শিরোনাম
শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

দোয়া পাঠ ও প্রার্থনা

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

দোয়া পাঠ ও প্রার্থনা

মাহে রমজানের দ্বিতীয় দশক শুরু হলো। হাদিস শরিফে উল্লিখিত হয়েছে- ক্ষমা ও মার্জনা প্রার্থনার জন্য এই ১০ দিন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রসঙ্গত যে, মাহে রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং শেষ ১০ দিন নাজাতের অর্থাৎ দোজখের আগুন তথা যাবতীয় ঐহিক পারত্রিক দাবদাহ বা যন্ত্রণা হতে মুক্তি প্রার্থনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর বান্দার নিকট হতে প্রার্থনা বা মোনাজাত শোনা এবং কবুল করা পছন্দ করেন। আল-কোরআনের ষষ্ঠ সুরা আল আন আমের ৬৩-৬৪ আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে- ‘বলুন, কে তোমাদের ত্রাণ করেন যখন তোমরা স্থলভাগের ও সমুদ্রের বিপদে কাতরভাবে এবং গোপনে তাঁর নিকট অনুনয় কর এভাবে- আমাদের এই বিপদ হতে উদ্ধার করলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। বলুন আল্লাহই তোমাদেরকে বিপদ হতে ও সমস্ত দুঃখ-কষ্ট হতে পরিত্রাণ করেন। এতদসত্ত্বেও তোমরা তাঁর শরিক কর।’ বিপদে পড়লে মানুষ বিপদ হতে মুক্তির প্রার্থনা করে কাতর স্বরে, কিন্তু বিপদ হতে মুক্তিলাভের পর প্রায়শ সে ভুলেই যায় বিপদের কথা, বিপদ হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, বরং তার পরিবর্তে অন্য কারও সাহায্যের কথা কখনো সখনো স্মরণ করে থাকে। এটা চরম অকৃতজ্ঞতা এবং আল্লাহর সঙ্গে অপরকে শরিক করার মতো গর্হিত অপরাধ। বস্তুত যাবতীয় সাহায্য আসে আল্লাহর তরফ হতেই তিনি তার কোনো বান্দার অসিলায় বা মাধ্যমে তা সম্পাদন করান। গতবারের মতো এবারও করোনাকালে এ বিষয়টি সবার উপলব্ধির চৌহদ্দিতে আসছে।

মাগফিরাত কামনা প্রসঙ্গে কোরআনের উপদেশ স্মর্তব্য- ‘তোমরা বিনীতভাবে এবং গোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাক, তাকে ভয় ও আশার সঙ্গে ডাকবে’ সুরা আ’রাফ, আয়াত ৫৫-৫৬। ‘তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউ অব্যাহতি পেতে না এবং আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী ও প্রজ্ঞাময়।’ সুরা নূর, আয়াত ১০। বল, ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হইও না, আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ সুরা যুমার, আয়াত ৫৩। যাবতীয় অনুকম্পা ও নিয়ামতদানকারী আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছেই বিপদে আপদে অভাব অনটনে তাঁরই সাহায্য প্রার্থনা করার গুরুত্ব অপরিসীম। বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করে দোয়া করা, যা কবুল হওয়ার জন্য জরুরি শর্ত। প্রার্থনার ভাষাও সমস্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, পেশের ভঙ্গি আকুতি মিনতিও বিনয় ও নম্রতাসূচক হওয়া উচিত। দোয়া প্রার্থনা যাতে দোয়া পাঠে পরিণত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। কিছু নির্দিষ্ট বাক্য অর্থ না বুঝে মুখস্থ আওড়ানোর মধ্যে এবং ক্ষেত্রবিশেষে অন্যের পাঠ করা সেই দোয়া না বুঝে শুধু আমিন উচ্চারণের মধ্যে দোয়ার নিষ্প্রাণতা প্রকাশ পায়। বলার ভঙ্গিতে বিনয় ও নম্রতা ফুটে না উঠলে দোয়া অভিনয় ও দাবিতে পরিণত হতে পারে। মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে তাঁর বান্দা যে প্রার্থনা পেশ করবে তার বাণী ও বিষয় রহমানুর রহিম নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন আল কোরআনে। আল কোরআনে যেসব মোনাজাত বিভিন্ন ক্ষেত্র বা উপলক্ষে বিবৃত হয়েছে তার মধ্যে প্রার্থনার বিভিন্ন আঙ্গিক, ভাব ভাষা প্রকাশ পেয়েছে। আল কোরআনের উদ্বোধনী সুরা আল ফাতিহা সেরা মোনাজাতের মডেল। আর এ কারণে মিরাজুল মুমিনীন হিসেবে বিবেচিত নামাজের প্রতি রাকায়াতে এ সুরা পাঠ করতে হয়। আল কোরআনে সওগাত হিসেবে উল্লিখিত মোনাজাতসমূহের কয়েকটি- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তবে তুমি আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীগণের ওপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলে আমাদের ওপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না। হে আমাদের প্রতিপালক! এমন ভার আমাদের ওপর অর্পণ করো না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদেরকে ক্ষমা কর, আমাদের প্রতি দয়া কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে জয়যুক্ত কর।’ সুরা বাকারা, আয়াত ২৮৬। ‘হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে লও; যাকে ইচ্ছা তুমি পরাক্রমশালী কর, আর যাকে ইচ্ছা তুমি হীন কর। কল্যাণ তোমার হাতেই। তুমি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। তুমিই রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিণত কর; তুমিই মৃত হতে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটাও, আবার জীবন্ত থেকে মৃতের আবির্ভাব ঘটাও। তুমি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান কর।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত ২৬-২৭) ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের (পিতা-মাতার) প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’ সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৪। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমার জ্ঞানের বৃদ্ধি সাধন কর।’ সুরা ত্বাহা, আয়াত ১১৪। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান কর যারা আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর এবং আমাদের মুত্তাকিদের জন্য আদর্শস্বরূপ কর।’ সুরা ফুরকান, আয়াত ৭৪। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও, যাতে আমি তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি তুমি যে অনুগ্রহ করেছ, তার জন্য এবং যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর, আমার জন্য আমার সন্তান সন্ততিদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমারই অভিমুখী হলাম এবং আত্মসমর্পণ করলাম।’ সুরা আহকাফ, আয়াত ৪৬।

লেখক : সাবেক সচিব ও এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর