বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

মৃত্যুর মাঝে উৎসব করা ঠিক নয়

জিন্নাতুন নূর

মৃত্যুর মাঝে উৎসব করা ঠিক নয়

সেলিনা হোসেন

‘মহামারীর কারণে আমাদের আশপাশে অনেক মৃত্যু দেখতে হচ্ছে যা আমাদের মর্মাহত করছে। আর মৃত্যুর মাঝে বাংলা নতুন বছর বরণের উৎসব করব এটি আমাদের চেতনাগত দিক থেকে ঠিক নয়।’ কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন গতকাল চৈত্রসংক্রান্তির রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। সেলিনা হোসেন বলেন, ‘মহামারীতে ঘরে বসেও বাঙালি তার প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করতে পারবে। এদিন শিশুদের দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে বড়রা গান করাতে পারেন। এ ছাড়া নববর্ষে আমরা যা খেতে পছন্দ করি সেগুলো বাড়িতেই রান্না করা যেতে পারে। এভাবে নববর্ষের চেতনা প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করতে হবে। প্রজন্মকে বোঝাতে হবে মহামারীর জন্য আমরা উৎসবটি স্থগিত করেছি, যা একটি মানবিক আবেদন। যে পরিবারের সদস্যরা সুস্থ আছেন তারা নিজেদের সন্তানদের যত্ন করে রাখবেন এবং নতুন বছরের শুরুতেই শিশুদের নতুন জামাকাপড় পরাবেন। ঘরে তৈরি মজাদার খাবার সবাই মিলে খাবেন। বয়সে বড়রা যারা নতুন জামাকাপড় কিনেছেন, নববর্ষে তারাও সেই নতুন পোশাক পরবেন।’ এই কথাসাহিত্যিক বলেন, ‘মহামারীর এই সময়ে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করতে যে কেউ বাধা দিয়েছে তা নয়। বিশ্বজুড়েই মহামারীর এ সময়টিকে আমাদের মেনে নিতে হবে এবং আমাদের চিন্তা ও চেতনায় নববর্ষের ঐতিহ্য এবং বাঙালি জীবনের ধারাবাহিকতাকে ধারণ করে নিতে হবে। নববর্ষে উৎসব উদ্যাপন না করার বিষয়টিকে আমি উল্টোভাবে দেখছি না। দেশের প্রতিটি মানুষই তার চিন্তা-চেতনায় বাঙালির এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখবেন বলে বিশ্বাস করি। আর উৎসব হলো না বলে মন খারাপেরও কিছু নেই। মহামারী ও মৃত্যুর ডামাডোল আমাদের মর্মাহত করছে। তার পরও আমাদের চিন্তা-চেতনায় নববর্ষ থাকবে। তার ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতাও থাকবে। আমরা আশা করছি সামনের বছর আবার আগের মতো করে নববর্ষ উদ্যাপন করতে পারব।’

সেলিনা হোসেন বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী রাজনীতির সূচনা থেকে - নববর্ষ উদ্যাপন করা যাবে না - এ ধরনের বক্তব্য প্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। এটি মোটেও কাম্য নয়। এমন আচরণ প্রবলভাবে দমন করা উচিত। কারণ আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যে সম্রাট আকবর ৯৩৬ হিজরি ও ইংরেজি ১৫৫৬ সনে বাংলা নববর্ষের সূচনা করেছিলেন। সুতরাং মুঘল সম্রাটের সেই সময় থেকেই আমরা ধারাবাহিকভাবে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করছি। এতে কারও - বাংলা নববর্ষ কেন উদ্যাপিত হবে - এমন অন্যায় কথা বলা উচিত হবে না। যেহেতু আমাদের বাংলা বর্ষপঞ্জি আছে এ কারণে প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলা নববর্ষ কেন উদ্যাপন হবে না! আর পয়লা বৈশাখের অর্থ হচ্ছে সেই দিন যে দিন বাংলা মাসগুলো ধারাবাহিকভাবে শুরু হয়। আমরা বাঙালি, বাংলা নববর্ষ আমাদের ঐতিহ্যের একটি বড় জায়গা। তাই কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী - নববর্ষ কেন উদ্যাপিত হবে - এ প্রশ্ন তুললে তা কোনোভাবেই সরকারি ও সামাজিক পর্যায়ে কারও সহ্য করা উচিত হবে না। প্রত্যেকের দায়িত্ব হবে এমন আচরণ প্রতিহত করা। বাঙালি অসাম্প্রদায়িক জাতি। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করেই আমরা বাঙালি। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ আমাদের নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী সবার জন্য এ উৎসব।’

সর্বশেষ খবর