শনিবার, ২২ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ডায়ানা-চার্লসের সম্পর্কে চিড় ধরায় বিবিসি

প্রিন্স উইলিয়াম

প্রতিদিন ডেস্ক

ডায়ানা-চার্লসের সম্পর্কে চিড় ধরায় বিবিসি

সাক্ষাৎকারের জন্য প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিবিসি প্রিন্সেস ডায়ানার বিশ্বাসভঙ্গের পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে প্রিন্স চার্লসের সম্পর্কের অবনতি ঘটায় বলে অভিযোগ করেছেন ব্রিটেনের রাজপুত্র উইলিয়াম। সূত্র : রয়টার্স।

সাম্প্রতিক তদন্তে বিবিসির ‘ছলচাতুরী’র তথ্য প্রকাশের পর রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যমটির বিরুদ্ধে চার্লস-ডায়ানা দম্পতির বড় ছেলের কাছ থেকে ‘কড়া বক্তব্য’ এলো। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৫ সালের আলোচিত সাক্ষাৎকারটি নেওয়ার জন্য প্রিন্সেস ডায়ানাকে রাজি করাতে ছলনার   আশ্রয় নিয়েছিলেন বিবিসির সাংবাদিক মার্টিন বশির। ওই সময় বিবিসিও বিষয়টি চেপে গিয়েছিল। ব্রিটেনের ২ কোটি দর্শক দেখেছিল ওই ‘প্যানারোমা’ সাক্ষাৎকার, যেখানে ডায়ানা তাঁর প্রণয়ের কথা স্বীকার করে জাতিকে চমকে দেন এবং যুবরাজ চার্লসের সঙ্গে তাঁর বিয়ের বিস্তারিত তুলে ধরেন। ১৯৯৭ সালে প্যারিসে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় ৩৬ বয়সে মারা যান ডায়ানা।

বিবিসির অসততার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে উইলিয়াম বলেন, ‘যেসব ছলচাতুরীর মাধ্যমে সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছিল সেগুলো আমার মায়ের বক্তব্যকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল বলে আমি মনে করি। প্রচারের পর সাক্ষাৎকারটি আমার মা-বাবার সম্পর্ককে আরও খারাপ করে ফেলেছিল এবং তার পর থেকে অসংখ্য মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিবিসির ব্যর্থতা কতটা গভীরভাবে মায়ের ভয়, আতঙ্ক ও একাকিত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছিল সে চিন্তা আমার জন্য অবর্ণনীয় কষ্টদায়ক। তাঁর শেষ বছরগুলোর কথা আমার মনে আছে।’ প্রিন্স উইলিয়াম বলেন, ‘১৯৯৫ সালে যখন প্রথম এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয় তখনই বিবিসির উচিত ছিল যথাযথ তদন্তের পদক্ষেপ নেওয়া। তিনি (ডায়ানা) শুধু একজন অসৎ সাংবাদিকের কাছ থেকেই প্রতারিত হননি, বরং ঘটনাটি অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করে এবং জোরালো জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে গিয়ে তৎকালীন বিবিসির শীর্ষ কর্মকর্তারাও তাঁর আস্থা ভঙ্গ করেছেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের মাধ্যমে চিহ্নিত এসব ব্যর্থতা শুধু আমার মা এবং আমার পরিবারকেই অপদস্থ করেনি, এটা জনগণের আস্থাও নষ্ট করেছে।’

একই সময়ে দেওয়া আলাদা বিবৃতিতে বিবিসির নাম উল্লেখ না করে উইলিয়ামের ছোট ভাই হ্যারি আরেকটু বিস্তৃত পরিসরে গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, ‘অনৈতিক চর্চা এবং অন্যায় সুযোগ নেওয়া সংস্কৃতির তরঙ্গায়িত প্রভাব শেষ পর্যন্ত আমার মায়ের জীবনটাই কেড়ে নিয়েছে। যারা কিছুটা হলেও এর দায় স্বীকার করেছেন, তাদের ধন্যবাদ। ন্যায় ও সত্যের পথে প্রথম পদক্ষেপ এটা। তবু যে বিষয়টি আমাদের খুবই ভাবায় তা হলো, এ ধরনের বা এর চেয়েও খারাপ চর্চার অনুশীলন বিন্দুমাত্র কমেনি।’

ডায়ানাকে সাক্ষাৎকারটি দিতে বিবিসির সাংবাদিক বশির ‘অনৈতিক পথ’ নিয়েছিলেন বলে তাঁর ভাই চার্লস স্পেনসার গত নভেম্বরে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য বশির এমন কিছু জাল নথি ব্যবহার করেছিলেন যেগুলো দেখে মনে হয় ডায়ানার পেছনে বাকিংহাম প্যালেসের কর্মীদের লাগানো হয়েছিল এবং নজরদারির জন্য তাদের পারিশ্রমিকও দেওয়া হয়।’ স্পেনসার দাবি করেন, বশির ওইসব জাল ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখিয়ে তাঁর সঙ্গে ‘চালাকি’ করেন, তাঁর বোনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে ‘প্রলুব্ধ’ করেন।

তাঁর অভিযোগের পর বিবিসি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। সাবেক বিচারক লর্ড ডাইসনকে প্রধান করে কমিশন গঠন করা হয়। ডাইসনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ঘটনার সময় প্রায় অচেনা সাংবাদিক মার্টিন বশির ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখিয়েছিলেন ডায়ানার ভাই স্পেনসারকে। তাতে ভড়কে গিয়ে সাক্ষাৎকারের আয়োজন করে দিতে উদ্যোগী হন স্পেনসার। সাক্ষাৎকারটি কীভাবে নিয়েছিলেন সে বিষয়ে বশির তার ঊর্ধ্বতনদের বরাবর মিথ্যা বলেছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। কমিশন বলছে, বশির যা করেছেন তাতে নৈতিকতা ও সুষ্ঠু সাংবাদিকতার নীতিমালা মারাত্মক লঙ্ঘিত হয়েছে। আর কর্মী হিসেবে তার অপকর্মের অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ‘ব্যর্থ’ হয়েছে বিবিসি; সাক্ষাৎকারটি নিতে বশিরের ‘ছলচাতুরী’ পদ্ধতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এজন্য বাকিংহাম প্যালেসের কাছে বিবিসিকে দুঃখপ্রকাশ করতে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিশন।

সর্বশেষ খবর