাহাজ : ঘটনার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও আটক হয়নি ঘাতক এসকেএল-৩ নামের কোস্টার ট্যাংকার জাহাজটি। তবে ওই ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ কর্র্তৃপক্ষ।

বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক (নৌ নিট্রা) বাবু লাল বৈদ্য জানান, এসকেএল-৩ নামের কোস্টার ট্যাংকারের ধাক্কায় সাবিত আল হাসান নামের নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চটি অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে গেছে বলে আমরা প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছি। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, লঞ্চডুবির ঘটনায় গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টা অবধি কেউ মামলা দায়ের করেননি।

সর্বশেষ খবর