বিশ্ব জনমত উপেক্ষা করে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি এলাকায় বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে। গত রবিবার দিনগত মধ্যরাত থেকে গতকাল ভোররাত পর্যন্ত গাজার বিভিন্ন এলাকার ওপর টানা হামলায় অর্ধশতাধিক নারী-শিশু নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে এক সপ্তাহে ইসরায়েলি হামলায় ২৫০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, ডয়েচে ভেলে, আলজাজিরা।
খবরে বলা হয়, গতকাল ইসরায়েল-গাজার লড়াই দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ায়। এদিন ভোররাতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো গাজা সিটির বেশ কয়েকটি এলাকায় ৮০ বার বিমান হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, মধ্যরাতের একটু পর ইসরায়েলের বীরশেবা ও আশকেলন শহরে গাজা থেকে রকেট হামলা চালানোর পর তাদের জঙ্গি বিমানগুলো ‘সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যে’ আঘাত হেনেছে। সেনাবাহিনীর দাবি, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী দেশটির বিভিন্ন স্থান লক্ষ্য করে ৩ হাজারের বেশি রকেট ছুড়েছে গত এক সপ্তাহে। ফিলিস্তিনিদের হামলায় এ পর্যন্ত দুই শিশুসহ ১০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। এর আগের দিন রবিবার ইসরায়েলি হামলায় ৫৮টি শিশু ও ৩৪ জন নারীসহ মোট ১৯৭ জন নিহত হয়েছেন বলে ভূখন্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। রবিবার দিনগত রাতে এক ঘণ্টা ধরে দেড় শতাধিক রকেট বৃষ্টির মতো ছোড়া হয়েছে। গাজা উপত্যকার আল-ওহেদা শহরকে কেন্দ্র করে ৭০টির বেশি রকেট ছোড়া হয়েছে। এতে আবাসিক ভবন, অবকাঠামো ও সড়ক পুরোপুরি বা কোথাও কোথাও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলের বিমান হামলার কারণে ফিলিস্তিনে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে।
প্রশ্ন জাতিসংঘ ও বাইডেনের আমেরিকা নিয়ে : ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে আবারও ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘ। নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের বাধার কারণে রবিবারের বৈঠকও শেষ হয়েছে কোনো ফলাফল ছাড়া। এদিন বাইডেন প্রশাসনের আপত্তিতেই ইসরায়েলি কর্মকান্ডের নিন্দা জানানোর বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি পরিষদ। ফলে জাতিসংঘের অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে জো বাইডেনের আমেরিকা নিয়েও। রবিবার একটি ভিডিও মেসেজে বাইডেন বলেন, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মানুষের বাঁচার অধিকার আছে। দ্রুত এই লড়াই বন্ধ হওয়া দরকার। এ বিষয়ে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা করছে আমেরিকা। আলোচনা কি সত্যিই করা হচ্ছে? জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে প্রস্তাবের আবেদন করেছিল চীন, নরওয়ে এবং তিউনিসিয়া। কিন্তু আমেরিকা এখনই যুদ্ধ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সম্মত হয়নি। ফলে কোনো প্রস্তাবও গ্রহণ করতে পারেনি জাতিসংঘ। এর ফলে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কূটনীতিকদের একাংশের অভিযোগ, আমেরিকা প্রথম থেকেই ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে কথা বলছে। যুদ্ধ বন্ধেও কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না। আরব বিশ্ব অবশ্য প্রায় প্রতিদিনই নিন্দা প্রস্তাব পাস করছে। যেভাবে যুদ্ধ চলছে এবং মানুষ মারা যাচ্ছে, তার তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। উল্লেখ্য, ওই বৈঠকগুলোতে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪টি দেশ সহিংসতা কমানোর আহ্বান জানালেও এর বিরোধিতা করে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র। তৃতীয় বৈঠকে চীন, নরওয়ে ও তিউনিসিয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় সৃষ্ট মানবেতর পরিস্থিতি এবং বেসামরিক মানুষজনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে সব আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে মার্কিন নীতির কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। কেবল ওয়াশিংটনের বিরোধিতার কারণেই নিরাপত্তা পরিষদ ফিলিস্তিন ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে না।