সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

কালো টাকা বলতে কিছু নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

কালো টাকা বলতে কিছু নেই

আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো ও কৃষি খাত অধিক গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বরেণ্য অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে এক অনলাইন মাধ্যমে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনার পর জুম প্ল্যাটফরমে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য       জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের সেবা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি প্রাধান্য দেওয়া হবে গ্রামীণ অবকাঠামো ও কৃষি খাতের ওপর। কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে কালো টাকা বলে কিছু নেই। আছে অপ্রদর্শিত অর্থ। এটা ঘোষণা দিয়ে নিয়ম অনুযায়ী তা সাদা করার নিয়ম এখনো আছে। অপ্রদর্শিত অর্থ, বিশেষ করে জায়গা-জমি বা এ ধরনের সম্পত্তি ক্রয়ে বিনিয়োগ করা হয়। জমি রেজিস্ট্রেশনে বেশি দামে কিনে কম দাম দেখিয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এটা বন্ধ করার জন্য ডিজিটালাইজেশন করার কাজ চলছে। এটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হবে। আগামী বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স কামানো প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, পর্যায়ক্রমে করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে আনা হচ্ছে। চলতি বাজেটে এটা কমানো হয়েছে, আগামী বাজেটেও বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। বর্তমান বৈশ্বিক বিপর্যয়ে দেশীয় শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবটাই করা হবে। সভায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, সাবেক অর্থ সচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার, নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশসহ দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে পরবর্তী বাজেটে প্রণয়নে তাদের পরামর্শ তুলে ধরেন।

সামনে কড়া লকডাউন আসছে। খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বার্তা আছে কি না- জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে আছেন। আগেও তাদের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছেন। এবারও হয়তো সেভাবে সাহায্য করবেন। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশনা দেবেন আমরা সেভাবেই কাজ করব।’

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। এর আগে বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবীদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনার অংশ হিসেবে দেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের সব পরামর্শ আমরা রেকর্ড করেছি। এরপর যারা বাজেট প্রণয়ন করছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘গত বছরও করোনাভাইরাসের মধ্যে বাজেট দিতে হয়েছে। এ বছরও একই অবস্থা। করোনাভাইরাস একটা বৈশ্বিক সমস্যা। এ সময় শুধু দেশীয় বিবেচনায় কিছু করা সম্ভব নয়। কাজেই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সব সময় দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তার ওপর জোর দিয়ে আসছেন। তার নির্দেশে আমরা জনকল্যাণমুখী বাজেট প্রণয়নে চেষ্টা করছি।’

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘যেসব খাত সরাসরি জনগণের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত, আগামী বাজেটে সেসব খাতের ওপর জোর দেওয়া হবে। বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ নজর থাকবে, যাতে জনগণের হাতে টাকা-পয়সা যেতে পারে। কারণ আমরা একটি ব্যতিক্রম সময়ে বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছি। অর্থনীতিবিদরা তাদের আলোচনায় এসব বিষয় তুলে ধরেছেন। তারা জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের ওপর বিশেষ নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী বাজেটে এসব খাতে বরাদ্দ বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘সভায় আমাদের আয়কর আদায়ের হার বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও অত্যন্ত কম। যেসব পণ্যের ওপর যে হারে ট্যাক্স আদায় করা উচিত, আমাদের এখানে সে হারে আদায় হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই ট্যাক্স মওকুফ করা হয়ে থাকে। যেমন সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানোর।’

তিনি বলেন, অর্থনীতিবিদরা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে প্রশংসা করেছেন। তবে এই প্যাকেজ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি যেসব খাত প্রণোদনা সুবিধা পায়নি সেগুলোকেও প্যাকেজের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর