শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় গণপরিবহনে, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই গণপরিবহনে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও উঠেছে। কিছু বাসে আসন ফাঁকা রাখা হলেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো পরিবহনে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যাচ্ছে যাত্রীদের। বলা       চলে স্বাস্থ্যবিধি মানার দিকে নজর নেই চালক ও হেলপার কারো। যাত্রী তোলা নিয়েই চিন্তা বেশি তাদের।

গতকাল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে রাজধানীজুড়ে গণপরিবহন ও যাত্রী ছিল কম। সরকার-ঘোষিত ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরোপের চতুর্থ দিনে করোনা নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি তথা সরকারি নির্দেশনা মানার  আগ্রহ দেখা যায়নি। পরিবহন চালকরা বলছেন, বাস নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। যাত্রীরাই হাত স্যানিটাইজ করতে চায় না। মানুষ একান্ত বাধ্য না হলে গণপরিবহনে উঠছে না। করোনার কারণে তারা গণপরিবহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। এ কারণে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীদের অভিযোগ, তুলনামূলক যাত্রী কম থাকায় ভাড়া বেশি রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না পরিবহন চালক-হেলপাররা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁওয়ের রাস্তায় বাস ছিল কম। শুধু আসনের ক্ষেত্রে নির্দেশনা মানা হলেও অন্য কোনো নির্দেশনা মানার আগ্রহ নেই চালক-হেলপারদের। যাত্রী কম থাকায় প্রায় সব বাসেরই অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা ছিল। তবে স্যানিটাইজার দিয়ে যাত্রীর হাত পরিষ্কার করা, ট্রিপের আগে-পরে বাস জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা, পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের সবার মাস্ক পরিধান করা, গ্লাভস নিশ্চিত করার বিধিনিষেধ তেমনভাবে চোখে পড়েনি। বিহঙ্গ পরিবহনের অনেক হেলপারের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। একজনকে মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘মাস্ক পরে যাত্রী ডাকা যায় না। তবে পকেটে সব সময়ই মাস্ক থাকে।’ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে হেলপার-চালকরা বলছেন, এই গরমে মাস্ক পরে থাকা সম্ভব নয়। অন্য নির্দেশনা সম্পর্কে তারা পুরোপুরি অবগত নন। এদিকে দিনভর ঢাকার রাস্তায় বাস দেখা গেলেও সন্ধ্যার পর মহাখালী, বনানীতে বাসের জন্য অনেককেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে রাস্তায় বাস না থাকায় সিএনজির ভাড়াও দ্বিগুণ রাখতে দেখা গেছে। আবার সিএনজি ভাড়া বেশি কেন? এ নিয়ে যাত্রীদের হট্টগোল করতেও দেখা গেছে।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ : মিরপুর থেকে করোনা টেস্ট করিয়ে কারওয়ান বাজার ফিরছিলেন প্রবাসী এক শ্রমিক। তিনি বলেন, মিরপুর থেকে কারওয়ান বাজারের ভাড়া ১৫ টাকা। কিন্তুনিচ্ছে ২৫ টাকা। আবার দাঁড় করিয়ে যাত্রী নিচ্ছে। এদিকে ঢাকার শনিরআখড়ায় গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ীগামী একাধিক গণপরিবহনে বাস ভর্তি করে যাত্রী নিতে দেখা গেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। যাত্রীরা বলছেন, শর্তানুযায়ী ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ায় অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যানবাহন চলার কথা। কিন্তু বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হলেও পরিবহনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা হচ্ছে না। বিশ্লেষকদের মতে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পারেননি মালিকরা। স্টার্টিং পয়েন্টে বাস স্যানিটাইজ করা বা পরিবহন শ্রমিকদের মাস্ক পরানোটাও নিশ্চিত হয়নি এখনো।

যাত্রী কম, সন্ধ্যার পর গাড়ি সংকট : সকালে অফিসে যাওয়ার সময় শেষ হওয়ার পর অধিকাংশ পরিবহনে তেমন একটা যাত্রী ছিল না। আবার সন্ধ্যার দিকে অনেক রাস্তায় পরিবহনের সংকট দেখা গেছে। যাত্রীদের বাসের জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সকালে প্রতিটি পরিবহনেই পর্যাপ্তসংখ্যক যাত্রী ছিল। আবার কোনো কোনো পরিবহনকে প্রতিটি আসনে যাত্রী পরিবহন করতেও দেখা গেছে। কিন্তু সকাল ১০টার পর এ চিত্র উল্টে যায়। অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহনের পরও এর অর্ধেক ফাঁকা থাকতে দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর মগবাজার ওয়ারলেস মোড়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম রোড থেকে কাপারপাড়া রুটে চলা একটি বাসে সাত-আট জন যাত্রী রয়েছেন। এ সময় বাস থেকে নেমে ডাকাডাকি করে যাত্রী ওঠানোর চেষ্টা করেন হেলপার। একজন হেলপার বলেন, ‘মাঝেমধ্যে যাত্রী পাই। তখন সব যাত্রীকেই বাসে উঠিয়ে ফেলি। আবার কিছুক্ষণ পর দেখি পুরো বাস ফাঁকা। আসলে কখন যাত্রী হবে আর কখন হবে না তা বলা কঠিন। তবে অফিসে যাওয়ার সময় ছাড়া আমরা যাত্রী বেশি পাই না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর