বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ভোগান্তিতে কর্মজীবী মানুষ

গণপরিবহন না থাকায় দুর্ভোগ, সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশাচালকদের পোয়াবারো, বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে যেতে হয় কর্মস্থলে, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কাঁচাবাজারে

মাহমুদ আজহার

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনেও চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ কর্মজীবী মানুষ। গণপরিবহন না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন তারা। বিশেষ করে সকালে অফিসগামী মানুষ পড়েন চরম বিপাকে। ওই সময় সড়কে কর্মজীবী মানুষের তুলনায় সিএনজি বা রিকশার সংখ্যা ছিল কম। তাই একটি সিএনজি ধরতে অনেককেই দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়। এতে কারও কারও দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি ভাড়া গুনতে হয়। অনেকেই হেঁটেও অফিসে যান। তবে নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ বা পোশাক শ্রমিকদের দুর্দশা ছিল সবচেয়ে বেশি। গতকাল রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ির পরিমাণও ছিল অনেক বেশি। সড়কে সব গাড়ি থাকলেও শুধু ছিল না গণপরিবহন। কোথাও কোথাও ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি, রিকশা বা অটোরিকশার জটও দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা মার্কেট খোলা রাখার দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। ওইসব এলাকায়ও সৃষ্টি হয় যানজট। এ দিকে সরকার ঘোষিত সাত দিনের বিধিনিষেধ ও রমজানের কারণে নিত্যপণ্যের বাজারও ছিল চড়া। ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার সাত দিনের বিধিনিষেধ নিয়ে ব্যস্ত। নিত্যপণ্যের বাজার পর্যবেক্ষণে কোনো মনযোগ নেই তাদের। সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও গতকাল রাজধানীর কাঁচাবাজার ও অলিগলির চেহারা ছিল স্বাভাবিক। কেবল অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট, ট্রেন, দূরপাল্লার বাস এবং বড় নগরীগুলোতে গণপরিবহন বন্ধ ছিল। অফিস-আদালত ছিল যথারীতি খোলা। তবে উপস্থিতি ছিল কিছুটা কম। কয়েকটি এলাকায় স্বল্প দূরত্বের গণপরিবহনও চলে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের চিত্র ছিল হতাশাজনক। কাকরাইলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত করীম সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মঙ্গলবারও মালিবাগ থেকে হেঁটে কাকরাইলের অফিসে এসেছি। আজকে এই অবস্থা। মনে হয়েছে, গতকালের তুলনায় রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। রিকশা তো দেদার চলছে।’ 

রাজধানীর ভাটারা এলাকায় থাকেন সেলিম হোসেন। তিনি গাজীপুরের জয়দেবপুরে পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তার কারখানাও খোলা। কঠোর বিধিনিষেধে গণপরিবহন না থাকায় চরম বিপদে পড়েন এই পোশাককর্মী। এত দূর পথ তার হেঁটে যাওয়াও সম্ভব নয়। যেখানে গণপরিবহনে আসা যাওয়ায় ৫০ টাকা খরচ হতো এখন সেখানে সিএনজিতে আসা যাওয়া করতে প্রায় সাত-আটশ টাকা খরচ হয়। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানালেন, এভাবে চলতে থাকলে তার বেতনের পুরো টাকাই চলে যাবে যাতায়াতে।

বাড্ডা থেকে সিএনজিতে উত্তরা হাউস বিল্ডিং-আব্দুল্লাহপুর ভাড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। তবে গত দুই দিন ধরে সিএনজি চালকরা চারজন করে ৪০০ টাকা করে ভাড়া নেন। সিএনজিচালক আবদুর রহিম বলেন, লকডাউনের মধ্যে অফিস চালু আছে, চাকরিজীবীদের বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়ে যাচ্ছে বেশি। এভাবে যদি যাত্রীরা শেয়ারে যেতে পারেন তাহলে যাত্রীদেরও উপকার, পাশাপাশি আমাদেরও লাভ।

সকালে মালিবাগ রেলগেট এলাকা থেকে কোকাকোলায় কর্মস্থলে যান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবদুর রহমান। বাসে তার খরচ হতো ১০ থেকে ১৫ টাকা। গতকাল সকালে তিনি ১০০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে অফিসে যান। তিনি বললেন, ‘প্রতিদিন এভাবে বাড়তি ভাড়া দেওয়া আমাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্তের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার অফিসও খোলা, যেতেই হবে। অনেক বিপাকে আছি।’

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামোটর, পুরানা পল্টন, প্রেস ক্লাব, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিলের মতো ব্যস্ত এলাকায় জনসমাগমের উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করার মতো। বেলা বাড়তেই এই এলাকায় মানুষের আনাগোনা বাড়ে। ব্যক্তিগত বাড়িও দেখা যায় অনেক। কিন্তু মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা ছিল বেশি। এ দিকে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও চলাচলে নিয়ন্ত্রণ ঠেকাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অভিযান চালাতে দেখা যায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতকে। অনেকেই র‌্যাবের উপস্থিতি দেখে মাস্ক পরে নিতে দেখা যায়। কেউ কেউ তো মাস্ক ছাড়াই ঘুরছিলেন। কলেজ শিক্ষার্থী ইউসুফ খান মাস্ক না পরেই ফকিরাপুলে ভাইয়ের দোকানে যাচ্ছিলেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত এ সময় তাকে দাঁড় করান। মাস্ক কেন আনেনি জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে মাস্ক পরতে ভুলে গেছি।’ কভিড-১৯ বিস্তার রোধকল্পে ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত সারা দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধের পাশাপাশি শপিং মল, দোকান-পাট, হোটেল- রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। বড় বড় শপিং-মল বন্ধ থাকলেও অলি-গলির দোকানপাট খোলা ছিল। শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ বাজার, রামপুরাসহ রাজধানীর কাঁচাবাজার খোলা ছিল। তবে কাঁচাবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই ছিল না। আবার অনেক এলাকায় কাঁচাবাজার রাত পর্যন্তও খোলা ছিল।

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কাঁচাবাজারে : করোনা মহামারী ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সাত দিনের বিধিনিষেধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা কাঁচাবাজার খোলা রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু রাজধানীর কাঁচাবাজারে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বিষয়টি যেন দেখারও কেউ নেই। তাছাড়া বাজারগুলো উন্মুক্ত স্থানেও স্থানান্তর হয়নি। গতকাল কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সকালে উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, গাদাগাদি করেই মাছ, মাংস ও শাক-সবজি বিক্রি করা হচ্ছে। দুই-একজন বিক্রেতার মুখে মাস্ক দেখা গেলেও অনেকের মুখেই ছিল না। ক্রেতাদের কারও মুখের মাস্ক ছিল থুতনিতে। আবার কারও পকেট। কোথাও ছিল না সামাজিক দূরত্ব। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, হাতিরপুল, সেগুনবাগিচাসহ  কাঁচাবাজারেও ছিল একই চিত্র। সব কাঁচা বাজারেই ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। উত্তর বাড্ডায় আবদুর রহীম নামে একজন মাছ বিক্রেতা বলেন, ‘কত সময় ধরে মাস্ক পরে থাকা যায়? তাছাড়া মাছ কাটতে হয়, পানি দিয়ে হাত ধৌত করতে হয়। নানা সমস্যা। মাস্ক পরে গ্রাহকের সঙ্গে কথা বললে তারাও ঠিকমতো কথা বোঝেন না।’

সর্বশেষ খবর