বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

শহরে চলছে গণপরিবহন মানুষ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি

ঢাকার রাস্তায় যাত্রীর তুলনায় বাসই ছিল বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

হঠাৎ বেড়ে যাওয়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। দুই দিন বন্ধ থাকার পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় গতকাল বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন গণপরিবহন চলা শুরু হয়েছে। রাজধানীতে মানুষের চেয়ে গণপরিবহনই ছিল বেশি। এতে অবশ্য ভোগান্তি কমেছে। তবে যথারীতি ট্রেন, লঞ্চ ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ ছিল। আশপাশের জেলা থেকে যাত্রীবাহী পরিবহন রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ছিল তৎপর।

তবে সিটি পরিবহনে অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করলেও হাত স্যানিটাইজ করা হয়নি। রাজধানীতে বড় শপিং মলগুলো না খুললেও ছোট ও মাঝারি ধরনের দোকান খোলার চেষ্টা করেছেন ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ দোকানের ঝাঁপ ফেলেও ভিতরে অবস্থান করেন। অলিগলিতে প্রায় সব দোকানই ছিল খোলা। কাঁচাবাজারে যথারীতি উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কে গণপরিবহনের তুলনায় যাত্রী কম। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা গতকালও লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকে দুপুর ১২টা নাগাদ গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ ও প্রেস ক্লাব এলাকা ঘুরে দেখা যায় সড়কে পরিবহন  সংকট নেই। গাড়িগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী ওঠানো-নামানো হচ্ছে। কিন্তু হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছিল না অনেক গাড়িতেই।

গাবতলী-সাইনবোর্ড রুটের রজনীগন্ধা বাসের সুপারভাইজার রাজীব আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা শহরে এখন যাত্রীর চেয়ে গাড়ি বেশি। সকাল থেকে নির্দিষ্ট আসনেও লোক নেই।’ সাইনবোর্ড-নবীনগর রুটের লাব্বাইক পরিবহনের যাত্রী মো. শফিক বলেন, ‘আমি বাসে উঠেছি রায়েরবাগ থেকে। দ্রুত কারওয়ান বাজার অফিসে এসে পৌঁছেছি। গত দুই দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার জন্য। পাওয়া গেলেও ভাড়া ছিল বেশি। তবে বর্ধিত ভাড়া নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালু রেখে ভালো হয়েছে।’

মিরপুর-মতিঝিল রুটের বিকল্প পরিবহনের চালক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আজ সড়কে অন্য দিনগুলোর তুলনায় যাত্রীসংখ্যা অনেক কম। যাত্রীর চাপ কম থাকলে মালিকরা সড়কে বাস কম নামাবেন। যাত্রী কম আর বেশিতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই, মালিকের গাড়ি চালাই। গাড়ি চললে আমাদের বেতন হবে।’

এদিকে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বেচাকেনা চালাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর গাউছিয়া ও নিউমার্কেট এলাকার বেশ কিছু পাইকারি মার্কেটে চলছে ব্যবসায়িক কার্যক্রম। ৫ এপ্রিল থেকে সব ধরনের শপিং মল ও বিপণিবিতান বন্ধ রাখতে বলেছে সরকার। তবে শুরু থেকেই এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন গাউছিয়া ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট খোলা রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু তাদের দাবির বিষয়ে কর্ণপাত করেননি কর্তৃপক্ষ। তবু সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, চাঁদনিচক মার্কেটের পাশে ইসমাইল ম্যানশন কমপ্লেক্স, নূর ম্যানশন ও চিশতিয়া পাইকারি মার্কেটের ফটকের সামনে ভিড় করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। জিজ্ঞেস করতেই এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘সামনে রমজান। তাই পাইকারি দরে কাপড় কিনতে এসেছি। ইসমাইল ম্যানশন থেকে প্রায় লাখ টাকার মাল কিনেছি।’ এদিকে কোনো কোনো দোকানের শাটার নামিয়ে বেচাকেনা করতে দেখা যায়। চাঁদনিচক ও গাউছিয়া মার্কেটে ছোট পিকআপভর্তি মালামাল আনতে দেখা যায় ব্যবসায়ীদের। চিশতিয়া ম্যানশনে মালামাল ডেলিভারি দিতে আসা কয়েকজন জানান, পুরান ঢাকার ইসলামপুর থেকে চিশতিয়া মার্কেটে কাপড় ডেলিভারি দিতে এসেছেন। পথে কোনো সমস্যা হয়নি।

কাঁচাবাজারে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি : করোনা মহামারী ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সাত দিনের বিধিনিষেধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা কাঁচাবাজার খোলা রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু রাজধানীর কোনো কাঁচাবাজারে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই। এ ছাড়া বাজারগুলো উন্মুক্ত স্থানেও স্থানান্তরিত হয়নি। গতকাল কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সকালে উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, গাদাগাদি করেই মাছ, মাংস ও শাকসবজি কিনছেন ক্রেতারা। দু-এক জন বিক্রেতার মুখে মাস্ক দেখা গেলেও অনেকের মুখেই ছিল না। ক্রেতাদের কারও মুখের মাস্ক ছিল থুতনিতে, কারও পকেটে। কোথাও ছিল না সামাজিক দূরত্ব। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, হাতিরপুল, সেগুনবাগিচাসহ অন্যান্য কাঁচাবাজারেও ছিল একই চিত্র। সব কাঁচাবাজারেই ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। উত্তর বাড্ডায় আবদুর রহিম নামে একজন মাছ বিক্রেতা বলেন, ‘কত সময় ধরে মাস্ক পরে থাকা যায়! এ ছাড়া মাছ কাটতে হয়, পানি দিয়ে হাত ধুতে হয়। নানা সমস্যা। মাস্ক পরে গ্রাহকের সঙ্গে কথা বললে তারাও ঠিকমতো কথা বোঝেন না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর