মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় পশ্চিমবঙ্গে নিহত ৬

কলকাতা প্রতিনিধি

ভোটের ফল প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই রবিবার রাত থেকেই জেলায় জেলায় শুরু হয় রাজনৈতিক সহিংসতা। কলকাতার কাঁকুরগাছি এলাকায় এক বিজেপি কর্মীকে পাথর মেরে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। নিহত ব্যক্তির নাম অভিজিৎ সরকার। বিজেপির তরফ থেকে দাবি করা হয় ওই ব্যক্তি তাদের দলের কর্মী। হামলার আগে ওই বিজেপি কর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন। পরিবারের দাবি, পুলিশের চোখের সামনেই পিটিয়ে মারা হয় তাকে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতাপনগরে রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হন এক বিজেপি কর্মী। হারান অধিকারীকে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার বাড়ির সামনে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে সেখানে প্রচন্ড মারধর করা হয়। এর পরই গুরুতর জখম হয়ে পড়েন। পরে তাকে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাকে মৃত ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তৃণমূলের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা পার্থ গাঙ্গুলি। ফল প্রকাশের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নদীয়া জেলার গাংনাপুর। গাংনাপুর থানার দেবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের বিবেকানন্দ পল্লীর বাসিন্দা উত্তম ঘোষ নামে এক বিজেপি কর্মীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। পেশায় কৃষক উত্তম সাম্প্রতিক নির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারীর হয়ে কাজ করেছিলেন। গতকাল মুকুটমণি জেতার পরই উত্তমের ওপর হামলা চালানো হয়। লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তার বাড়িতে চড়াও হয়, প্রাণ বাঁচাতে একটি বাড়িতে ঢুকে গেলে সে বাড়িও ভাঙচুর করা হয় এবং তাকে টেনে বের করে পিটিয়ে খুন করা হয়। ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। ভোট-পরবর্তী সহিংসতা হয় উত্তর চব্বিশ পরগনার একাধিক এলাকায়ও। গতকাল সকালে কদম্বগাছির উলা গ্রামে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) কর্মী হাসানুর রহমানের ওপর বোমা ছোড়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ৪০ বছর বয়সী হাসানুরকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি বোমা ছোড়া হয়, একটি বোমা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও দুটি তার শরীরে আঘাত করে, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। এ ঘটনায় সকাল থেকে চাপা উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। ১০ এপ্রিল চতুর্থ দফার ভোটে কোচবিহারের শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান অন্তত চারজন। ফল গণনার পরও গতকাল শীতলকুচি বিধানসভার বুড়াপঞ্চার হাট এলাকায় দুই পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। তার মাঝে পড়েই গুলিবিদ্ধ হন মানিক মৈত্র নামে এক যুবক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয়। যদিও কার গুলিতে তার প্রাণ গেছে তা এখনো পরিষ্কার নয়। জানা গেছে, রবিবার রাত থেকেই শীতলকুচির ছোট শালবাড়ী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়িঘর ভাঙচুর হয়। ওই পরিস্থিতি দেখতেই সেখানে যান আর ভিড়ের মধ্যে থেকে গুলি ছুটে এসে লাগে মানিকের পেটে। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই অশান্তি পূর্ব বর্ধমান জেলায়ও। রবিবার রাতে সমসপুর গ্রামে গণেশ মালিক নামে এক ব্যক্তিকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। জানা গেছে তৃণমূল-বিজেপি উভয় দলের সংঘর্ষের সময় ৬০ বছর বয়সী গণেশকে বাঁশ দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই মৃত্যু হয় তার। নিহতের পরিবারের দাবি, গণেশ তৃণমূল সমর্থক। এ ঘটনায় বিজেপির দিকে অভিযোগ উঠলেও তা অস্বীকার করেছে। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলারই মল্লিকপাড়ায় বিজেপি কর্মী বিশ্বনাথ ধরের বাড়িতে ঢুকে তৃণমূলের লোকজন ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ। বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে ঘরের আলমারি ভেঙে রুপি, গয়না নিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ওই জেলারই অশোকনগর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির শক্তি কেন্দ্র প্রমুখ সৌমেন দের বাড়িতে বোমা মারার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ভাঙচুর করা হয় তার সোনার দোকানটিও। হাওড়ার বালির ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির বুথ সভাপতির বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। দুর্গাপুর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ধোবিঘাট এলাকায় বিজেপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামেও বিজেপি অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আগুন লাগানো হয়েছে নন্দীগ্রামের টাউন ক্লাবেও। নন্দীগ্রাম বাজারের হাসপাতাল মোড়েও একাধিক ঘরবাড়ি, দোকানে লুটপাট চালানো হয়। অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূলের। আসানসোলের জামুড়িয়া বাজার এলাকায় তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে বিজেপি কর্মীর বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। হুগলির আরামবাগ মহকুমার একাধিক এলাকাও রবিবার রাত থেকে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি একাধিক দোকানে ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর রবিবার রাত ১১টা নাগাদ মুর্শিদাবাদের কান্দি বাঘডাঙ্গায় কান্দি টাউন বিজেপি সভাপতি বিনিতা রায়ের বাড়িতে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার বাড়ি লক্ষ্য করে দুটি বোমা ছোড়া হয়। রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ। অভিযোগ অস্বীকার কান্দির তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব সরকারের।

সর্বশেষ খবর