শনিবার, ১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

যাদের ঘামে শ্রমে দেশ সমৃদ্ধ, রাষ্ট্র তাদের পাশে নেই

মাহমুদ আজহার

যাদের ঘামে শ্রমে দেশ সমৃদ্ধ, রাষ্ট্র তাদের পাশে নেই

নজরুল ইসলাম খান

জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ। তাদের মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরের শ্রমিকরা। যাদের ঘামে-শ্রমে দেশ সমৃদ্ধ হয়, তাদের পাশে রাষ্ট্রের থাকা উচিত; কিন্তু রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে গতকাল মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সরকারি কর্মচারীরা তো কাজ চলুক আর না চলুক বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু অধিকাংশ প্রাইভেট সেক্টরে তো কাজ না চললে বেতনও হয় না। যারা রিকশাচালক, দোকান কর্মচারী, হকার, কুলি, মজুর- তাদের কাজ না থাকলে উপার্জনও থাকে না। দুঃসময়ে এসব শ্রমিকের দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেওয়ার কথা। কিন্তু রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। গত বছর আমরা শুনেছি, নিম্নআয়ের মানুষকে আড়াই হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ এই টাকা পাননি। একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কিছু লোক এই টাকা পেয়েছে। এবারও নাকি শ্রমজীবীদের কিছু নগদ টাকা দেওয়া হবে। এটা আদৌ তারা পাবে কি না জানি না। 

শ্রমিক নেতা ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম খান বলেন, ভিজিএফ বা অন্যান্য কার্ডও শ্রমজীবী মানুষ পায় না। এটা সাধারণত বিধবা, স্বামী-পরিত্যক্তা, বয়োবৃদ্ধ মানুষ বা প্রতিবন্ধীরা পেয়ে থাকেন। যারা শহরে-বন্দরে ভাসমান শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন, তারা এখন গ্রামের বাড়ি ফিরে গেছেন। তাদের কোনো তালিকাও নেই। প্রাইভেট সেক্টরে বিশেষ করে অনেক কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় মজুরি অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় মজুরি যথাসময়ে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ তাদের খাওয়া-পরা থেমে নেই। অসুস্থ হলে তাদের খরচ আরও বাড়ে। আসলে এ ধরনের দুস্থ শ্রমজীবী মানুষের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানো রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু এই রাষ্ট্র যথাযথভাবে সেই দায়িত্ব পালন করছে না।

তিনি বলেন, নিম্নআয়ের শ্রমজীবীদের ডাটাবেজ তৈরি করে তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। শ্রমিকদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। যাতে তারা যেখানেই যায়, রেশনিংয়ের সুযোগ পায়। যারা ছোট ছোট কল-কারখানা বা দোকানে কাজ করে তাদের কোনো পরিচয়পত্র নেই। তাদের চাকরির কোনো নিয়োগপত্র নেই। লাখ লাখ গৃহশ্রমিক চাকরিহারা। নির্মাণ শ্রমিক, হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, হকার, রিকশাচালক শ্রেণি আজ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের পাশে সবাইকে দাঁড়ানো উচিত।

দুঃখ প্রকাশ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজ আমাদের দেশে ট্রেড ইউনিয়ন বিভক্ত ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ কারণে তারা যে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে তাও হচ্ছে না। অন্যদিকে মালিকরা ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছেন। তারা এখন মন্ত্রী-এমপি হয়ে বসে আছেন। এসব লোক দিয়ে শ্রমজীবীদের পক্ষে বা শোষিতদের দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। ওই মন্ত্রী-এমপিরা শুধু মালিকদের স্বার্থই দেখবেন।

শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, এবার মে দিবসের মূল বিষয় হওয়া উচিত- নিম্নআয়ের শ্রমজীবী, কর্মজীবীদের দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্বও রাষ্ট্রের। আমাদের সংবিধানেও এই অধিকারের কথা বলা আছে। কিন্তু সরকার বা রাষ্ট্র সেই দায়িত্ব পালন করছে না।

সর্বশেষ খবর