মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

দুই মন্ত্রীসহ চারজন গ্রেফতারে তোলপাড় ক্ষুব্ধ মমতা

কলকাতা প্রতিনিধি

নারদা স্টিং অপারেশন মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রী, ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের এক বিধায়ক ও এক সাবেক তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এ নিয়ে রাজ্যজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

নিম্ন আদালত সন্ধ্যায় তাদের জামিন দিলেও হাই কোর্টে তা স্থগিত হওয়ায় আপাতত মুক্তি মিলছে না।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন- পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, পরিবহন ও আবাসনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, দলের বিধায়ক ও সাবেক পরিবহনমন্ত্রী মদন মিত্র এবং রাজ্যের আরেক সাবেক মন্ত্রী, কলকাতার সাবেক মেয়র ও সাবেক তৃণমূল নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়। গ্রেফতারের পর গতকাল সকাল থেকেই দফায় দফায় উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা রাজ্য। বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে উদ্দেশ করে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, এদিন সকালে কলকাতার চেতলায় ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে যায় সিবিআই-এর প্রতিনিধি দল। বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। এ সময় সেখানে তাদের সঙ্গে বচসা শুরু হয় ফিরহাদ হাকিমের নিরাপত্তারক্ষীদের। তৃণমূলের কর্মীরাও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরহাদ হাকিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সিবিআই-এর কলকাতার কার্যালয় নিজাম প্যালেসে। এরপর একে একে নিয়ে আসা হয় বাকি তিন মন্ত্রী-বিধায়ক-নেতাদের। সেখানে নিয়ে গ্রেফতারি মেমোতে স্বাক্ষর করানো হয় চারজনকেই। এদিকে দলের প্রথম সারির নেতা ফিরহাদের গ্রেফতারের খবর পেয়েই তার বাড়ির সামনে চলে যান তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সকাল ১১টা নাগাদ নিজাম প্যালেসে পৌঁছান মমতা। ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে নিয়েই তিনি সোজা চলে যান ১৫ তলায় সিবিআই-এর ডিআইজি অখিলেশ কুমার সিং-এর ঘরের সামনে। সেখানে তিনি চেয়ার নিয়ে বসে পড়েন। মমতার দাবি, ‘এই গ্রেফতার বেআইনি। কোনো প্রকার নোটিস ছাড়া তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে যখন তিনজনকে গ্রেফতার করা হলো, তবে আমাকেও গ্রেফতার করতে হবে।’ পরে নিজাম প্যালেসে যান তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি, শান্তনু সেন, বিধায়ক রত্না চ্যাটার্জিসহ তৃণমূলের নেতারা। প্রায় ছয় ঘণ্টা পর বিকাল ৫টা নাগাদ নিজাম প্যালেস থেকে বের হন মমতা ব্যানার্জি। তার বেরোনোর সময় নিজাম প্যালেসের বাইরে থাকা দলের কয়েক শতাধিক কর্মী-সমর্থকরা দিদি-দিদি বলে স্লোগান দিতে থাকেন। গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই নিজাম প্যালেসের মূল গেটের সামনে জমায়েত হন কয়েক শত তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। তাদের মুক্তির দাবিতে নিজাম প্যালেসের সামনে স্লোগান দিতে থাকে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। একসময় ব্যারিকেড ভেঙে নিজাম প্যালেসের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রীতিমতো খন্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের উদ্দেশ্যে দফায় দফায় ইট, পাথর ছোড়া হয়। পাল্টা লাঠিপেটা করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও। তাতে বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে সেখানে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে গণমাধ্যমের কর্মীদের ওপরও হামলা চালানো হয়। এদিকে এই বিক্ষোভের জেরে গ্রেফতার হওয়া নেতাদের এদিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে নিতে পারেনি সিবিআই। তার বদলে নিজাম প্যালেস থেকেই ভার্চুয়াল অর্থাৎ অনলাইন মাধ্যমেই ওই চার হেভিওয়েট নেতাকে আদালতের মুখোমুখি করা হয়। অনলাইনের মাধ্যমেই আদালতের কাছে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। চার্জশিট দেওয়া হয় অভিযুক্ত বহিষ্কৃত আইপিএস কর্মকর্তা এস এইচ এম মির্জার নামেও (বর্তমানে জামিনে মুক্ত)। শুনানিতে অভিযুক্তদের ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে আবেদন জানিয়ে সিবিআই-এর তরফে বলা হয় এই চারজনই অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা, তাদেরকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হলে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে, সাক্ষীদের ভয় দেখানো হতে পারে, তথ্য-প্রমাণ লোপাট হওয়ারও আশঙ্কা আছে।

 এদিকে রাজ্যের মন্ত্রী ও বিধায়কদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে কলকাতাসহ রাজ্যের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ, অবরোধ শুরু করেছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। কোথাও সড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হচ্ছে।

সন্ধ্যায় জামিন পেলেন ৪ জনই : সকালে গ্রেফতার, আর সন্ধ্যায় জামিন পেলেন নারদা মামলায় গ্রেফতার হওয়া পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রীসহ চার হেভিওয়েট নেতা। আদালতে সিবিআই’এর তরফ থেকে ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। কিন্তু দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর সিবিআই-এর আবেদন খারিজ করে চারজনেরই জামিন মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারপতি অনুপম মুখার্জি। অভিযুক্ত চারজনের প্রত্যেককেই ব্যক্তিগত ৫০ হাজার রুপির বন্ডে জামিন দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর