বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
চীন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফর

করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী চীন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী চীন

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে গতকাল বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফিংহে -পিআইডি

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীন বাংলাদেশকে সার্বিক সহযোগিতা করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ঢাকা সফররত চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফিংহে। গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে এ আগ্রহের কথা জানান চীনের মন্ত্রী। গতকাল সকালে এক দিনের সফরে ঢাকা এসে জেনারেল ওয়েই ফিংহে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় সফর শেষে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বেলা পৌনে ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফিংহে। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বিমানবন্দর থেকে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান ফিংহে এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় জেনারেল ওয়েই ফিংহের। সাক্ষাৎ শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতি করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে এ ব্যাপারে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সম্পর্কে গবেষণা ও উৎপাদনে যৌথ উদ্যোগ নিতেও আগ্রহী বাংলাদেশ। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, চীন বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। অবকাঠামো ও যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভিডিও বার্তার জন্য রাষ্ট্রপতি তাঁর ও বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে চীনের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক খুবই ভালো। এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আবদুল হামিদ আশা করেন, চীন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। তিনি বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে আগামী দিনে এ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতি চায়না কমিউনিস্ট পার্টির ১০০ বছর পূর্তিতে দেশটির রাষ্ট্রপতি ও জনগণকে অভিনন্দন জানান। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে কৌশলগত সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও চীন কাজ করে যাচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার উজ জামান, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) ওয়াহিদুল ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ :  চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফিংহে গতকাল সেনাবাহিনী সদর দফতরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তাঁরা পারস্পরিক কুশলাদি বিনিময় ছাড়াও দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক বজায় ও ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়ন, সামরিক প্রশিক্ষণ বিনিময়, সশস্ত্র বাহিনী পর্যায়ে নিয়মিত মতবিনিময় অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করার পাশাপাশি কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় চীনের সহযোগিতার বিষয়ে ধন্যবাদ দেন। আইএসপিআর জানায়, আলোচনাকালে সেনাপ্রধান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির আলোকে ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ সবার সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সদা বদ্ধপরিকর। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশ-চীনের সুসম্পর্কে গভীরতা ও ব্যাপ্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এ সম্পর্ককে আরও উচ্চতর স্তরে নিয়ে যেতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশের ভিশন-২০৪১ অর্জনে চীনের সহযোগিতার নিশ্চয়তা প্রদান করেন। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যৌথ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা বৃদ্ধির গুরুত্বারোপ করেন।

চলমান কভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে চীনের অভিজ্ঞতা বিনিময়  ও সহায়তার প্রস্তাব করেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের আকাক্সক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা বলেন। তিনি পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে যথাসম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যাবর্তন কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন এবং এক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতার নিশ্চয় তা প্রদান করেন।

সর্বশেষ খবর