সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

লকডাউনকে ঘিরে কঠোরতা

আসছে সাধারণ ছুটি, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হতে পারে, আজ কাল চলবে না দূর পাল্লার যান, ব্যাংকে ছিল উপচে পড়া ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার বিস্তার রোধে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’র ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এটা হবে প্রথম পর্যায়ের সংক্রমণের সময়  দেওয়া সাধারণ ছুটির আদলে। জরুরি সেবা ছাড়া বন্ধ থাকবে সবকিছু। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খোঁজ নিয়ে এমনটাই জানা গেছে। এ ব্যাপারে আজ প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে সাধারণ ছুটির ঘোষণা আসছে। আপাতত এক সপ্তাহের জন্য এটা দেওয়া হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় বাড়ানো হতে পারে। সাধারণ ছুটির মধ্যে গণপরিবহন বন্ধ রাখাসহ অন্যান্য কী কী বিধি-নিষেধ থাকবে তা প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট করা হবে। এটা নিয়ে কাজ চলছে। আজ প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

বন্ধ থাকবে ফ্লাইট : ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন চলাকালে এক সপ্তাহের জন্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। গতকাল বেবিচক জানায়, ১৪ এপ্রিল থেকে লকডাউনে আরও এক সপ্তাহের জন্য অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। তবে কার্গো ফ্লাইট চালু থাকবে। এই সময়ের মধ্যে বিশেষ কোনো ফ্লাইট থাকলে সেটা পরিচালনা করতে কোনো বাধা নেই। বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রসঙ্গত, করোনার সংক্রমণ রোধে দেশে গত ৫ এপ্রিল থেকে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে।

আজ-কাল দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ : এদিকে গতকাল রাতে শেষ হয় এক সপ্তাহের কঠোর নিষেধাজ্ঞা। তবে ১৪ এপ্রিল লকডাউনের আগে আজ ও আগামীকাল দূরপাল্লার যাত্রীবাহী যানবাহন বন্ধ থাকবে। গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, প্রথম ধাপের বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতায় ১২ ও ১৩ এপ্রিল সিটি করপোরেশন এলাকায় শর্তসাপেক্ষে সমন্বিত ভাড়ায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকবে। ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে। তখন বৃহত্তর স্বার্থে জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ঘরে অবস্থান করতে হবে।

ব্যাংকে উপচে পড়া ভিড় : সীমিত ব্যাংকিং লেনদেনের কারণে গ্রাহকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে ব্যাংকগুলোতে। গতকাল টাকা তোলা, জমা দেওয়া, সঞ্চয়পত্র ভাঙানোসহ বিভিন্ন কাজের জন্য গ্রাহকরা ভিড় করে রাজধানীর ব্যাংকের শাখাগুলোতে। সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লেনদেনের সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি বেশিরভাগ শাখা। চলমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে আবারও লকডাউনের ঘোষণা আসায় চাপ বেড়েছে বলে গ্রাহক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। গ্রাহকদের চাপের কারণে লেনদেনের সময়সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ সোমবার ও মঙ্গলবার ব্যাংকিং লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। লেনদেন-পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে বেলা ৩টা পর্যন্ত। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক লেনদেনের নতুন এই সময়সীমার নির্দেশনা জারি করেছে। লেনদেনে বিধিনিষেধ দেওয়ার পর ব্যাংকিং লেনদেন ছিল সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ব্যাংকের সান্ধ্যকালীন ও সাপ্তাহিক ছুটিকালীন ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এই সময়ে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত অর্থ ও অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে।

সরকারি সূত্রমতে, গত বছর সাধারণ ছুটিতে সবকিছু যেভাবে চলেছিল তেমনই হবে এবারের লকডাউন। গত বছর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়েছিল। প্রথমে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হলেও পরে কয়েক দফায় বাড়িয়ে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি হয়। প্রথমে জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সবকিছু বন্ধ থাকলেও একপর্যায়ে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাসহ কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর