সোমবার, ১০ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বৈধ কাগজ ছিল না সেই স্পিডবোটের মালিক গ্রেফতার

মাওয়া দুর্ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক ও মাদারীপুর প্রতিনিধি

অধিক মুনাফা লাভের আশায় লকডাউনের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছিল চান মিয়া ওরফে চান্দু মোল্লার (৪০) স্পিডবোট। অথচ চান্দুর মালিকানাধীন তিনটি স্পিডবোটের একটিরও বৈধ কোনো কাগজপত্র বা অনুমোদন নেই। ঢাকার কেরানীগঞ্জের তেঘড়িয়া এলাকা থেকে চান্দুকে গ্রেফতারের পর এসব কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

গত ৩ মে মাওয়া ফেরিঘাট এলাকায় একটি যাত্রীবাহী স্পিডবোট দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে নোঙরে থাকা বালুবোঝাই বাল্কহেডের ওপর আছড়ে পড়লে ২৬ জন যাত্রীর নির্মম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৪  মে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলার ২ নম্বর আসামি স্পিডবোট মালিক চান মিয়া ওরফে চান্দু মোল্লা। গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, শনিবার রাত ২টা ৩০ মিনিটের দিকে কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে চান্দু মোল্লা ওরফে চান্দুকে  গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই চান্দু দুর্ঘটনার শিকার ওই স্পিডবোটে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, চান্দু পাঁচ বছর ধরে স্পিডবোটের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনের ব্যবসা করে আসছিলেন। তার তিনটি স্পিডবোটের  একটিরও অনুমোদন নেই। দুর্ঘটনার পর পরই আসামি চান্দু আত্মগোপনে চলে যান। এ মামলায় চারজন আসামি। প্রধান আসামি চালক পুলিশের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একজন ইজারাদার ও আরেকজন আসামিসহ মামলার বাকি দুই আসামি পলাতক বলে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অবৈধভাবে যারা স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করছে তাদের বিরুদ্ধে  কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাওয়া- দৌলতদিয়া ফেরিঘাট স্পিডবোট ব্যবসা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিআইডব্লিটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, জেলা প্রশাসক, ঘাট ইজারাদার ও মালিক সমিতির তত্ত্বাবধানে এ ব্যবসা পরিচালিত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে আমরা যদি দেখতে পাই কোনো অনুমোদনহীন বোট যাত্রীদের নদী পারাপার করছে তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেশ : মাদারীপুরের শিবচরের পদ্মায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করেছে। এই তদন্ত প্রতিবেদনে নৌ-পুলিশের দায়িত্বে অবহেলাসহ ৮টি কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে ২৩টি সুপারিশ প্রদান করেছে তদন্ত কমিটি। গতকাল দুপুরে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির প্রধান আজাহারুল ইসলাম। চালক মাদকাসক্ত হওয়ায় পদ্মায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণ গেছে বলে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে উঠে এসেছে। মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, মাদকাসক্ত হয়ে চালক শাহআলম স্পিডবোট চালানোতেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঘাটে সিন্ডিকেট ও অব্যবস্থাপনা, লাইফ জ্যাকেট ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে পদ্মা পারাপারসহ ২৩টি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। যা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর