রবিবার, ৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

লাইলাতুল কদর আজ রাতটির তাৎপর্য

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

লাইলাতুল কদর আজ রাতটির তাৎপর্য

লাইলাতুল কদর বা শবেকদর মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বরকতপূর্ণ ও পুণ্যময় রজনী। যেহেতু এ রজনী অত্যন্ত মহিমান্বিত ও সম্মানিত, তাই এ রজনীকে লাইলাতুল কদর বলা হয়ে থাকে। আবার এ রাতে যেহেতু পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করা হয় সে কারণেও এ রজনীকে বরকতময় রজনী বলা হয়।

এই রাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। আল্লাহতায়ালা এই রাতকে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করেছেন। এ রাতেই সম্পূর্ণ কোরআন লওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হয়। পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, (১) নিশ্চয় আমি ইহা (কোরআন) লায়লাতুল কদরে নাজিল করেছি। (২) তুমি কি জানো লাইলাতুল কদর কী? (৩) লাইলাতুল কদর এক হাজার মাস অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ। (৪) সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের    অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হয়। (৫) সে আদ্যোপান্ত শান্তি-ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত (সুরা কদর)। অন্য আয়াতেও লাইলাতুল কদরকে বরকতময় রাত বলে অবহিত করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, নিশ্চয় আমি ইহা (কোরআন) কে অবতীর্ণ করেছি একটি বরকতময় রাতে (সুরা দুখান : ৩)। হাদিস শরিফেও এ রাতের অনেক গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে জাগরণ করে তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয় (সহিহ বুখারি, হাদিস ২০১৪)। আরেক হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সে তো সব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হয় (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৬৪৪)।

লাইলাতুল কদর হয় রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে। এক হাদিসে আছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, তোমরা শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর। তোমাদের কেউ দুর্বল কিংবা অক্ষম হলে সে যেন অবশিষ্ট সাত রাতের বিষয়ে পরাজিত না হয় (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৬৫)। অপর বর্ণনায় তিনি বলেন, তোমরা শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ কর, অথবা বলেছেন, শেষ নয় দিনে (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৬৫)। সুতরাং লাইলাতুল কদর লাভের জন্য পুরো শেষ দশকে পূর্ণ প্রস্তুত থাকা এবং এর খোঁজে নিজেকে পূর্ণ সচেষ্ট রাখা উচিত।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের জন্য কোমর বেঁধে নেমে পড়তেন। এক হাদিসে আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, শেষ দশক শুরু হলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা রাত জাগ্রত থাকতেন (ইবাদত করার জন্য)। পরিবারের লোকদেরও জাগ্রত রাখতেন (ইবাদত করার জন্য)। তিনি অনেক মেহনত করতেন। এমনকি কোমর বেঁধে নিতেন (সহিহ বুখারি, হাদিস ২০২৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৭৪)। তিনি আরও বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ দশকে (ইবাদতের জন্য অনেক বেশি মেহনত করতেন (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৭৫)। অনেকে রমজানের ২৭ তারিখে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করে এবং ধারণা করে এ রাতই লাইলাতুল কদর হবে। এ ধারণা সুন্নতের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বরং সঠিক কথা হলো, লাইলাতুল কদর ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ তারিখের যে কোনো রাতেই হতে পারে।

লাইলাতুল কদরের একটি বিশেষ আমল হলো, উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, হে আল্লাহর রসুল, আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দোয়াটি পাঠ করব? তিনি বললেন, তুমি বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি। (অর্থ : হে আল্লাহ, নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করা পছন্দ করেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন)। (তিরমিজি, হাদিস ৩৫১৩)। এ ছাড়া বেশি বেশি নফল নামাজ, তওবা-ইস্তেগফার, দোয়া-দরুদ, জিকির-আসকার, তাসবিহ-তাহলিল, তিলাওয়াত করা। এই রাতে কোরআন তেলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। পবিত্র এই রাতেই মহাগ্রন্থ আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদরের বরকত লাভ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতিব ও টিভির ইসলামী প্রোগ্রাম উপস্থাপক।

সর্বশেষ খবর