মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

আলোচনা এখন টিকা উৎপাদনে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

আলোচনা এখন টিকা উৎপাদনে

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের থাবা থেকে বাঁচতে জরুরি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে টিকা গ্রহণ। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় দেশে দেখা দিয়েছে সংকট। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশে চীন-রাশিয়ার টিকা উৎপাদন নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা যাচাই সম্পন্ন করেছে সরকার। এদিকে চীন থেকে পাওয়া উপহারের টিকা ২৫ মে থেকে দেওয়া শুরু হচ্ছে।

সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলছে টিকা উৎপাদন নিয়ে আলোচনা। ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানাতে গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সবচেয়ে কার্যকর এবং পরীক্ষিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র টিকা দিয়েই আমরা গণটিকাকরণ কার্যক্রম শুরু করেছি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ টিকা রপ্তানির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে রাশিয়া এবং চীনের টিকা উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। খুব শিগগিরই দেশে টিকা আসতে শুরু করবে। তা ছাড়া দেশেই যাতে টিকা উৎপাদন করতে পারি সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। নিজেদের টিকা তৈরিতে কয়েক মাস সময় লাগবে। আমরা দেশের সব নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে আসব।’

ঔষধ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ৮ জানুয়ারি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়। সেরামের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী টিকা সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়ায় গত ২৭ এপ্রিল রাশিয়ার মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি স্পুটনিক-ভি ও ২৯ এপ্রিল চীনের বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টের উৎপাদিত সিনোফার্মের টিকাকে জরুরি প্রয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়। এ অবস্থায় রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি ও চীনের সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশে উৎপাদনের কথা ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে চীনের সিনোভ্যাক টিকা দেশে উৎপাদন নিয়েও চলছে আলোচনা। বেশ কয়েকটি ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান টিকা উৎপাদনে আগ্রহও দেখিয়েছে। টিকা বাংলাদেশেই উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি কোর কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি তিনটি প্রতিষ্ঠানের টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা যাচাই করেছে। তারা নম্বর দিয়ে কোন প্রতিষ্ঠানের অবস্থান কেমন তা জানিয়েছে। কোর কমিটি ২৫-এর মধ্যে নম্বর দিয়েছে। এতে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস ২৫ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ২১। আর পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস পেয়েছে ১২, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পেয়েছে ৫ নম্বর।

দেশীয় প্রতিষ্ঠানের টিকা উৎপাদন প্রস্তুতি থাকলেও এখন চীন-রাশিয়ার সঙ্গে শর্ত নিয়ে চলছে দরকষাকষি। রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক-ভি এর উৎপাদন শর্ত ও দাম নিয়ে চলছে আলোচনা। শর্ত এবং দাম নিজেদের সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে আনতে চলছে চিঠি চালাচালি। শর্ত সুবিধাজনক অবস্থায় না থাকায় টিকা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে বলে জানা গেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে। গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আমরা রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলেছি টিকার জন্য। এর সঙ্গে পররাষ্ট্র, অর্থ, পিএমওসহ আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় যুক্ত হয়েছে। যে কোনো টিকা উৎপাদন করতে হলে ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন লাগে। তিনি আরও বলেন, যারা আবেদন করবে তাদের সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করা হবে। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, টিকা ক্রয় করব, প্রয়োজনে উৎপাদনও করব। যাদের উৎপাদনের সক্ষমতা আছে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রথমে তাদের আবেদন দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সে রকম কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের কাছে প্রতিবেদন এলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। টিকা ক্রয় করার চেষ্টা থাকবে, তাহলে তাড়াতাড়ি হবে। টিকা তৈরি করলে দীর্ঘ সময় লাগবে। উৎপাদন করলেও পাঁচ-ছয় মাসের আগে করা সম্ভব নয়।’ এদিকে ফুরিয়ে আসছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকা। ঢাকার বাইরে বেশকিছু জায়গায় এর মধ্যেই টিকা শেষ হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩৭ লাখ ৫৭ হাজার ২৩ জন। দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষায় আছেন ২০ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৯ জন। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে আছে ৬ লাখের কিছু বেশি টিকা। প্রায় ১৪ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গণমাধ্যমকে বলেছেন, যেখান থেকে আগে টিকা পাব, সেখান থেকে নেব। প্রয়োজনে একাধিক জায়গা থেকে টিকা নেওয়া হবে। তবে ফাইনাল কিছু হলে জানতে পারবেন। দ্বিতীয় ডোজের জন্য ভারত ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কথা বলেছি। ভারতের কাছে অর্ডার আছে ৩ কোটি ডোজ, পেয়েছি ৭০ লাখ। এ জন্য দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে আমরা চিন্তিত।

২৫ মে থেকে চীনা টিকা প্রদান শুরু : চীন থেকে আসা উপহারের ৫ লাখ টিকার প্রয়োগ শুরু হবে আগামী ২৫ মে থেকে। সেক্ষেত্রে বাদ পড়া ফ্রন্টলাইনাররা এ টিকায় অগ্রাধিকার পাবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রী এ কথা জানান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চীনের যে টিকা এসেছে সেটির প্রথম ডোজ ২৫ মে থেকে দেওয়া শুরু হবে। এ ছাড়া আমরা রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলেছি টিকার জন্য। ঈদের ছুটির মধ্যে আমরা এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এর সঙ্গে পররাষ্ট্র, অর্থ, পিএমওসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় যুক্ত হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর