বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
লিগ্যাল এইড দিবস আজ

এক যুগে বিনা খরচে আইনি সেবা পেয়েছে ৬ লাখ মানুষ

আরাফাত মুন্না

কয়েক বছর আগে কুড়িগ্রামের কৃষ্ণপুর পাইকপাড়া গ্রামের রেশমা বেগম স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। তার ছেলের বয়স তখন পাঁচ। যৌতুক না পেয়ে স্বামী সাইদুল পরে তাকে তালাক দেন। এ অবস্থায় এক আত্মীয়ের কাছে রেশমা জানতে পারেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের কথা। তিনি সেখানে গিয়ে আইনগত সাহায্যের আবেদন করেন। জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা রেশমার পক্ষে মামলা লড়তে ওই বছরই আইনজীবী নিয়োগ দেন, শুরু হয় কার্যক্রম। পারিবারিক এই মামলায় রেশমার পক্ষে রায় হয়।

শুধু এ মামলা নয়, এভাবেই গত এক যুগে বিনা খরচে আইনি সেবা নিয়েছে ৬ লাখের বেশি মানুষ। পাশাপাশি মামলা না করে, শুধু বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে সংস্থাটি ৫৭ কোটি টাকার বেশি আদায় করে দিয়েছে ভুক্তভোগীদের। দরিদ্র ও অসচ্ছল বিচার প্রার্থীদের বিনা খরচে আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (লিগ্যাল এইড) কর্মীরা। বিচারিক আদালতে আইনজীবী নিয়োগ করে মামলা পরিচালনা, প্রয়োজনে উচ্চ আদালতেও সংস্থার প্যানেল আইনজীবীদের মাধ্যমে অসচ্ছলদের মামলা লড়ছে সংস্থাটি। অনেক সময় মামলা না করেও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে লিগ্যাল এইড অফিসগুলোতে। শ্রম আদালতে শ্রমিকদের পক্ষে মামলা লড়তেও সহায়তা  দেয় সরকারের এ সংস্থা। বর্তমানে করোনাভাইরাসের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গরিব ও অসহায়দের জন্য কাজ করছেন লিগ্যাল এইড কর্মীরা। বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দিয়ে শহর থেকে গ্রামের তৃণমূল, অসহায় ও গরিব মানুষের দুঃখ-দুর্দশা মুছে দেওয়ার সেবায় নিয়োজিত তারা।

আজ ২৮ এপ্রিল। জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস। ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে শেখ হাসিনার সরকার।’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে দিবসটি পালন করা হচ্ছে জাতীয়ভাবে। করোনাভাইরাসজনিত রোগ কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছর সীমিত পরিসরে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বাণী দিয়েছেন।

জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম স্বপ্ন ছিল সবার জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সুবিচার নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০০ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের আওতায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে ২০০১ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে থমকে যায় এই কার্যক্রম। আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে আবার এ কার্যক্রম শুরু হয়। সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে এই সেবা পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান মন্ত্রী।

জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে বিনামূল্যে অসহায়দের আইনি সেবা দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সরকারি আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (লিগ্যাল এইড)। রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার অফিসসহ ৬৪টি জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বিনামূল্যে আইনি সহায়তা নিতে প্রতিদিন জাতীয় হেল্প লাইন কলসেন্টারের ‘১৬৪৩০’ নম্বরে বা সরাসরি যোগাযোগ করছেন বিচারপ্রার্থীরা। অনেক অসহায় নারীই পুনর্বাসিত হয়ে ফিরে পেয়েছেন দাম্পত্য জীবন ও সংসার। লিগ্যাল এইড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ বছরে ৬ লাখ ৭ হাজার ৮৮০ জন দরিদ্র-অসচ্ছল মানুষকে বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা দিয়েছে সরকার। ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে এ সহায়তা দেওয়া হয়। একই সময়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে সাড়ে ৫৭ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ২৬৮ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে এ সংস্থা। পাশাপাশি আর্থিকভাবে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে অসচ্ছল প্রায় ১ লাখ কারাবন্দীকে। একই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১০টি লিগ্যাল এইড মামলা। করোনাকালে গত ১ বছরে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস ২ হাজার ৪৬টি এবং শ্রমিক আইন সহায়তা সেল থেকে ৩০০ মামলা নিষ্পত্তি করেছে। ফৌজদারি মামলায় কারাগারে আটক ব্যক্তি, আইনজীবী নিয়োগে অসমর্থ ও নির্যাতিতরা বিনামূল্যে এ সহায়তা পেয়ে থাকেন।

সংস্থা সূত্র জানায়, মুজিববর্ষে গত এক বছরে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে ২২ হাজার ৯৬৬ জনকে। এ সময়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা অসচ্ছল দরিদ্র মানুষকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেওয়া হয়। নিষ্পত্তি করা হয় ৪ হাজার মামলা। তবে ৬৪ জেলার মধ্যে বর্তমানে ১৩টি জেলায় লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা নেই। দ্রুত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলে এসব জেলায়ও বিনামূল্যে আইনি সেবা আরও বাড়বে।

জানতে চাইলে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ১২ বছরে আমরা ৬ লাখের বেশি মানুষকে সেবা দিতে পেরেছি, এটা বর্তমান সরকারের একটি বড় অর্জন। করোনা মহামারীতেও অসহায় মানুষকে অনলাইনে আইনি সেবা দেওয়া হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন কলসেন্টার খোলা রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর