সোমবার, ১৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা, ১৩ শিশুসহ নিহত আরও ৩৩

প্রতিদিন ডেস্ক

ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা, ১৩ শিশুসহ নিহত আরও ৩৩

গাজায় ইসরায়েলি বিমান থেকে ব্যাপক বোমা হামলায় গতকাল ১৩ শিশুসহ অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় ধ্বংস হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল-জাজিরার কার্যালয়। বিধ্বস্ত হয়েছে হামাসের গাজা ভূখন্ডের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রধানের বাড়িসহ অনেক ভবন। সূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, পার্স টুডে, আনন্দবাজার। খবরে বলা হয়েছে, নিরীহ ফিলিস্তিনিদের বর্বর ও পাশবিক আগ্রাসন চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। গত সপ্তাহের সোমবার থেকে এই আগ্রাসন শুরু হয়। গত শনিবার রাতভর বিমান হামলার পর আগ্রাসনের সপ্তম দিন গতকাল সকালেও ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। গত শনিবার পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে, সবমিলিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি শিশু রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৯৫০ জন। তবে গতকালের বোমা হামলায় নিহতের তালিকায় যুক্ত হয় ১৩ শিশুসহ কমপক্ষে ৩৩ জন। এদিকে ইসরায়েলি পাশবিক আগ্রাসনের সাধ্যমতো জবাব দিচ্ছে ফিলিস্তিন প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। তারাও ইসরায়েলের বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান লড়াই যেরকম তীব্র হয়ে উঠেছে তাতে খুব শিগগিরই এই সংঘাত একটি ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ রূপ নিতে যাচ্ছে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, শনিবার গাজার শাতি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মৃত্যু হয়েছে আট শিশু ও দুই নারীর। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আল-জালা টাওয়ার নামে একটি বহুতল ভবন। সেখানে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের অফিস ছিল। আল-জালা নামের ওই ভবনেই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এপি ও কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল-জাজিরার কার্যালয় ছিল। ভবনটিতে এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

 দাবি, জঙ্গি সংগঠন হামাসের দফতর ছিল ১২ তলার আল-জালা টাওয়ারে। আল-জালা টাওয়ারের মালিক জওয়াদ মেহেদি জানান, ইসরায়েলের একজন সেনা কর্মকর্তা তাকে ফোন করে এক ঘণ্টার মধ্যে ভবন খালি করে দিতে বলে। দ্রুত সবাইকে বের করে দেওয়া হয়। তারপরই  ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে গুঁড়িয়ে যায় বহুতল ভবনটি।

এপির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্যারি প্রুট ইসরায়েলের এ হামলায় ‘স্তম্ভিত’ হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ভবনটিতে এপির ডজনখানের সাংবাদিক ও ফ্রিল্যান্সার থাকলেও হামলার আগে আগে তারা সেখান থেকে সরে যেতে সক্ষম হন বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আজ যা হলো, তার কারণে বিশ্ব এখন গাজায় কী হচ্ছে সে সম্বন্ধে আরেকটু কম জানবে।’ এদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা হামলার আগে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলকে বলেছিল। আল-জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মোস্তেফা সৌয়াগ আল-জালা ভবনে হামলাকে ‘বর্বর’ অ্যাখ্যা দিয়ে এর জন্য ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জঘন্য এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল গণমাধ্যমকে চুপ করিয়ে দেওয়া এবং গাজার জনগণের অবর্ণনীয় কষ্ট ও হত্যাযজ্ঞকে আড়াল করা।’

অন্যদিকে হামাস ও গাজার অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর রকেট হামলায় ইসরায়েলে এ পর্যন্ত দুই শিশুসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন সৈন্য রয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রাতে হামাস ইসরায়েলের দিকে ১২০টি রকেট ছুড়েছে, এর অধিকাংশই আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী সিস্টেম দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আর প্রায় ডজনখানেক রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গাজার ভিতরেই পড়েছে। রকেট হামলার সাইরেন শুনে ইসরায়েলের তেল আবিব ও বীরশেবা শহরের বাসিন্দারা তাড়াহুড়া করে ভূগর্ভস্থ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে চলে যান। দৌড়ে এসব আশ্রয়স্থলে যাওয়ার সময় প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন বলে দেশটির চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। হামাসের রকেটের ভয়ে ইসরায়েলে কর্মরত ভারতীয় নার্সদের বিনিদ্র রজনী কাটছে। এরই মধ্যে হামাসের ছোড়া রকেটের আঘাতে ইসরায়েলের আশকালন শহরে মারা গেছেন কেরালার নার্স সৌম্যা সন্তোষ। সেই ঘটনা তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাদের। যুদ্ধের আবহে জীবন ও জীবিকা দুই-ই হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন তারা। ভারতীয় দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ইসরায়েলে প্রায় ১৪ হাজার ভারতীয় নাগরিক বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে ১৩ হাজার ২০০ জনই নার্স।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরও জানিয়েছে, গতকাল  ভোররাতে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনুসে হামাসের আঞ্চলিক নেতা ইয়াহিয়া আল সিনওয়ারের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে তারা। সিনওয়ার ২০১১ সালে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ২০১৭ সাল থেকে গাজা অঞ্চলের হামাসের রাজনৈতিক ও সশস্ত্র শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

খবরে বলা হয়েছে, দুই পক্ষের লড়াই সপ্তম দিনে গড়ালেও থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে রাতভর ব্যাপক বোমাবর্ষণের শব্দ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও মিসরের দূতরা কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো অগ্রগতির লক্ষণ দেখাতে পারেননি। ইসরায়েল ও হামাস, উভয়ই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইসরায়েল এখনো এই অভিযানের মধ্যবর্তী পর্যায়ে রয়েছে, এটা এখনো শেষ হয়নি এবং যতদিন প্রয়োজন হয় ততদিন অভিযান চলবে।’ অপরদিকে কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থানকারী হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়া নেতানিয়াহুকে ‘আগুন নিয়ে খেলা না করতে’ বলেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর