বুধবার, ৫ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নিজ খরচে চলতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নিজ খরচে চলতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

জীবাণুর ‘ওষুধ প্রতিরোধী’ হয়ে ওঠা ভবিষ্যতে কভিড-১৯ মহামারীর চেয়েও বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর হতে পারে বলে বিশ্বনেতাদের সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি এই জীবাণুর ‘ওষুধ প্রতিরোধী’ হয়ে ওঠা (অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স)-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাতটি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্‌বান জানিয়েছেন।

গতকাল সন্ধ্যায় ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (জিএলজি-এএমআর) শীর্ষক সম্মেলনে ভিডিও বার্তায় তিনি এ আহ্‌বান জানান।

এদিকে গতকাল সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র মালিকানাধীন সব লিমিটেড কোম্পানিকে ‘নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর’ নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানিয়েছেন। জিএলজি-এএমআর সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর মতো জনস্বাস্থ্য সংকট এরই মধ্যে তিন মিলিয়নের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তবে জীবাণুর ‘ওষুধ প্রতিরোধী’ হয়ে ওঠা অর্থাৎ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) এর আকারে আসন্ন মহামারী বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য আরও বেশি ভয়ানক ক্ষতি করবে। এটি কেবল মানব জাতি, প্রাণী এবং উদ্ভিদ স্বাস্থ্যকেই বিপন্ন করবে তা নয়, এটি খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে হুমকি হবে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সাতটি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্‌বান জানিয়েছেন তা হলো-

১. এআরসি’র লক্ষ্য অর্জনের লক্ষ্যে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, ব্যাপক মনিটরিং এবং প্রতিবেদন তৈরির ব্যবস্থা করা। ২. অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল-এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন স্তরে গাইডলাইন এবং নীতিমালা উন্নত করা। ৩. কার্যকর ও ব্যাপক এএমআর নজরদারি এবং সক্ষমতা তৈরি নিশ্চিত করতে পরস্পরের মধ্যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং কারিগরি সহায়তা বিনিময় করা। ৪. প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং মালিকানা ভাগাভাগির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যের ও কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্য মেডিকেল সুবিধাগুলো সবার জন্য নিশ্চিত করা। ৫. স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে এএমআর-নির্দিষ্ট এবং এএমআর-সংবেদনশীল কাজের জন্য পর্যাপ্ত এবং টেকসই অর্থায়ন করা। ৬. সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে এএমআর প্রতিরোধে বিনিয়োগ করা। ৭. সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক, সাশ্রয়ী এবং টেকসই সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স-এর হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্ব নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্‌বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অ্যান্টি ড্রাগ রেজিট্যান্স ভৌগোলিক অবস্থা এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে সবাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

খাল খননের নামে কী হয় জানি, সাবধান : একনেক সভায় গতকাল পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো : ১ হাজার ১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা খরচে ‘চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ’ প্রকল্প এবং ১ হাজার ৪৫২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা খরচে ‘তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্প।

সভায় প্রকল্প দুটির বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে খাল খননের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের সাবধান হতে বলেছেন। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে খাল খনন প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সাবধান! খাল খননের নামে যেসব কান্ড হয়! এটা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) জানেন। আমরাও সবাই মোটামুটি জানি।’ একনেকে প্রধানমন্ত্রী আরও কিছু অনুশাসন তুলে ধরেছেন। তার একটি হলো- সরকারি সংস্থাগুলোকে নিজেদের খরচে চলতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি সংস্থা, যেগুলো ব্যবসার জন্য স্থাপিত হয়েছে, যেমন বিটিসিএল, বীমা, ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স এগুলো তো নামেই কোম্পানি। তারা যেন নিজেরা নিজেদের খরচ চালাতে পারে। আমরা কতদিন এখান (সরকারি কোষাগার) থেকে টাকা দিয়ে দিয়ে তাদেরকে চালাব। এটা ইকোনমিক্যালি (অর্থনৈতিকভাবে) গ্রহণযোগ্য নয়। এটা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আবার মূল্যায়ন করেছেন।’ একনেক সভায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন’ প্রকল্পের সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ১ হাজার ৩৬৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে ১৯৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা খরচ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কাজ শেষ করার জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলছে এটা, তাড়াতাড়ি শেষ করুন। আর কত দিন নেবেন?’

উপজেলা পর্যায়ে যেসব স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে, তা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল নামে যে স্টেডিয়ামগুলো করা হবে, সেখানে তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন, সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। নো রিজার্ভ। কোনো ক্লাবের বা ব্যক্তির আওতায় থাকবে না। ইউএনওরা দেখভাল করতে পারবে। কিন্তু সবাই খেলার অধিকার পাবে। সেটা উন্মুক্ত রাখতে হবে এবং বসার জায়গাও রাখতে হবে। এভাবে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চাচ্ছেন।’

একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১১ হাজার ৯০১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ের ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৮ হাজার ৯৯১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ২ হাজার ৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৮০৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্প; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘সাইনবোর্ড-মোরলগঞ্জ-রায়েন্দা-শরণখোলা-বগী সড়কের (আর-৭৭৩) ১৭তম কিলোমিটারে পানগুচি নদীর ওপর পানগুচি সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম (দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্প; সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ‘গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের বহুতল ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন (প্রথম সংশোধধিত)’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘রাঙামাটি জেলার কারিগর পাড়া থেকে বিলাইছড়ি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ও ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণ’ প্রকল্প ও ‘কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ’ প্রকল্প ও ‘তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘বাপবিবোর বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ)’ প্রকল্প।

সর্বশেষ খবর