সোমবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের আরও ৩০ জন গ্রেফতার

সোনারগাঁয়ে কাউন্সিলর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সোনারগাঁ প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ হেফাজতের তান্ডবের সময় শহরজুড়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আরও ৩০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শনিবার রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, গ্রেফতার ব্যক্তিরা সবাই হফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থক। এ নিয়ে তান্ডবের ঘটনায় মোট ২৯৮ জন গ্রেফতার হলো।

গতকাল সকালে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হেফাজতের তান্ডবের ঘটনায় জড়িত আরও ৩০ জনকে গ্রেফতার করা  হয়েছে। এরা সবাই হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থক। এ নিয়ে এসব ঘটনায় মোট ২৯৮ জনকে গ্রেফতার করা হলো।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তান্ডবের ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় ৫৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় ৪টি, সরাইল থানায় ২টি। ৫৫টি মামলায় এজাহারনামীয় ৪১৪ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৩৫ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ শনিবার রাত পর্যন্ত এসব মামলায় ২৯৮ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিআইওয়ান) ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, পুলিশ ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে আসামিদের গ্রেফতার করছে।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালায়। এ সময় হামলাকারীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, পৌরসভা কার্যালয়, সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন, এসি ল্যান্ডের কার্যালয়, সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, সার্কিট হাউস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, মাতৃসদন, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের বাসভবন, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরালসহ তিনটি ম্যুরাল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে উন্নয়ন মেলার প্যান্ডেল, একই চত্বরে থাকা শহর সমাজসেবা প্রকল্পের অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের অফিস, পৌর মেয়রের বাসভবন, সার্কিট হাউস, হাইওয়ে থানা ভবন, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্যাম্পাস, হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কালীবাড়ি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন, আশুগঞ্জ টোল প্লাজা, সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অর্ধশতাধিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করে।

কাউন্সিলর ফারুক গ্রেফতার : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে মাওলানা মামুনুল হক অবরুদ্ধের পর হেফাজতের সহিংসতা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় সোনারগাঁ পৌরসভার কাউন্সিলর ফারুক আহমেদ তপনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে  পৌরসভার ভবনাথপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

 সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খন্দকার তবিদুর রহমান জানান, হেফাজতের সহিংসতার মামলার আসামি  সোনারগাঁ পৌরসভার কাউন্সিলর ফারুক আহমেদ তপনকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত।

উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক এক নারীসহ অবরুদ্ধ হন। এ ঘটনায় তার সমর্থকরা রয়েল রিসোর্টে হামলা, আওয়ামী লীগ অফিস ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর এবং মহাসড়কে সহিংসতা চালায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি ও ক্ষতিগ্রস্তরা পাঁচটি মামলা করেন। এই সাত মামলায় ৪৪৬ জনের নাম উল্লেখসহ ১ হাজার ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পুলিশ ৬৩ জনকে  গ্রেফতার করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর