শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ভারতের কাছে টিকা উপহার চেয়েছে বাংলাদেশ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ভারতের কাছে টিকা উপহার চেয়েছে বাংলাদেশ

ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ রাখায় তাদের কাছ থেকে আপাতত ১৫ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে চেয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন গত মঙ্গলবার ফোনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে প্রয়োজনে উপহার হিসেবে টিকা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান মোমেন। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছিলাম। ভারত কখনই বলেনি যে টিকা দেবে না। তবে তারা দিতে পারছে না। আমি এর আগে চিঠিও দিয়েছি। আমি ওই দিন বলেছি যে আমরা ঝামেলায় পড়েছি। আমাদের ১৫ লাখ লোক দ্বিতীয় ডোজ টিকার জন্য আটকে গেছে। টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলে প্রয়োজন হলে আমাদের উপহার হিসেবে দিন। কারণ, এর আগে আপনারা আমাদের উপহার দিয়েছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জয়শঙ্কর বললেন, ‘আমি আপনাদের অবস্থা জানি। আপনিও আমাদের অবস্থা জানেন। দিনে ৪ হাজারের বেশি লোক মারা যাচ্ছে। ৪ লাখের বেশি লোক সংক্রমিত হচ্ছে। সেরামের উৎপাদন করার ক্ষমতা ছিল ২০ কোটি। কিন্তু ১০ কোটিও উৎপাদন করতে পারছে না। আমাদের অবস্থা শোচনীয়।’ আমি বললাম, ‘আমাদের অবস্থা আরও খারাপ। কারণ, ১৫ লাখ লোক টিকা না পেলে সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে। যে কোনোভাবে টিকা সরবরাহ করার কথা বলেছি।’ আবদুল মোমেন বলেন, ‘জয়শঙ্কর আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, অন্য জায়গা থেকে আমরা টিকা আনার চেষ্টা করছি কি না। আমি বললাম, আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছি। কোভ্যাক্সকে আপনারা দিচ্ছেন না বলে সেখান থেকে পাচ্ছি না। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভারতের প্রভাব রয়েছে। আমি জয়শঙ্করকে অনুরোধ করেছি তাদের আমাদের টিকা দেওয়ার জন্য বলতে।’ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক। কারণ, শেখ হাসিনার সরকার সংবাদবান্ধব সরকার। আমরা কখনই আপনাদের নিষেধ করি না। আমাদের লুকানোর কিছু নেই। যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি খুব দুঃখজনক। সেটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ম্যানেজ করা উচিত ছিল। গুটিকয় লোকের জন্য এই বদনামটা হচ্ছে। আমি জানি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিসেবে আমাদের এটি ফেস করতে হবে। অনেকে প্রশ্ন করবে। আমরা এ ধরনের ঘটনা চাই না। যেহেতু এটি বিচারাধীন বিষয়, সে জন্য বিস্তারিত কথা বলতে চাই না। কিন্তু এটি অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক ঘটনা। আমি আশা করব, এ ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। রোজিনা ইসলামের ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যথার্থ মন্তব্য করেছেন। আমার সহকর্মীরা বলেছেন, রোজিনা ইসলাম ন্যায়বিচার পাবেন। তারা বলেছেন, এটি দুঃখজনক, অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। আবদুল মোমেন গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, সংবাদমাধ্যম দেশের বিরাট কাজ করছে। তাদের কারণে আমরা বালিশকান্ড শুনেছি। আপনাদের কারণে আমরা লাখ টাকার সুপারি গাছের কথা শুনেছি। আপনাদের কারণে সেই সাহেদ করিমের তথ্য পেয়েছি। সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিয়েছে। এসব করে আপনারা সরকারকে খুব সাহায্য করছেন। নয়াদিল্লি প্রতিনিধি জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গতকাল নয়াদিল্লিতে ‘এশিয়ার ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বলেছেন, ভারতে এখন করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। তাই ভ্যাকসিন রপ্তানিতে বিঘ্ন ঘটছে। এই মহামারীর কারণে দেখা গেল উৎপাদন ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা, মেডিকেল সরবরাহে বাধা এবং চাহিদার থেকে সরবরাহ স্বল্প হওয়া। এককভাবে কোনো দেশের পক্ষে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। বিশ্বকে একত্রে সমাধান খুঁজতে হবে। অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র অনির্বাণ বাগচিও অদূর ভবিষ্যতে টিকা রপ্তানির বিষয়ে আশ্বাস দিতে পারেননি। তিনি বলেছেন, এই মুহুর্তে ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোই অগ্রাধিকার।

সর্বশেষ খবর