শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

গাজায় শতাধিক বিমান থেকে হামলা

রাষ্ট্রদূতকে ডেকে রাশিয়ার হুঁশিয়ারি

প্রতিদিন ডেস্ক

গাজায় শতাধিক বিমান থেকে হামলা

ইসরায়েলের বিমান হামলায় ফিলিস্তিনের গাজায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি ভবন -এএফপি

ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকার গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা বন্ধে রাজি নয় বলে ঘোষণা করেছে। যখন বিভিন্ন পক্ষ থেকে একটি যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালানো হচ্ছে, তখনই এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদিকে আগেরদিনের মতো গতকালও গাজায় শতাধিক ইসরায়েলি বিমান বোমা ও গোলা বর্ষণ করেছে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ পাওয়া যায়নি। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, নিউজউইক, আনাদোলু এজেন্সি, আলজাজিরা।

খবরে বলা হয়, গতকাল গাজায় হামাসের নানা স্থাপনার ওপর শতাধিক ইসরায়েলি বিমান হামলা চালিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে হামাসও এ হামলার জবাব দিয়েছে। এক খবরে বলা হয়, এদিন প্রথম প্রহরে গাজায় সিরিজ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে খান ইউনিস শহরে চারজন আহত হয়েছেন। ইসরায়েল বলেছে, তারা হামাসের রকেট উৎক্ষেপণ সাইটে হামলা চালিয়েছে। কয়েকটি সূত্র জানায়, এ হামলার পর ইসরায়েলি শহর বীরসেবা এবং গাজা সীমান্তবর্তী এলাকায় রকেট সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে। ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা ইজাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেড দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের সেনাভর্তি একটি বাসে ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে। গতকাল সকালে সেনাভর্তি বাসে ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার পরপরই ওই স্থানে ব্যাপকভাবে মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করা হয়। অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের ওই বাস খালি ছিল, এবং হামাসের হামলায় একজন মাত্র সেনা সামান্য আহত হয়েছেন। পর্যবেক্ষকরা জানান, ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে রকেট হামলার সাইরেন বাজানোর পর সেনাভর্তি বাসে হামলার এ খবর এলো। এর আগে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কোনো রকেট হামলা হয়নি। আরেক খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় একশ নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২২৭ জন নিহত হয়েছেন। হামাস অবশ্য তাদের যোদ্ধাদের ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে দুটি শিশুসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের দাবি, গাজা থেকে ইসরায়েলের ভূখন্ড লক্ষ্য করে অন্তত চার হাজার রকেট ছুড়েছে হামাস। এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ‘চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত বোমাবর্ষণ অব্যাহত রাখবে ইসরায়েলি বাহিনী।’ অন্যদিকে অবরূদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সাম্প্রতিক আগ্রাসনে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে রাশিয়া। এই ইস্যুতে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া ভাষায় শাসিয়েছে মস্কো। গত বুধবার রাশিয়ায় নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সান্দার বেন বির সঙ্গে বৈঠক করেছেন রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানোভ। এ সময় রুশ নেতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘গাজায় আর কোনো নিরীহ মানুষের প্রাণহানি মেনে নেওয়া হবে না।’ ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন পরিস্থিতির দিকে নিবিড়ভাবে নজর রাখছে রাশিয়া। সেখানে সাম্প্রতিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছে মস্কো। যুদ্ধবিরতির কূটনীতি : গাজায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সব পরিকল্পনাই ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ। গত কয়েক দিনে দৈনিকটির একাধিক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর সব কৌশল ব্যর্থ হয়েছে এবং ইসরায়েলের জ্যেষ্ঠ কর্তারা যুদ্ধের ইতি টানতে চাচ্ছেন। গত মঙ্গলবারের এক নিবন্ধে পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক আলুফ বেন লিখেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ব্যর্থতা ও পরাজয়ের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি মিসরের নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র বলেছে, দুই পক্ষই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। তবে আলোচনা এখনো চলছে। এ বিষয়ে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চতুর্থবারের মতো ফোন করে নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে সহিংসতা কমিয়ে আনার বার্তা দিয়েছেন।’ অবশ্য এরই মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলে যুদ্ধবিরতির জন্য ফ্রান্সের আনা একটি প্রস্তাব আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়া খবর দিচ্ছে যে, আজ শুক্রবারের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হতে পারে। এর আগে হামাসের উপ-প্রধান আবু মুসা মারজুকও জানিয়েছিলেন, দুই-এক দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হতে পারে।

সর্বশেষ খবর