শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

স্ত্রীকে খুশি করতে সীমিত পরিসরে সত্যকে গোপন করার অবকাশ রয়েছে : মামুনুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্ত্রীকে খুশি করতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে সত্যকে গোপন করার অবকাশ রয়েছে বলে নিজেই মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন। গতকাল বেলা ৩টা ১১ মিনিটে তিনি ফেসবুক লাইভে আসেন। ৩২ মিনিট ৩২ সেকেন্ড তিনি তার অবস্থা ব্যাখ্যা করেন।

ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, আমি একাধিক বিয়ে করেছি। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী ও বাংলাদেশের আইনে একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। একজন পুরুষ চারটি বিয়ে করতে পারেন। চারটি             বিয়ে করলে কার কী? আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমি কী কথা বলব না বলব সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করে আমার ব্যক্তিগত অধিকার ক্ষুণœ করা হয়েছে। এটি যেমন দেশের আইনেও অপরাধ তেমনি ইসলামী বিধানেও চরম গুনাহের কাজ। সুতরাং আমার ব্যক্তিগত ফোনালাপ যারা ফাঁস করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনি ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, সেদিন নারায়ণগঞ্জের রয়াল রিসোর্টে যে ঘটনা ঘটেছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে যে আমি কেন এই পরিস্থিতিতে রিসোর্টে গেলাম। হ্যাঁ আমি স্বীকার করছি যে এমন অসাবধানতাবশত সেখানে আমার যাওয়া সমীচীন হয়নি। ব্যক্তিগত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তবে আমি জানতাম না যে দেশের মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা চরমভাবে ভেঙে পড়েছে। আমি সবার কাছে দোয়া চাই। আমার ব্যক্তিগত অসাবধানতার কারণে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে যে ক্ষতির সম্মুখীন ব্যক্তিগতভাবে হয়েছি; সেজন্য নিজেই মর্মাহত। আমার কারণে আজকে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের কাছে আমি হাত জোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। মামুনুল হক বলেন, যেভাবে একের পর এক মানুষের ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করা হচ্ছে, এটি দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। মাওলানা রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে তার নামেও অপবাদ দেওয়া হয়েছে। এই যে এতগুলো ফোনালাপ ফাঁস করা হলো তাতে কি প্রমাণ মিলেছে যে সে আমার বিবাহিতা স্ত্রী নয়? অথচ শুধু শুধু আমার একান্ত ব্যক্তিগত কথাগুলো কোন উদ্দেশ্যে ফাঁস করা হলো? ইসলামে চারটি বিয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশের আইনেও একাধিক বিয়েতে বাধা নেই। কাজেই আমি দ্বিতীয় বিয়ে করেছি এতে কার কী? যদি আমি স্ত্রীদের কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত করে থাকি, তবে আমার বিরুদ্ধে আমার পরিবার অভিযোগ দিতে পারে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ কি দেখাতে পারবে যে আমার পরিবার কোনো বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দিয়েছে? আমি পুলিশকে তথ্য দিয়েছি। দুই স্ত্রীর নাম আলাদা করে বলেছি। আমার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ আমেনা তৈয়বার নামটি সামনে এনেছেন। জান্নাত আরা ঝর্ণার কাছ থেকে আমার অনুমতি ছাড়া তার স্টেটমেন্ট ও মন্তব্য ধারণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নারী সদস্যরা। তারা কার অনুমতি নিয়ে জনসম্মুখে এসব প্রচার করেছে? আমার পর্দানশিন স্ত্রীর পর্দা তারা লঙ্ঘন করেছে। দেশ ও জাতির সামনে তার পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে যে অধিকার তারা ক্ষুণœ করেছে সেটার জন্য জনতার আদালতে বিচার দায়ের করলাম। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে মামুনুল হক বলেন, বিশ্বের মুসলমান ভাইদেরও তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। একের পর এক মামলা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে অনেক মানুষকে হয়রানি করা হবে। অথচ প্রকৃত যারা দোষী, যারা গিয়ে হামলা করল, সেই সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে রাষ্ট্র নীরব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ তাদের নাম পরিচয় দিবালোকের মতো পরিষ্কার। ইতিমধ্যে তাদের ব্যাপারে আমি এজাহার দায়ের করেছি। আরও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এই যে একটি অবস্থা  তৈরি করা হয়েছে, আশু যদি এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটে, তাহলে বাংলাদেশ অনিবার্যভাবেই একটি সংঘাতমূলক পরিস্থিতির দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে। কাজেই আমি সংশ্লিষ্ট মহলকে বলব, আগুন নিয়ে বেশি খেলা করবেন না। এই আগুন নিয়ে খেলার পরিণাম কারও জন্য শুভ পরিণতি ডেকে আনবে বলে মনে হয় না।

 

প্রশ্ন করতে পারেন, আপনার বিরুদ্ধে কেন এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হলো। রাষ্ট্রযন্ত্র আদালত ও প্রশাসন এই যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, এর মূল লক্ষ্য ইসলামের পক্ষে আমার কণ্ঠ রুদ্ধ করে দেওয়া। এরপরে হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীলদের গোপন রেকর্ড ফাঁসের যে ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে, এর মাধ্যমে অশুভ উদ্দেশ্য স্পষ্ট। তারা চাচ্ছে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বকে কলুষিত করতে। অন্তর্দ্বন্দ ও কলহ তৈরি করতে। আস্থা ও দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, হেফাজতে ইসলামের সংহতি দৃঢ়ভাবে অটুট থাকবে। পারস্পরিক এ ভেদাভেদ আমরা ভুলে যাব। কেউ কোনো দোষ করে থাকলে সাংগঠনিকভাবে তার সংশোধনের যথাযথ ব্যবস্থা করা হবে। হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃত্ব রয়েছে, তারা যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। যারা হেফাজতে ইসলামকে দুর্বল করার পাঁয়তারা করছেন এই ষড়যন্ত্র সফল হবে না।

আমার সেই নৈতিক শক্তি রয়েছে, যার কারণে আমি উপস্থিত। হত্যা করার মতো ঔদ্ধত্য নিয়ে যে সন্ত্রাসী বাহিনী সেদিন রয়েল রিসোর্টে হামলা চালিয়েছিল, সেখানেও পিছ পা হইনি, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। ব্যক্তিগতভাবে একা হওয়ায় অনেক সন্ত্রাসীকে মোকাবিলা করতে পারিনি। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, হুমকি-ধমকির মাধ্যমে আমার নৈতিক অবস্থাকে দুর্বল করা যাবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর