রবিবার, ৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

খালেদা জিয়ার অবস্থা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ

বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, পাসপোর্ট নবায়নসহ সব প্রক্রিয়া শেষ হলে নেওয়া হবে লন্ডন অথবা সিঙ্গাপুর, সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদা জিয়ার অবস্থা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা স্পষ্ট করে কেউই বলছেন না। তবে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীর শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দিয়ে থাকে। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও সে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও করোনা-পরবর্তী জটিলতায় রোগীর শারীরিক অবস্থা বিভিন্ন দিকে টার্ন নিচ্ছে। সে কারণে শঙ্কা রয়েই গেছে। এ ছাড়া তাঁর শারীরিক অবস্থা শুক্রবারের চেয়ে গতকাল উন্নতি হলেও দীর্ঘ বিমান যাত্রার ধকল সহ্য করার সক্ষমতা নিয়ে সংশয় আছে। এ নিয়ে পরিবারের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন দলের নেতা-কর্মীরাও। জানা যায়, খালেদা জিয়া পোস্ট কভিড জটিলতায় ভুগছেন। করোনা-পরবর্তীতে কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। তাঁর এখন দিনে ২-৩ লিটার অক্সিজেন লাগছে। রক্ত দেওয়ায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ছে। এখন তিনি স্বাভাবিক খাবার খাচ্ছেন। তার ফুসফুস থেকে তরলজাতীয় পদার্থ (ফ্লুইড) দুই দফা অপসারণ করা হয়। তার ডায়াবেটিস এখন প্রায় নিয়ন্ত্রণে।

এদিকে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার অনুমতির বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় আইনি মতামত আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত নথি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত মত দেওয়ার পর তা ফের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসবে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আজ এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আজ শনিবার (গতকাল) যেহেতু ছুটির দিন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নেই। তাই আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে নথি পাঠানো সম্ভব হয়নি। আমার আইনি মতসহ আগামীকাল (আজ) সকালে কাগজপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় থেকে কী মত দেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাল নথি যাবে। কী মত দিয়েছি সেটা তারাই হয়তো জানাবেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের সদস্য অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল। সরকারের অনুমতি পেলে বিমানে ভ্রমণের মতো শারীরিক অবস্থা বিএনপি চেয়ারপারসনের আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে ডা. জাহিদ বলেন, সরকারের অনুমতির পরই এ বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা যে যাই বলুক ভালো নয়। আমরা সোজাভাবে বলি, করোনার পরবর্তীকালে ফুসফুসে কিছু হওয়াটাই একটা সতর্ক সংকেত। এটা যে কোনো সময় যে কোনো দিকে নিয়ে যেতে পারে। এ জন্য সরকারের উচিত হবে এ নিয়ে রাজনীতি না করে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া।

এ দিকে গতকালও নবায়ন করতে দেওয়া পাসপোর্ট হাতে পাননি খালেদা জিয়া। পাসপোর্ট নবায়ন হলেই লন্ডন বা সিঙ্গাপুরে ভিসা প্রক্রিয়া শুরু হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যকে অগ্রাধিকার দিয়েই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। খালেদা জিয়া ভিসার আবেদন করলে যুক্তরাজ্য সরকার সেটি বিবেচনা করে দেখবে বলে এক বার্তায় জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারের মুখপাত্র মেহের নিগার জেরিন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার স্বাস্থ্যের নিয়মিত পর্যক্ষেণ করছেন। বোর্ডের দুজন চিকিৎসক জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কার মূল কারণ, করোনা পরবর্তী জটিলতায় রোগীর শারীরিক অবস্থা বিভিন্ন দিকে টার্ন নিয়ে থাকে। ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকায় শারীরিক জটিলতা আরও বেড়েছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর পরবর্তীতে শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দিয়ে থাকে। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও সে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি দেখা দিলেও বেশির ভাগই অপরিবর্তিত রয়েছে। তাঁর অক্সিজেন কম নিতে হচ্ছে। শ্বাস-প্রশ্বাসও স্বাভাবিক। তবে কিডনিতে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা দূর করতে নানাভাবে চেষ্টা চলছে।

খালেদা জিয়ার পরিবারের এক সদস্য জানান, বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত অনুমতি পেলে খালেদা জিয়ার পাসপোর্টও হাতে পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। এরপর ভিসাসহ আনুষঙ্গিক কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে। যাতে যে কোনো মুহূর্তে তাঁকে বিদেশ নেওয়া যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে যুক্তরাজ্যে নেওয়ার জন্য জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন। সেখানে নিতেই তারা আগ্রহী। কিন্তু বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যে সেদেশে বাংলাদেশিদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সেখানে গেলেও ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো দেশ অর্থাৎ যে দেশে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি, প্রথমে সে রকম একটি দেশে তাকে নেওয়া হতে পারে। পরে সেখান থেকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। লন্ডনের বিকল্প হিসেবে সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব কিংবা থাইল্যান্ড নেওয়ার বিষয়ও পরিবারের চিন্তায় রয়েছে। ঢাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য এবং সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

দ্রুত বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি ড্যাবের : অযথা কালক্ষেপণ না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব। গতকাল সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব ডা. আবদুস সালাম এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সব সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ দেশের আপামর জনসাধারণ চরম উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত। তার পরিবার ইতিমধ্যে বিদেশে তাঁর যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। সুচিকিৎসার নিমিত্তে তাঁর স্থায়ী মুক্তিসহ প্রয়োজনে দ্রুত বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্‌বানও জানান ড্যাবের এই দুই নেতা।

সর্বশেষ খবর