বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

দোকান খোলার দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত

রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার দাবিতে গতকালও সারা দেশে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীতে দোকান খোলার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বসুন্ধরা ও ইস্টার্ন প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীরা। একই দাবিতে মানববন্ধন-বিক্ষোভ হয়েছে বঙ্গবাজারেও। রাজধানীর গুলিস্তানে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে বাংলা নতুন বছরকে বরণ ও সাংগ্রাই উৎসব উদ্যাপন উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বান্দরবানের শপিং সেন্টারগুলো ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা করে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বান্দরবানের জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধের মেয়াদ না বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছেন বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা। আগামী রবিবার সন্ধ্যা থেকে দোকানপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া  দোকান খোলা রাখার অনুমতি চেয়ে দিনাজপুরের বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ব্যানার টাঙিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিধিনিষেদের মধ্যে দোকান খোলা রাখার অনুমতি দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছেন তারা।

রাজধানীতে বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া : রাজধানীতে দোকান খোলার দাবিতে সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার গতকাল তৃতীয় দিনেও বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। গুলিস্তানে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বসুন্ধরা ও ইস্টার্ন প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে নিউমার্কেট, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোডসহ বিভিন্ন মার্কেটের সামনে কর্মসূচি না থাকলেও অসংখ্য দোকান মালিক ও কর্মচারীদের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফুলবাড়িয়া বিআরটিসি বাস কাউন্টারের সামনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলে দেওয়ার দাবিতে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর সামনে মানববন্ধন করে ঢাকা রেডিমেড গার্মেন্ট ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি। মানববন্ধন শেষে তারা মিছিল নিয়ে বিআরটিসি কাউন্টারের সামনের সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা পিছু হটেন।

ঢাকা রেডিমেড গার্মেন্ট ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের মার্কেট খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। তখন তাদের একটি পক্ষের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। সকাল থেকে বসুন্ধরা ও ইস্টার্ন প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীরা মার্কেটের সামনে সমবেত হয়ে ‘স্বাস্থ্যবিধি মানব, দোকানপাট খুলব’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, দোকানপাট খুলতে হবে’, ‘গণপরিবহন যদি চলবে, মার্কেট কেন বন্ধ থাকবে’- ইত্যাদি নানা স্লোগান দিয়ে তাদের দাবি জানাতে থাকেন। 

দোকান মালিকরা বলেন, সামনে রমজান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট খুলে দেওয়া হলে তারা বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন। গত বছর করোনাকালে এমনিতেই তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা করোনা সংক্রমণ রোধে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন বলে জানান।

বেলা ১১টার দিকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের সামনের সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন ব্যবসায়ীরা। বিক্ষোভ মিছিলে ‘লকডাউন চাই না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা রাখতে চাই’, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানব দোকানপাট খুলব’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে দোকানপাট খুলতে হবে’, ‘গণপরিবহন চললে মার্কেট কেন বন্ধ থাকবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা। বিক্ষোভের আগে মানববন্ধনে ব্যবসায়ীরা বলেন, গত বছর করোনায় লকডাউন থাকায় বঙ্গবাজার ব্যবসায়ীদের শত কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এবারও লকডাউনের অজুহাতে মার্কেট বন্ধ থাকলে সবাইকে পথে বসতে হবে। এখন স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে মার্কেট খুলে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করে দিতে পারে সরকার।

সিলেটে রবিবার থেকে দোকানপাট খোলার ঘোষণা ব্যবসায়ীদের : করোনা পরিস্থিতিতে কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ালে তা মেনে নেবেন না সিলেটের ব্যবসায়ীরা। আগামী রবিবার সন্ধ্যা থেকে তারা দোকানপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল নগরীর বন্দরবাজারের হাসান মার্কেটে বৈঠক শেষে ব্যবসায়ী নেতারা এ ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা দেশের ব্যবসায়ীদের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে কঠোর বিধিনিষেধের সময় না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। কঠোর বিধিনিষেধ পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সকাল ১১টায় হাসান মার্কেটে বৈঠকে বসেন ব্যবসায়ীরা। সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে ডাকা সভায় বক্তারা চলমান এক সপ্তাহের বিধিনিষেধের মেয়াদ না বাড়ানোর দাবি জানান। ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করতে চান। প্রতিটি বিপণীবিতান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করবেন। লকডাউনে অন্যান্য খাত চালু রেখে শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা অমানবিক। তাই আজ বৃহস্পতিবার বিধিনিষেধ নিয়ে যে সভা হওয়ার কথা, সেই সভায় বিধিনিষেদের সময় বৃদ্ধি না করার আহ্বান জানান তারা। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, যদি লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয় তবে তা মানা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। আগামী রবিবার সন্ধ্যা থেকে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলবেন। কারণ ব্যবসায়ীদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ছাড়া তাদের বিকল্প কোনো উপায় থাকবে না।

বগুড়ায় বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ : বগুড়ার সাতমাথায় বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে দোকান খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিল সমাবেশ হয়েছে। এতে শহরের নিউমার্কেটসহ সাতটি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিকল্প নেই। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দোকান খুলে দেওয়ার দাবি জানান।

দিনাজপুরে দোকান খোলার অনুমতি চেয়ে বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ব্যানার :  কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে সীমিত সময়ের জন্য হলেও দোকান খোলার অনুমতি চেয়ে দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ব্যানার টাঙিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন দোকান খোলার অনুমতি দেওয়ার জন্য। জানা গেছে, দিনাজপুর জেলা দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সার্বিক প্রচারে প্রায় ২২টি মার্কেটে ব্যানার টাঙানো হয়েছে। ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে’ শিরোনামের টাঙানো ব্যানারে লেখা হয়েছে- ‘দোকান ব্যবসায়ীদের বাঁচান, লকডাউনে সীমিত সময়ের জন্য হলেও দোকান খোলার অনুমতি প্রদানের অনুরোধ করছি।’

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, লকডাউনে সীমিত সময়ের জন্য হলেও দোকান খোলার অনুমতি প্রদানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করে আমরা ব্যবসা করতে চাই। তাতে আমরা বাঁচব এবং আমাদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বেঁচে যাবে।

রাজশাহীতে দোকান খোলা : দোকান খুলে রাখার দাবিতে রাজশাহীর বস্ত্র ব্যবসায়ীরাও বিক্ষোভ করেছেন। করোনা পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের বিধিনিষেধের তৃতীয় দিনে নগরীর সাহেববাজারে বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা। এর আগে সকালেই তারা দোকান খোলেন। কিন্তু পরে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের জরিমানা করতে গেলে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা ঘোষণা দেন, কাউকে জরিমানা করা হলে আন্দোলন জোরদার হবে। ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমে পড়ায় ম্যাজিস্ট্রেট কাউকে জরিমানা করেননি। ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পরই ব্যবসায়ীরা দোকান খোলেন। তবে ক্রেতার সংখ্যা ছিল কম। দুপুর পর্যন্ত আর কেউ তাদের দোকান খোলার ব্যাপারে বাধা দেয়নি।

বান্দরবানে ৬ ঘণ্টা শপিং সেন্টার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত : বাংলা নতুন বছরকে বরণ ও পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব উদ্যাপন উপলক্ষে বিধিনিষেধের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বান্দরবানের শপিং সেন্টারগুলো ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা করে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বান্দরবানের জেলা প্রশাসন। গতকাল সকালে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। তিনি বলেন, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায় পুরাতন বাংলা বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে জাঁকজমকভাবে উদ্যাপন করে সাংগ্রাই উৎসব। তবে এবার সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সারা দেশে বিধিনিষেধ চললেও বান্দরবান জেলা প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব উদ্যাপনের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সীমিত আকারে বান্দরবানের সব শপিং সেন্টার ৭ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার থেকে ১২ এপ্রিল দুপুর ২টা পর্যন্ত সীমিত পরিসরে কাপড়, কসমেটিক, ব্যাগ ও জুতার দোকান খোলা থাকবে। ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে এসব দোকান।

গাজীপুরে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন : গাজীপুরে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মার্কেট ও দোকানপাট খোলা রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। গতকাল সকালে গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে শাপলা ম্যানশনসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা এ মানববন্ধনে অংশ নেন। বক্তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানান। তারা বলেন, দোকান চালাতে গিয়ে ব্যাংক ঋণ, এনজিও ঋণ, দোকান ভাড়া ও সিকিউরিটি, বাসা ভাড়া, কর্মচারীদের বেতনসহ পরিবারের অন্যান্য ব্যয়ভার মেটানোর সক্ষমতা তারা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর