বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বায়রা নির্বাচনের ভোটার তালিকা নিয়ে হযবরল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার নির্বাচনের ভোটার তালিকা নিয়ে হযবরল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শক্তিশালী একটি প্যানেলের নেতাদের ভোটার তালিকা থেকেই বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে বায়রার আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী একটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ লড়াই করার সুযোগই পাবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বায়রাকে করায়ত্ত করতে একটি পক্ষ প্রভাব খাটিয়ে আরেকটি পক্ষকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চাইছে। এতে নানান বাহানায় সরকারি প্রশাসনকেও ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আগামী ২২ মে বায়রার নির্বাচন               অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। যদিও করোনা পরিস্থিতিতে নির্বাচন পেছাতে পারে। জানা যায়, আসন্ন নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়া ভোটার তালিকার বিষয়ে ৪ ও ৬ এপ্রিলের আপিলে অনেককে একতরফাভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে আবার অনেককে অনিয়মের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে। এতে মালয়েশিয়ায় জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠানো দশ এজেন্সি মালিকের আটজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে বায়রা সচিবালয়ে তাদের বকেয়া আছে। কিন্তু বকেয়া থাকার পরও দুজনকে রাখা হয়েছে ভোটার তালিকায়। এই দশজনের মধ্যে খসড়া ভোটার তালিকায় ছিল পাঁচজনের নাম। তাদের বাদ দিয়ে রাখার ক্ষেত্রে মানা হয়নি স্বাভাবিক নিয়ম। বাদ পড়া এজেন্সি মালিকদের দেওয়া হয়নি কোনো নোটিস, তাদের ডাকাও হয়নি কোনো শুনানিতে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় বাদ পড়া এজেন্সির মধ্যে আছে আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইউনিক ইস্টার্ন লিমিটেড, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, আইএসএমটি ইউম্যান রিসোর্স লিমিটেড, আল ইসলাম ওভারসিস। বাদ পড়া আল ইসলাম ওভারসিসের মালিক জয়নাল আবেদিন জাফর বলেন, আমাকে না জানিয়ে এক তরফাভাবে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে আপিল কমিটি। আমার নাম খসড়া তালিকায় ছিল আর বায়রা আমার কাছে কোনো টাকা পাবে না। মালয়েশিয়ার জন্য যে ডোনেশন ৯ লাখ টাকার কথা বলা হচ্ছে, উল্টো আমি আরও বেশি দিয়েছি বায়রাকে। শেষ দিকে আমার ১ হাজার ২০০ কর্মীর ফ্লাইটই হয়নি। তাহলে তাদের টাকাতো দেওয়ার কথা নয়। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, কোন মহলের অভিযোগের ভিত্তিতে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এক তরফাভাবে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা বেআইনি কাজ করেছে আপিল কমিটি। বাদ পড়া বায়রার সাবেক সভাপতি ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক নূর আলী জানিয়েছেন, আপিল শুনানিতে তাকে নোটিসও করা হয়নি। বাদ পড়া বায়রার সাবেক মহাসচিব ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুহুল আমিন স্বপন। তিনি বলেন, আমাকে বাদ দিতে হলে আগে নোটিস করতে হবে। আমার বক্তব্যও শুনতে হবে, বায়রার নিয়ম এবং দেশের প্রচলিত আইন সেটাই। খসড়া তালিকায় নাম ছিল কিন্তু অজানা কারণে আমাকেসহ অনেককে কোনো শুনানি ছাড়া বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা বায়রার সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থন ছাড়া আপিল নিষ্পত্তি হতে পারে না। রাতের অন্ধকারে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া নজিরবিহীন। এ জন্য আমিসহ সাধারণ সদস্যরা বায়রা প্রশাসক ও মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। আশা করি সেখান থেকে ন্যায় বিচার পাব। একই অভিযোগ করেছেন মেসার্স আবিদ এয়ার ট্রাভেন্স অ্যান্ড ট্যুরস এর স্বত্বাধিকারী কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল, পূরবী ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, সোনার বাংলা কৃষি খামার এজেন্সির ব্যবস্থাপনা অংশীদার কেফায়েত উল্লাহ মামুন, মেসার্স আল মিনার ওভারসিজের ব্যবস্থাপনা অংশীদার মো. আক্তার হোসেন, মেসার্স যমুনা ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী মতিউর রহমান খানসহ বেশ কয়েকজন। তারা সবাই বায়রা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তারা বলেন, নোটিস না করে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে নানা অজুহাতে বায়রার চূড়ান্ত ভোটার তালিকা থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবদুস সালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে বকেয়া সংক্রান্ত অভিযোগ ছিল আপিল বোর্ডে। তাই তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আর খুব কম সময়ে সব শেষ করতে হয়েছে, তাই  নোটিস করা হয়নি। এখানে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিরও কিছু ভুল ছিল। তবে এখনো লিখিত আবেদনের পরিপ্র্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশোধনের সুযোগ আছে বলে জানিয়েছেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান।

বায়রা সচিবালয়ের তথ্য মতে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য  ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রতি ১ হাজার টাকা করে বায়রাকে ডোনেশন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষের দিকে অনেকেই টাকা পরিশোধ করেননি। ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬২ জন কর্মীর মোট ২৫ কোটি ৯৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল বায়রাকে। সেখানে পরিশোধ করা হয় ১৯ কোটি ৮১ লাখ ৯৩ হাজার ৯০০ টাকা। আর বাকি আছে ৬ কোটি ১৬ হাজার ৬৮ হাজার ১০০ টাকা। এর মধ্যে বাদ পড়া পাঁচজনের বাকি রয়েছে ৯ লাখ থেকে শুরু করে ৭৪ লাখ পর্যন্ত। অথচ মোট ৫৪ লাখ টাকা বকেয়ার পরও ভোটার তালিকায় নাম আছে রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল ও প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজমের তারা ভোটার হয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর