শিরোনাম
শনিবার, ৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

মাহে রমজান ও গুনাহমুক্ত জীবন

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

মাহে রমজান ও গুনাহমুক্ত জীবন

আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহতায়ালার মেহেরবানিতে রমজানের রহমত ও মাগফিরাতের রোজাগুলো রেখে এখন নাজাতের রোজাগুলো পালন করছি। এভাবে দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছে মানবকল্যাণ, গুনাহ মুক্তি ও তাকওয়া অর্জনের মাস মাহে রমজান। রমজান উপলক্ষে আকাশের বিশেষ দরজাসমূহ খোলা থাকে, তা রমজানের পর বন্ধ হয়ে যাবে। হজরত রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রমজান মাস শুরু হলেই রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১০৭৯/২)। রমজানের পর খুলে দেওয়া হবে জাহান্নামের দরজা। শুরু হয়ে যাবে জাহান্নামবাসীদের আজাব। পুনরায় শিকলমুক্ত করা হবে শয়তানকে। এক হাদিসে এ বিষয়ে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যখন রমজান মাসের শুভাগমন হয়, জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ৩২৭৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস ১০৭৯/১)। এই মাসটি এত বরকতময় যে, সব সময় শান্তির সুবাতাস বইতে থাকে। রহমতের বারিধারা বর্ষিত হতে থাকে, যা রোজাদারের কাছে গোপন নয়। আবার দীর্ঘ ১১টি মাস ঘুরে পুনরায় আগমন ঘটবে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এই পবিত্র মাসের। সিয়াম-সাধনার মাধ্যমে নিজেকে যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির একটি বরকতময় মাস। সুতরাং বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি, আল্লাহর আনুগত্য ও তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে মুক্তির সনদ লাভ করার এটিই সুবর্ণ সুযোগ। হাদিস শরিফে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ২২২০২)। সুতরাং যে ব্যক্তি এই পবিত্র সুযোগ পেয়েও স্বীয় গুনাহ ক্ষমা করাতে পারল না, তার জন্য স্বয়ং জিবরাইল (আ.) বদ দোয়া করেছেন এবং নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাহমাতুল্লিল আলামিন হয়েও আমিন বলে সমর্থন জানিয়েছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘একবার নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে উঠে আমিন, আমিন, আমিন বললেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, জিবরাইল (আ.) আমাকে বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে পিতা-মাতা উভয়কে অথবা তাদের একজনকে পেয়েও (তাদের খেদমত করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। তখন আমি বললাম, আমিন। অতঃপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে রমজান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম, আমিন। জিবরাইল আবার বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার নিকট আপনার নাম আলোচিত হলো, অথচ সে আপনার ওপর দরুদ পড়ল না। আমি বললাম, আমিন’ (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস ৬৪৬; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৯০৮)। সমাজের অনেককে দেখা যায়, তারা রমজানের রোজা রাখে আবার সব অন্যায় অপকর্মে লিপ্ত থাকে। মিথ্যা কথা বলে, অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে, ওজনে কম দেয়, খাদ্যে ভেজাল দেয়, খাদ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অধিক মুনাফা করে। এই রোজা তার কী কাজে আসবে? বিষয়টি একটু চিন্তা করে দেখি। রোজাসহ সব ইবাদত করতে হবে একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য, তখন সে রোজা রেখে অন্যায় ও সব গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকবে। মহান রব্বুল আলামিনের কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের সব ধরনের গুনাহমুক্ত জীবন গঠন করার এবং রমজানের পরিপূর্ণ হক আদায় করে বাকি রোজাগুলো রাখার তৌফিক দান করেন। আমিন!

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতিব ও টিভির ইসলামী প্রোগ্রাম উপস্থাপক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর