বুধবার, ৫ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

মামুনুল পাঁচ ও জুনায়েদ চার দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক

পল্টন থানার নাশকতার দুই মামলায় হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। অন্যদিকে একই থানার পৃথক তিন মামলায় হেফাজত নেতা মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবেরও আরও চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদারের আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেয়।

এর আগে দুই দফায় ১৪ দিনের রিমান্ড শেষে মামুনুল হককে আদালতে হাজির করে ১৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। মামুনুল হকের পক্ষে তার আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রিমান্ডের আদেশ দেয়। গত ১৮ এপ্রিল দুপুরে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ১৯ এপ্রিল ভাঙচুরের মামলায় মাওলানা মামুনুল হকের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এরপর ২৬ এপ্রিল ২০১৩ সালে হেফাজতের তান্ডবের ঘটনায় পল্টন থানার মামলায় চার দিন এবং মোদিবিরোধী সহিংসতার ঘটনায় মতিঝিল থানার মামলায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এদিকে ২০১৩ সালে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের তান্ডবের ঘটনায় পল্টন থানায় দায়ের করা এক মামলায় পুলিশ মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবের গ্রেফতার দেখানোর আবেদনসহ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। এ ছাড়া গত মার্চ মাসে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় পল্টন থানার আরও দুই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদনসহ সাত দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আসামির পক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন। গত ১৭ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ দল জুনায়েদ আল হাবীবকে গ্রেফতার করে। এরপর কয়েকদফা তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবদুর রহিম কাসেমীসহ আরও সাতজন গ্রেফতার : ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, হেফাজতে ইসলামের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুফতি আবদুর রহিম কাসেমী। গতকাল বিকাল ৪টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ভাদুঘর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে আসছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ। পুলিশ জানায়, ২০১৬ সালেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তান্ডবের সঙ্গে কাসেমী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। গত ২৩ এপ্রিল দল থেকে পদত্যাগ করেন মুফতি আবদুর রহিম কাসেমী। পদত্যাগের কারণ হিসেবে তিনি দলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে তাকে না ডাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তান্ডবের কথা উল্লেখ করেন। গ্রেফতার এড়াতে মুফতি আবদুর রহিম কাসেমী দল থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে ওই সময় সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের কর্মসূচি চলাকালে শহরজুড়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কওমি ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা বেলাল হোসেনসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত সোমবার রাতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এনিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তান্ডবের ঘটনায় মোট ৪১৫ জনকে গ্রেফতার করা হলো।

জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির এজাহার : এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি মাওলানা মেহেদী হাসান ও সহ-সাধারণ সম্পাদক মুফতি আমজাদ হোসাইন আশরাফীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আবেদন করা হয়েছে। মামলাটি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নথিভুক্ত হয়নি। গত সোমবার রাতে সদর মডেল থানায় মামলার আবেদন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল। এই মামলার এজাহারে মাওলানা মেহেদী ও মুফতি আমজাদ ছাড়াও সানাউল হক চৌধুরী নামের আরেকজনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, মেহেদী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসায় হামলাকারী উল্লেখ করে ফাঁসি দাবি করেন। মেহেদীর ওই স্ট্যাটাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর অভিপ্রায়ে বাকি দুই আসামি প্রচার করেন। উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাদরাসাছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার খবরে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদরাসার ছাত্র ও হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক তান্ডব চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর