শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনা থেকে মানুষ বাঁচাতে আরও কঠোর পদক্ষেপ : প্রধানমন্ত্রী

ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা থেকে মানুষ বাঁচাতে আরও কঠোর পদক্ষেপ : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারী থেকে মানুষের জীবন রক্ষায় সামনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে এবং আমরাও সে ধাক্কাটা দেখতে পাচ্ছি। আমরা তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নিলেও ভবিষ্যতে হয়তো মানুষকে বাঁচাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সেটা আমরা নেব। গতকাল সকালে বিসিএস কর্মকর্তাদের ছয় মাসব্যাপী ৭১তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাভারে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।

দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের জীবন-জীবিকা চলতে হবে, মানুষকে আমরা কষ্ট দিতে পারি না। কিন্তু সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একান্তভাবে অপরিহার্য। প্রত্যেকে যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এ বিষয়ে সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। শুধু নিজের নয়, অন্যদের সুরক্ষার জন্যও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারাও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। অন্যরা যেন সুরক্ষিত থাকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। আজ যারা দায়িত্ব নিয়ে কর্মস্থলে যাবেন সেখানেও যেন সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সেদিকে আপনারা দৃষ্টি দেবেন। তিনি বলেন, যেমন মাস্ক পরাটা একান্তভাবে দরকার, অফিস-আদালত বা কাজ থেকে ঘরে ফিরে সবাই একটু গরম পানির ভাপ নেবেন। কারণ এ ভাইরাস সাইনাসে গিয়ে বাসা বাঁধে। সেটা যেন না পারে সেজন্য একটু গরম পানির ভাপ নিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ৭১তম বুনিয়াদি কোর্সে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন। প্রতিষ্ঠানে রেক্টর মো. রকিব হোসেন ফলাফল উপস্থাপন করেন এবং শপথ পড়ান। এবারের কোর্সে ৩০৭ জন কর্মকর্তার সবাইই কৃতকার্য হয়েছেন। এর মধ্যে ২২৮ জন পুরুষ এবং ৭৯ জন নারী কর্মকর্তা রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, একটানা সরকারে আছি বলেই দেশের উন্নয়নমূলক কাজগুলো ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হয়েছি। করোনাভাইরাস আজ সারা বিশ্বকেই তোলপাড় করে দিয়েছে। বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুতেই একটা বাধা আসছে। তার পরও আমাদের প্রচেষ্টা রয়ে গেছে। এর পরও আমরা বাজেট প্রণয়ন করেছি। কিছু দিনের জন্য সবকিছু থমকে গিয়েছিল। তার পরও আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রেখেছি। কারণ আমাদের লক্ষ্যটা হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি এখন আমার যে বয়স তাতে ৪১ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকা বা রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে আজ যারা নবীন অফিসাররা প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজে যাবেন, আপনাদের ওপর এ দায়িত্ব পড়বে। আমি বলব আমার ৪১-এর উন্নত বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হচ্ছেন এই নতুন প্রজন্ম, যারা রাষ্ট্রের দায়িত্বে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের জন্যই আপনাদের কাজ করতে হবে। আমাদের মহান মুক্তির সংগ্রামে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। কাজেই সবাইকে সমান অধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে, সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সাল থেকে একটানা ক্ষমতায় আছে বলেই দেশের উন্নয়নের কাজগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছে এবং ১০ বছর মেয়াদি পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর সুবিধা আজ শহর থেকে প্রান্তিক গ্রাম পর্যায়ে বিস্তৃৃত হয়েছে।

ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান : ব্যবসা-বাণিজ্য, যুব উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডি-৮ সদস্য দেশগুলোকে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে যুবশক্তিকে কাজে লাগানো, তথ্যপ্রযুক্তি সম্ভাবনার পূর্ণ ব্যবহার, প্রয়োজনীয় আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত কাঠামো তৈরি; কানেকটিভিটি বাড়ানো, ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। গতকাল বিকালে গণভবন থেকে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে (ভার্চুয়াল) এ আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। এ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্কের নেতারা। অনুষ্ঠানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ডি-৮-এর চেয়ারম্যানশিপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করেন। বাংলাদেশ আগামী দুই বছর ডি-৮-এর চেয়ারের দায়িত্ব পালন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসায়িক ধারণা, মডেল উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিতে তরুণদের শক্তি ও সম্ভাবনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বেসরকারি, এমনকি সরকারি থেকে বেসরকারি পর্যায়েও ব্যবসা উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের দেশগুলোর (ডি-৮) যুবকদের একত্রিত হতে হবে। ডি-৮ বিজনেস ফোরামের সঙ্গে প্রথম ডি-৮ ইয়ুথ সম্মেলনটি একটি বিরল সুযোগ তৈরি করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে কার্যকর পার্টনারশিপ এবং বৃহত্তর সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুবকদের খুব ভালো সম্পৃক্ততা করোনা মহামারীর মধ্যেও আমাদের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে।

ডি-৮ সদস্য দেশগুলোকে বাণিজ্য বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসায়ীদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ সমস্যা বাংলাদেশের পরিবেশ, সমাজ এবং অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। মানবিক বিবেচনাবোধ থেকে বাংলাদেশ ১ দশমিক ১ মিলিয়ন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। শুরু থেকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ, সম্মানজনক এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য চেষ্টা করে আসছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন এখনো শুরু হয়নি। সবাইকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সংকটের সমাধান না হলে এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারকে চাপ দিতে ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা। দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যান্য ডি-৮ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানও ভার্চুয়াল মাধ্যমে শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর