মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

রমজানের শেষ দশকের গুরুত্ব

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

রমজানের শেষ দশকের গুরুত্ব

সময়ের চাকা ঘুরে এখন রমজানের শেষ দশক চলছে। এ সময়ে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের জন্য মুমিনের হৃদয় ব্যাকুল হয়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করতে থাকে। কারণ, রমজান পেয়েও ক্ষমা না পাওয়া সত্যি হতভাগা হওয়া। এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রিয়নবী হজরত রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে রমজান মাস পেয়েও নিজেকে পাপমুক্ত করতে পারল না, সে ধ্বংসপ্রাপ্ত’ (মুসনাদে বাজজার, হাদিস ৪২৭৭)। রমজানের শেষ দশক বান্দাদের জন্য বিশেষ এক নেয়ামত। আল্লাহর গুনাহগার বান্দাদের জন্য অসাধারণ এক পুরস্কার। বান্দাদের গুনাহ মাফ করতে আল্লাহতায়ালা শুধু বাহানা খোঁজেন। কীভাবে বান্দাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিতে পারেন। রমজানের শেষ দশক যেন এ রমজানের পরিশিষ্ট।

শেষ দশকের গুরুত্ব উপলব্ধির জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এটিই হচ্ছে সুন্নত ইতিকাফের সময়। এ ইতিকাফের গুরুত্ব অনেক। মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজীবন ইতিকাফ করে গেছেন। আবার লায়লাতুল কদর পাওয়ারও প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে এ শেষ দশকে। যে রাতের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য বলে শেষ করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ (সুরা কদর-৩)।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় লায়লাতুল কদরে জাগরণ করে তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়, সুবহানাল্লাহ (সহিহ বুখারি, হাদিস ২০১৪)। অন্যত্র আছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সে যেন সবকল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হয় (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৬৪৪)। এজন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশককে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করতেন। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে সবচেয়ে বেশি মেহনত করতেন (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৭৫)। তিনি আরও বলেন, শেষ দশক শুরু হলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা রাত  জাগ্রত থেকে ইবাদত করতেন। পরিবারের লোকদেরও জাগ্রত রেখে ইবাদত করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি নিজেও অনেক মেহনত করতেন। এমনকি কোমর বেঁধে নিতেন (ইবাদত করার জন্য)। (সহিহ বুখারি, হাদিস ২০২৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৭৪)।  তাই আমাদের সবার উচিত রমজানের এই শেষ দশককে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া। এজন্য প্রথম চেষ্টা হবে, শেষ দশকের ইতিকাফ। অথবা কমপক্ষে অধিকাংশ সময় মসজিদে ও ইবাদতে কাটানো। এরপর লায়লাতুল কদর লাভের জন্য পূর্ণ প্রস্তুত থাকা এবং এর খোঁজে নিজেকে পূর্ণ সচেষ্ট রাখা। নফল নামাজ, দুয়া, জিকির, ইস্তিগফার, কোরআন তিলাওয়াত ও দরুদ শরিফ ইত্যাদি আমলে বেশি বেশি সময় কাটানো। যেন শবেকদরের বরকত হাসিল হয় এবং রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মতো বড় নেয়ামত লাভ করা যায়।  আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুক। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতিব ও টিভির ইসলামী প্রোগ্রাম উপস্থাপক।

সর্বশেষ খবর