রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

হত্যা চক্রান্তে জড়িত হেফাজতের তিনজন গ্রেফতার

নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে ৩ এপ্রিল মাওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করার দৃশ্যটির লাইভ ভিডিও করায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে তাদের হত্যার চক্রান্ত করেন হেফাজতে ইসলামের তিন কর্মী। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে মাসদাইর ও অক্টোফিস এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একাধিক টিম। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, সোনারগাঁ যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সোহাগ রনি, সোনারগাঁ ছাত্রলীগের সদস্য ও জার্নালিস্ট ক্লাবের যুগ্মসম্পাদক রাকিবুল হাসানকে হত্যার টার্গেট করা হয়েছিল। সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে হত্যা চক্রান্তের হোতা হেফাজতে ইসলামের নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ সাইফ ও কর্মী কাজী সামির এবং তাবলিগ জামাতের সদস্য আবদুল অহিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে সামির মাস্টার্স পাস করে শিক্ষকতা করছিলেন। অহিদ ইস্ট ওয়েস্ট থেকে বিবিএ পাস করে ব্যবসায় জড়িত আর ও সাইফ চাকরি খুঁজছিলেন। তিনি আরও জানান, যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের ধরা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে এদের নজরদারি করা হচ্ছিল। এরা কখন কোথায় কীভাবে হামলা করবে সেই কথোপকথনের রেকর্ডিং হস্তগত হয়েছে। এদিকে গ্রেফতার আবদুল অহিদের বাবা শহীদুল্লাহ (৭০) সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বলেন, ‘কারও প্ররোচনায় জজবায় পড়বেন না। বিপদে পড়লে পরিবার ছাড়া কাউকে পাশে পাবেন না। যারা আটক হয়েছে তারা কখনো পিঁপড়া মেরেও দেখেনি। হয়তো কেউ তাদের ব্রেন ওয়াশ করেছে। আজ আমরা আদালতে কারাগারে দৌড়াচ্ছি। প্ররোচনাকারীরা তো কেউ আমাদের পাশে নেই।’ একই কথা আক্ষেপ প্রকাশ করে মাওলানা সাইফের ভাই আশরাফ বলেন, ‘প্লিজ, কারও কথায় অপরাধে জড়াবেন না। জানি না আমার ভাই কী করেছে। দেশের সবাইকে বলব নিজের পরিবারের সদস্যদের ওপর নজর রাখুন। কিছু দুর্বৃত্ত সাধারণ মানুষের ব্রেন নিয়ে খেলছে। আজ যে বিপদে আমরা পড়েছি যারা মানুষকে উত্তেজিত করেছে তারা কিন্তু কেউ পাশে নেই। যখন বিপদে পড়বেন তখন দেখবেন আপনি আর আপনার পরিবার আদালতে কারাগারে থানায় দৌড়াচ্ছেন।’

বিভাগীয় কমিশনারের সোনারগাঁয়ের তান্ডব স্থান পরিদর্শন : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গত ৩ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করার জেরে তান্ডব চালানো স্থান পরিদর্শন করেছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান। গতকাল বিকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে সোনারগাঁ উপজেলা অডিটরিয়ামে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন তিনি।

সভায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সরকার আমাদের ওপর যে দায়িত্ব দিয়েছে, সে দায়িত্ব যদি কেউ সঠিকভাবে পালনে ব্যর্থ হন কিংবা সরকারে বিরুদ্ধে কাজ করেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। সরকার আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে। এতে কেউ ব্যর্থ হলে সে জায়গায় তাকে দায়িত্বে রাখা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। স্থানীয় প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে কিনা, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত স্থান সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্ট, আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতার বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের স্থান স্বচক্ষে দেখেছেন বিভাগীয় কমিশনার। ওই সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে সেদিনকার হামলা ভাঙচুরের বর্বরতার কথাও শোনেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, সোনারগাঁয়ের ঘটনায় আমাদেরও দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন বিভাগীয় কমিশনার। পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপরাধ) জিহাদুল কবিরসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর