মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কৃষি আমাদের উন্নয়নের সব থেকে বড় মাধ্যম। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

কৃষক লীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ধারণকৃত ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল রাত ৮টায় প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণটি বিটিভিতে স¤প্রচার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা এবং দেশে-বিদেশে পণ্য যেন আমরা রপ্তানি করতে পারি তার ব্যবস্থা করে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। কারণ দেশের কৃষিটাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি গবেষণার ওপর। ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন থেকেই কৃষি গবেষণায় আমরা গুরুত্ব দিই। আরও নতুন ধরনের ফসল উৎপাদন, তরি-তরকারি, ফল-মূল এবং দানাদার খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য যেন উৎপাদন হতে পারে তার জন্য ব্যাপক হারে গবেষণা হচ্ছে এবং উন্নতমানের বীজ আমরা সরবরাহ করছি। যার ফলে আজকে কৃষক খুব অল্প কষ্টে অধিক পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছে-ধান উৎপাদন করতে পারছে, গম করছে, ভুট্টা করছে এবং সব ধরনের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ পাচ্ছে এবং তা বাজারজাত করার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের সময় যখন ধান কাটা নিয়ে সমস্যা হলো- আমি যখন আমার দলের নেতা-কর্মী বিশেষ করে ছাত্রলীগকে আহ্‌বান করলাম, আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ থেকে শুরু করে সবাই মাঠে নেমে পড়লেন। কৃষকের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলে দিলেন। আর যান্ত্রিকীকরণের জন্য হারভেস্টার থেকে শুরু করে সব ধরনের যন্ত্র আমরা ধীরে ধীরে কৃষকের হাতে পৌঁছে দেব। কৃষক লীগের নেতা-কর্মীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবাসহ সব ধরনের মৌলিক অধিকার পূরণের জন্য জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে। কৃষক রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদন করে। সেই খাদ্য খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি। কাজেই তাদের প্রতি আমাদের সব সময় সমর্থন রয়েছে এবং তাদের সহযোগিতা করা- এটা আমরা বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের কর্তব্য মনে করে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করল এবং এ দেশের কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করল এবং যাদের গুলিতে সার চাইতে গিয়ে ১৮ জন কৃষককে জীবন দিতে হলো- এ ধরনের ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, তখন থেকে কৃষকদের আর কোনো কষ্ট করতে হয়নি। কারণ আমরা তাদের প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। বর্গাচাষিরা যাতে বিনা জামানতে ঋণ পায়, কৃষিব্যাংকের মাধ্যমে তাদের বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সারের দাম যা বিএনপি সরকারের আমলে ৯০ টাকা ছিল, তা আজ ১২ টাকায় আমরা নামিয়ে এনেছি। তিনি বলেন, গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ আমরা উৎপাদন করছি এবং সেই বীজ আমরা সরবরাহ করছি। আমরা সেই সঙ্গে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ- যেটা জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল- আমরা সেই লক্ষ্য কার্যকর করে দিচ্ছি এবং সেখানে আমরা ৭০ ভাগ এর ওপর ভর্তুকি দিচ্ছি। আমরা উন্নতমানের বীজ সরবরাহ, প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। সেই সঙ্গে আমরা সেচ কাজে কৃষক যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, সেখানে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি এবং কৃষকের বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে নিশ্চিত হয় তার ব্যবস্থা নিয়েছি এবং বর্তমানে সেচ কাজে সোলার-প্যানেল ব্যবহারও শুরু করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ন্যায্যমূল্য যাতে আমাদের কৃষকরা পায়, তার জন্য যথাযথ দাম নির্দিষ্ট করছি এবং কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছি। প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে- কারণ যারা উৎপাদন করবে, তারা খাবার পাবে না বা তাদের ছেলে-মেয়েরা খাদ্যে কষ্ট পাবে, এটা হতে পারে না। আমরা সে ব্যবস্থাও সঙ্গে সঙ্গে হাতে নিয়েছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি এবং সেই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এবারও যেমন- ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তারাও সে ধরনের সহযোগিতা পাবে-তার জন্য একটা থোক বরাদ্দ আমরা রেখে দিচ্ছি। আমাদের দেশে উৎপাদন যাতে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হতে পারে- তার জন্য যথাযথ মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। কৃষক লীগ নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আজকের এই দিনে আমার দুঃখ একটাই- করোনাভাইরাসের কারণে আমি সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারলাম না। সবার সঙ্গে দেখাও হলো না। প্রতি বছর আমরা কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করি। তবে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, গার্গল করা, ভাপ নেওয়া, যেখানে বেশি জনসমাগম সেখানে না যাওয়া, দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং আমরা যে স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নির্দেশগুলো দিয়েছি- অবশ্যই সে নির্দেশনাগুলো মেনে নিয়ে নিজেকে আপনারা সুরক্ষিত রাখুন, অন্যকে সুরক্ষিত করুন এবং এই করোনাভাইরাসের হাত থেকে যেন দেশ ও জাতি মুক্তি পায়- তার জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে সবাই দোয়া করেন- বাংলাদেশ এই মহাদুর্যোগ থেকে যেন দ্রুত মুক্তি পেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কৃষক একটা মোবাইল ফোন ধরে ছবি তুলে তার ফসলের কী অবস্থা, মাটির কী অবস্থা বা মাটি পরীক্ষা করতে পারে। কী ধরনের সার ব্যবহার করবে, কতটুকু ব্যবহার করবে বা কীটনাশক ব্যবহার করবে কি না বা কতটুকু করবে সে তথ্যকেন্দ্রসমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। সেখান থেকে কৃষক তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর মোবাইল ফোনও আমরা সবার হাতে হাতে তুলে দিয়েছি।

সর্বশেষ খবর