সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত

রাতে হঠাৎ ফেসবুক লাইভে বাবুনগরীর ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। সংগঠনের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে আহ্‌বায়ক কমিটির মাধ্যমে আবার হেফাজতে ইসলামের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।

জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক, দ্বীনি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের পরামর্শে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। ইনশা আল্লাহ, আগামীতে আহ্‌বায়ক কমিটির মাধ্যমে আবার হেফাজতে ইসলামের কার্যক্রম শুরু হবে। গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। সেই বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক বন্ধ করে দেন হেফাজতের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক ভাঙচুর করেন তারা। শতাধিক যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই সহিংসতায় প্রাণ হারান এক ডজনেরও বেশি মানুষ। সহিংসতার ঘটনায় বিভিন্ন জেলায় মামলা হয়। হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলায় ৬৯ হাজারের বেশি জনকে আসামি করা হয়। সেসব মামলায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ১৯ জন নেতা গ্রেফতার হন।

এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে ধরা পড়েন। ওই নারীকে স্ত্রী দাবি করলেও বিয়ের প্রমাণ হিসেবে কাবিননামা বা অন্যান্য প্রমাণ দেখাতে না পারায় নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়ে সংগঠনটি। এদিকে সহিংসতায় জড়িত হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে অব্যাহত রয়েছে পুলিশের অভিযান। এ পরিস্থিতিতে কওমি মাদরাসাকেন্দ্রিক সংগঠনটির কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দিলেন বাবুনগরী। এদিকে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা কিছু দিন ধরেই সমঝোতার চেষ্টা করছেন। তারা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকও করেছেন। গত সপ্তাহে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দলের নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার না করার অনুরোধ জানান। গত বৃহস্পতিবার হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী এক বিবৃতিতে দাবি করেন, আলেম-ওলামাদের গ্রেফতারের সময় ‘গণপ্রতিরোধ’ ও ‘প্রতিবাদ’ রুখতে লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। এতে জনগণের কষ্ট হচ্ছে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশের নিম্ন আয়ের গরিব মানুষকে আর হয়রানি ও কষ্ট না দিয়ে আমার কাছে তালিকাটা (হেফাজত কর্মীদের গ্রেফতারের জন্য কথিত তালিকা) পাঠান, আমি অভিযুক্ত সকলকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জেলে চলে যাব। একজন পুলিশও পাঠাতে হবে না। এর বিনিময়ে আপনারা লকডাউন তুলে নিন।’ আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে লকডাউন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। তার দুই দিন আগে কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিলেন হেফাজত নেতারা।

সর্বশেষ খবর