শনিবার, ২২ মে, ২০২১ ০০:০০ টা
শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদন

ডুমুরিয়ার সবজি যাচ্ছে ইউরোপের বাজারে

প্রথম চালানে পটোল কচুর লতি ও কাঁচকলা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

ডুমুরিয়ার সবজি যাচ্ছে ইউরোপের বাজারে

প্রথমবারের মতো খুলনার ডুমুরিয়ায় উৎপাদিত নিরাপদ সবজি পটোল, কচুর লতি, পেঁপে ও কাঁচকলা রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের বাজারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় স্থানীয় ভিলেজ মার্কেট থেকে চাষিদের উৎপাদিত সবজি কিনে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তা বিদেশে পাঠাচ্ছে। ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষিরাও।

জানা যায়, নিরাপদ সবজি উৎপাদনে সাফল্য পাওয়ায় ডুমুরিয়ার বরাতিয়া, শোভনা, খর্নিয়া, সাহস ও শরাফপুর এলাকাকে ‘সবজি জোন’ বলা হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে ধান ও চিংড়িতে লোকসান হওয়ায় চাষিরা সবজি চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, রবি মৌসুমে এখানে ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর, খরিপ মৌসুমে ১ হাজার ৮৫০, বর্ষাকালে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। কিন্তু অনেক সময় উৎপাদিত সবজির দাম না পেয়ে কৃষক হতাশ হয়ে পড়তেন। এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে সবজি ইতালি, ইংল্যান্ডে যাচ্ছে। এতে তাদের মধ্যে নতুন উৎসাহ তৈরি হবে। জানা যায়, চলতি বছরে খুলনার ডুমুরিয়া থেকে ১২০ মেট্রিক টন সবজি রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। রপ্তানিকারক আর আর এন্টারপ্রাইজ ও এনএইচবি করপোরেশনের মাধ্যমে ডুমুরিয়া থেকে বাছাই করা এসব সবজি ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে। সেখানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অনুমোদন এবং প্যাকেটজাতের পর বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এদিকে প্রথমবারের মতো ইউরোপের বাজারে খুলনা থেকে সবজি রপ্তানি শুরু হওয়ায় ডুমুরিয়ার ভিলেজ মার্কেটে কৃষক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াদুদ। 

কর্মকর্তারা জানান, কৃষকদের দক্ষতা উন্নয়নে ‘সফল’ প্রকল্পের আওতায় সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ডুমুরিয়ার কৃষকদের সঙ্গে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ স্থাপন করে দিয়েছে। সংস্থার কমোডিটি ম্যানেজার (ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল) কৃষিবিদ নাজমুন নাহার জানান, বিদেশে রপ্তানির জন্য বাছাই করে সবজি জোনের ২৫০ জন চাষিকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। রপ্তানিকারকরা সরেজমিন এসব কৃষকের ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। তাদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষিত চাষিরাই বাণিজ্যিকভাবে সবজি উৎপাদন ও রপ্তানি করবেন।

বরাতিয়া গ্রামের কৃষক ইন্দ্রজিৎ নন্দী জানান, কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে তিনি চার বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন। এতে অধিকাংশ জৈবসার ভার্মিকম্পোস্ট ও সামান্য বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। তিনি বলেন, উৎপাদিন সবজি নিয়ে টেনশনে থাকতাম। অনেক সময় প্রকৃত মূল্য পাওয়া যেত না। এখন উৎপাদিত এই সবজি বিদেশে যাওয়ায় ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি। সবজির গুণগত মান ভালো হলে আমরাই বেশি লাভবান হব।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, উপযুক্ত বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় অনেক সময় চাষি লোকসান দিয়েছে। উৎপাদিত পেঁপে চাহিদা না থাকায় কখনো দুই থেকে পাঁচ টাকা কেজি, চালকুমড়া প্রতিটি দুই টাকা, টমেটো দুই থেকে পাঁচ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এখন সবজি বিদেশে রপ্তানি হওয়ায় কৃষিতে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে। তুলনামূলক দাম বেশি পেয়ে খুশি কৃষকরাও।

সর্বশেষ খবর