রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
গবেষণায় নতুন তথ্য

করোনাভাইরাস বাতাসেও ছড়ায়

প্রতিদিন ডেস্ক

এতদিন বলা হচ্ছিল করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত নয়। কিন্তু আরও গবেষণার পর জানানো হয়েছে, ‘এ ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও ছড়ায়।’ নতুন এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আমেরিকা, ব্রিটেন ও কানাডার ছয় গবেষক। গতকাল তাঁদের গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ল্যানসেট’। সূত্র : রয়টার্স।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘SARS-CoV-2 ভাইরাসটি বাতাসে ছড়ায়। এ ভাইরাসের কারণেই হয় কভিড-১৯।’ এ বিষয়ে গবেষণায় যুক্ত কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট হোস লুইস জিমেনেজ জানিয়েছেন, ‘বড় ড্রপলেটের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের নিদর্শন এখন নেই বললেই চলে। অর্থাৎ হাঁচলে বা কাশলে যে থুতু ছিটকে আসে, তা থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই কম।’ তাঁর মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন এ গবেষণাকে মান্যতা দিয়ে সে মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। নতুন এ তথ্য ঘোষণার পর গবেষণায় যুক্ত বিশেষজ্ঞ দলটি আরও একটি বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, ‘ঘন ঘন হাত ধুয়ে, মাস্ক পরে দুনিয়াকে আর কতদিন করোনা থেকে রক্ষা করা যাবে, সে নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই।’ খবরে বলা হয়েছে, ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের গবেষক ত্রিশা গ্রিনহালের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের গবেষক দল এরই মধ্যে এয়ারবরন কভিড ছড়ানোর বিষয়টি নজরে এনে ১০ পাতার রিসার্চ পেপার জমা দিয়েছেন। এতে একটি বিষয়ে সতর্ক করেছেন গবেষকরা। তাঁদের মতে, ‘বদ্ধ ঘরে করোনা সংক্রমণ অনেক বেশি হয়। খোলা জায়গায় সেই সম্ভাবনা অনেক কম। অ্যাসিম্পটোমেটিক বা প্রিসিম্পটোমেটিক করোনা আক্রান্তদের হাঁচি কিংবা কাশি নেই। অথচ ৪০ শতাংশ ট্রান্সমিশন তাঁদের থেকেই হচ্ছে। এখন বিশ্বে বেশির ভাগ সংক্রমণ হচ্ছে এ সাইলেন্ট ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে।’ ত্রিশা গ্রিনহাল জানিয়েছেন, তাঁদের দাবির পেছনে অন্তত ১০টি কারণ রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে কভিডের সংক্রমণ পরীক্ষা করে তাঁদের সিদ্ধান্ত- করোনার জীবাণু ছড়ানোর জন্য শুধু বাতাসই যথেষ্ট। ভাসমান জলকণা বা ড্রপলেটসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পাননি তাঁরা। গবেষণায় তাঁরা দেখিয়েছেন, এমন কিছু পরিবেশে কভিডের সংক্রমণ হয়েছে যেখানে ভাসমান জলকণা ছড়িয়ে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। শুধু বায়ু চলাচলের মাধ্যমগুলো দিয়েই ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারত। এমনকি হাসপাতালে বহু স্বাস্থ্যকর্মীই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেও, পর্যাপ্ত সাবধানতা নিয়েও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ভাইরাসটি শুধু জলকণার মাধ্যমে সংক্রমিত হলে, এমনটি হতো না বলে দাবি গবেষকদের। বায়ুবাহিত বলেই এসব ক্ষেত্রে সংক্রমণ হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। এরকম সিদ্ধান্তে আসতে এত দেরি হলো কেন- সে বিষয়েও যুক্তি দেওয়া হয়েছে দলের তরফ থেকে। বলা হয়েছে, জীবাণু বায়ুবাহিত কি না, তা পরীক্ষা করা কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। প্রচুর পরিমাণে নমুনা পরীক্ষা করতে হয়। এত দিন পর্যাপ্ত নমুনা ছিল না বিজ্ঞানীদের হাতে। তা ছাড়া সামান্য ভুলভ্রান্তি হলে জীবাণুর অস্তিত্ব নাও টের পাওয়া যেতে পারে। তাই এ বিষয়ে পাকাপাকি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে দেরি হচ্ছিল। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ দাবি যদি সত্যি বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে বদলাতে পারে মাস্ক পরার ধরনও। এত দিন বাড়ির বাইরেই সাধারণত সবাই মাস্ক পরতেন। কিন্তু জীবাণু যদি বায়ুবাহিত হয়, তা হলে ২৪ ঘণ্টাও মাস্ক পরে থাকতে হতে পারে। শুধু কাজকর্মের সময় নয়, সে ক্ষেত্রে ঘুমতে যাওয়ার সময়ও পরে থাকতে হতে পারে মাস্ক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর