বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচান হে আল্লাহ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচান হে আল্লাহ

হে আল্লাহ! করোনার দুর্দিনে আমরা একে একে সাতটি সিয়াম পালন করে এখন অষ্টম সিয়ামমুখে তোমার দুয়ারে এক ফোঁটা রহমতের আশায় হাত পেতেছি। হে আল্লাহ! তুমি দয়ার সাগর। আমাদের হাতগুলোকে খালি ফিরিয়ে দিও না। হে আল্লাহ! আজ দুটি বছর করোনাভাইরাসের সঙ্গে আমাদের বসবাস। বিস্তীর্ণ পৃথিবী আমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেছে। আমরা বিশ্বাস করি তুমি ছাড়া এ আজাব থেকে আমাদের কেউ বাঁচাতে পারবে না। হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় হাবিবের অসিলা দিয়ে দোয়া করছি, পৃথিবীকে আবার তুমি হাসি-আনন্দ দিয়ে ভরিয়ে দাও। করোনাভাইরাসমুক্ত পৃথিবী তুমি আমাদের দাও।

বেশি বেশি ইবাদতের মাস রমজান। রমজানে আল্লাহর রহমতের অফুরান ধারা এমনভাবে প্রবাহিত হয় যে বান্দার পাপসমূহকে খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে বান্দার কৃত গুনাহ জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়। বরকতময় এ মাসে মাবুদ সবার জন্য রহমতের দরজা উš§ুক্ত করে দেন। বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইসতিগফার ও আল্লাহর দরবারে বিনয়াবনত প্রার্থনা পেশের মাধ্যমে রহমত কামনার উত্তম মাস রমজান। নবী (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য। অর্থাৎ অন্য মাসে ফরজ ইবাদত করলে যে সওয়াব মেলে আল্লাহতায়ালা রমজানে নফল ইবাদতের মাধ্যমে বান্দাকে সে সওয়াব দান করেন।’ নফল ইবাদত হলো আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের বিশেষ মাধ্যম। কেউ যদি অফিসে ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ডিউটির পরও অতিরিক্ত সময় কাজ করে তাহলে সে যেমন ধীরে ধীরে অফিসে কর্তার বিশ্বস্ত ও আপন হয়ে ওঠে, তেমনি ফরজ ইবাদতের পর নফল ইবাদতে মনোনিবেশ করলে বান্দা ধীরে ধীরে মাওলার কাছের ও আপন হয়ে যায়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এ মাসে দয়াময় আল্লাহতায়ালা তোমাদের প্রতি শুভদৃষ্টি দেন এবং রহমত বর্ষণ করেন। তোমাদের সব গুনাহ মাফ করে দেন ও দোয়া কবুল করেন। তোমাদের মধ্যে যদি কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী অধিক সৎ কাজ করে শীর্ষস্থান অধিকার করতে পারে, আল্লাহ তার প্রতিদ্ব›িদ্বতা দেখতে থাকেন এবং এ নিয়ে বারবার ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন।’ নবী (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা অনেক বেশি সৎ কাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে নাও। আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে এ মাসে একমাত্র হতভাগ্যরাই বঞ্চিত থাকে।’ মিশকাত। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রমজানের পূর্ণ একটি মাস রোজা পালন করে, ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকে এমন রোজাদার ব্যক্তিরাই দুনিয়া ও আখিরাতে সফলকাম। বুদ্ধিমান ও জ্ঞানীরা এ সুবর্ণ সুযোগের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো অনুগ্রহ অবারিত করলে কেউ তা আটকে রাখতে পারে না এবং তিনি কিছু বন্ধ করতে চাইলে এরপর কেউ তা খোলার শক্তি রাখে না।’ সুরা আল ফাতির আয়াত ২।

রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মোমিন বান্দা আত্মিকভাবে নিজেকে একজন প্রকৃত মোমিন হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। তাই আল্লাহতায়ালা রমজানে তাঁর রহমতের দরজা অবারিত করে দেন। যারা অপরিণামদর্শী তারা এসবের খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে রোজা না রেখে অশালীনতা ও প্রকাশ্যে পানাহার করে বেড়ায়। এসব অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ এবং নিৃকষ্ট ভাগ্যের পরিচয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি প্রদত্ত অবকাশ ও অসুস্থতা ছাড়া রমজানের একটি দিনও রোজা ভঙ্গ করে, জীবনভর রোজা রাখলেও তার কাজা আদায় হবে না।’ তিরমিজি। যে রমজান মাসকে আল্লাহ এত অধিক মর্যাদাপূর্ণ, রহমত ও বরকতময় করেছেন সে মহান মাসের প্রতি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করা কি আমাদের উচিত নয়? আমাদের কি উচিত নয় এ মাসে অনেক বেশি ইবাদতে মগ্ন থাকা? এ মাসে অনেক বেশি সওয়াব কামানোর প্রচেষ্টা চালানো? লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি

পীর সাহেব, আউলিয়ানগর।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর