শনিবার, ৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শেষ দিনে কাদের নিয়োগ দিলেন উপাচার্য

রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিদায়ী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান ছাত্রলীগের ‘নাম ভাঙিয়ে’ বিতর্কিত এক জঘন্য নিয়োগকান্ড ঘটিয়ে গেলেন। নিয়োগে ছাত্রলীগের কথা বললেও ১৪১ জনের তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান, সাবেকসহ আশপাশের বিভিন্ন শাখা ছাত্রলীগের ৪৩ জনের বেশি সদস্যের নাম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে ভয়ংকর রকমের এক নিয়োগ বাণিজ্য করে গেলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ ছাত্রলীগের চাকরিপ্রাপ্ত নেতারা। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত ছাত্রলীগ নেতার অধিকাংশকে তৃতীয় শ্রেণির পদে চাকরি দিয়ে তাদের অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এসব পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতারা কেউ কেউ আবার চাকরিতে যোগদানও করেননি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সাদিকুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছি। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছি। তার পরও আমাকে নিম্নমান সহকারীর একটি তৃতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি এটি আমাকে ও ছাত্রলীগকে অপমান করার এক কৌশল। সে কারণে আমি চাকরিতে যোগদান করিনি। আমার মতো অধিকাংশ নেতাকেই এভাবে অপমান করা হয়েছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের ফারুক হাসান নামে ছাত্রলীগের এক সহসভাপতিকে উচ্চমান সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। স্নাতকে ফোর ফার্স্ট ক্লাস পাওয়ার পরও তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ওই পদে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকদের আহ্‌বায়ক অধ্যাপক সুলতানুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘বিদায়ী উপাচার্যের ছিল এ এক অপকৌশল। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে তিনি মূলত নিয়োগ বাণিজ্যই করে গেলেন।’ দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক অধ্যাপক একরামউল্ল্যাহ বলেন, ‘ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে বিদায়ী উপাচার্য বিএনপি-জামায়াতের লোকজন নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য করে গেছেন।’ এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়াদ শেষে যাওয়ার আগে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান যে শতাধিক অস্থায়ী নিয়োগে সই করেছেন, সে তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তান-স্ত্রী-স্বজন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে একাধিক সাংবাদিক নেতাও আছেন। গত বৃহস্পতিবার নিয়োগের জন্য প্রস্তুত ভিসির সই করা কাগজগুলো বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসেছে। সে তালিকা ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এসব তথ্য। যদিও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ নিয়োগকে অবৈধ ও বিধিবহিভর্‚ত উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তালিকা থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিবারের তিন সদস্য শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। যে বিভাগগুলোয় নিয়োগ দেখানো হয়েছে, শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি জানে না সে বিভাগের প্লানিং কমিটিও। এর বাইরে কর্মকর্তা পদেও নিয়োগ পেয়েছেন একাধিক শিক্ষকের স্বজন। শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়টির বাংলা বিভাগের খন্দকার ফরহাদ হোসেনের ছেলে ঋত্বিক মাহমুদ। যিনি সংগীত বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগ তালিকায় ৫ নম্বরে নাম তার। খন্দকার ফরহাদ হোসেন লেখালেখির জগতে অনীক মাহমুদ নামে পরিচিত। বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি থেকে ঋত্বিক মাহমুদের নিয়োগের সুপারিশ গেছে কি না- জানতে চাইলে সংগীত বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সদস্য পদ্মিনী দে বলেন, ‘নিয়োগ নিয়ে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির কোনো সভা হয়নি। কীভাবে নিয়োগ দিয়ে গেছেন উপাচার্য সেইটা সবাই জানেন।’ ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. চিত্তরঞ্জন মিশ্রের ছেলে ইন্দ্রনীল মিশ্র। নিয়োগ তালিকার ৩ নম্বরে আছে তার নাম। এ ছাড়া দুই শিক্ষকের স্ত্রী নিয়োগ পেয়েছেন আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে। সেন্টার অব এক্সেলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক (আইটি) হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলামের স্ত্রী ড. সাবিহা ইয়াসমিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কলেজ পরিদর্শক ও অধ্যাপক ড. আবদুল গনির স্ত্রী ফারহানা একরাম নিয়োগ পেয়েছেন তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে। সহকারী আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন রিয়াজির স্ত্রী বুরুজ-ই জোবাইরা। শেষ সময়ের এ নিয়োগে অধ্যাপক আবদুস সোবহান দুই সাংবাদিক নেতাসহ চার সাংবাদিকের নিয়োগপত্রেও সই করেছেন। যারা ইতিমধ্যে যোগদান করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আপনারা জানতে পারবেন।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর