শনিবার, ১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা
মহান মে দিবস আজ

মহামারীর খড়গে দিশাহারা শ্রমিক

কাজ হারিয়ে বিপদে আছেন পোশাক, প্রবাসী, পরিবহন, গৃহকর্মীসহ বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকরা

জিন্নাতুন নূর

মহামারীর খড়গে দিশাহারা শ্রমিক

মহামারী করোনাভাইরাসের খড়গ পড়েছে শ্রমজীবীদের ওপর। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই দুঃসময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত  শ্রমিকরা। একদিকে জীবনের ভয় অপরদিকে জীবিকার তাগিদ। মরণঘাতী ভাইরাসকে তুচ্ছ করে মাঠে নামলেও নেই কাজের সুযোগ। ফলে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে শ্রমিক পরিবারগুলোকে। একমুঠো খাবারের জন্য তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে দান-অনুদানের দিকে। আধুনিক এই যুগে এতটা দুর্বিষহ পরিস্থিতি আগে কখনো দেখতে হয়নি দেশ-বিদেশে থাকা শ্রমিকদের। এমন পরিস্থিতিতেই আজ এসেছে শ্রম অধিকারের স্মারক ‘মহান মে দিবস’। এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য : ‘মালিক শ্রমিক নির্বিশেষ, মুজিববর্ষে গড়বো দেশ।’

মহামারী শুরুর পর পোশাক খাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকরা একের পর এক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে দেশের সবচেয়ে বেশি শ্রমবহুল তৈরি পোশাক খাতেই ৩ লাখ ৫৭ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাপডন ইন বাংলাদেশের সমীক্ষায় এমনটিই বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, কর্মী ছাঁটাই ও কারখানা বন্ধের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই নিয়ম মানেনি। ইউএনডিপির আরেক গবেষণা থেকে জানা যায়, মহামারী শুরুর পর গত বছর দেশের ৩৫ শতাংশ তৈরি পোশাক শ্রমিকের বেতন কমে যায়। শ্রমিক নেতারা জানান, গত বছর সাধারণ ছুটির সময় শ্রমিকদের বেতন কাটা হয়েছে, তাদের বোনাস থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সাধারণ মানুষ লকডাউনে বাড়িতে অবস্থান করলেও শ্রমিকদের কারখানায় কাজ করতে হচ্ছে। গণপরিবহন না থাকায় পায়ে হেঁটে তাদের কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। টিআইবির আরেক গবেষণা থেকে জানা যায়, মহামারীতে দেশের ৭৭ ভাগ শ্রমিকের পক্ষে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা করা সম্ভব হয়নি। মহামারীতে বিপদে পড়েছে হোটেল-রেস্টুরেন্টে কর্মরত শ্রমিকরাও। এ সময় বকেয়া মজুরি না দিয়েই চাকরি থেকে শ্রমিকদের হোটেল মালিকরা বের করে দিয়েছেন বলে শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করেন। এ ছাড়াও করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই বাসাবাড়িতে কর্মরত গৃহকর্মীদেরও কাজ থেকে ছাঁটাই করা হয়। কাজ ফিরে না পেয়ে এদের কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেছেন। সিপিডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারী নিম্নআয়ের নারীদের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়াও লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিপদে পড়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। কারণ, চাকা না ঘুরলে এই শ্রমিকদের আয়ও বন্ধ থাকে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, ত্রাণ না পেয়ে শ্রমিকরা অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়েই সড়কে নামেন। কারণ, গাড়ি না চললে এই শ্রমিকদের সংসারও চলবে না। নেতৃবৃন্দের দেওয়া তথ্যে, প্রতিদিন যাত্রী পরিবহনের কাজে ৫০ লাখ পরিবহন শ্রমিক অংশ নেন। আর গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিক এখন কর্মহীন রয়েছেন। করোনার আঘাতে বিপদে পড়েছে প্রবাসী শ্রমিক তথা রেমিট্যান্স যোদ্ধারাও। করোনা মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ কঠোর লকডাউনে চলে যাওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকায় কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন লাখ লাখ অভিবাসী। বৈধ কাগজ না থাকায় এবং মেয়াদ ফুরিয়ে আসায় অনেককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কাজ হারিয়ে এরই মধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন বহু শ্রমিক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর