সোমবার, ২৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ইয়াস আঘাত করবে বুধবার

সাগর উপকূলে সতর্কতা গরমে অতিষ্ঠ জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক

পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপের রূপ নিয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টিরও আভাস দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী ২৬ মে বুধবার ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বাংলাদেশের খুলনা ও সাতক্ষীরা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আগে দেশের সব বিভাগে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টানা কয়েক দিন ধরে অসহনীয় গরমে অস্বস্তিকর অবস্থা জনজীবনে। গতকাল খুলনায় দেশের সর্বোচ্চ ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া গরমের তীব্রতা আর অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি পেতে খুলনায় (বিশেষ ইস্তিসকার) বৃষ্টির জন্য নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। সিনিয়র আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস বলেন, রবিবার বেলা ১২টার দিকে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। বিকাল ৫টার দিকেও সেটি একই এলাকায় অবস্থানে রয়েছে। নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে আজ সোমবার ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে, তখন এর নাম হবে ‘ইয়াস’। বিকাল ৫টায় নিম্নচাপটির অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণে। রুহুল কুদ্দুস বলেন, এটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে এবং পরে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হতে পারে। বর্তমান গতিধারা অব্যাহত থাকলে ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার নাগাদ ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে পৌঁছাতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ এখন ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে। উত্তর বঙ্গোসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

দেশজুড়ে মাঝারি তাপদাহ : আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানান, রবিবার খুলনায় দেশের সর্বোচ্চ ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সব বিভাগে টানা তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, চটগ্রাম, বরিশাল, খুলনাসহ অনেক জায়গায় বৃষ্টির আভাস আছে। তাপমাত্রা আর হয়তো বাড়বে না। কাল মঙ্গলবার থেকে ধীরে ধীরে কমবে; বৃষ্টিও হবে অনেক জায়গায়। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী-

খুলনায় বিশেষ ইস্তিসকার নামাজ : গরমের তীব্রতা আর অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি পেতে খুলনায় বিশেষ ইস্তিসকার (বৃষ্টির জন্য নামাজ) ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল দুপুরে দৌলতপুরের দেয়ানা উত্তরপাড়া স্কুল মাঠে স্থানীয় মুসল্লিদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত নামাজ পরিচালনা করেন দৌলতপুর বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা রশিদ আহমেদ। নামাজ শেষে মুসল্লিরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের ও গোনাহ মাফের প্রার্থনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। নামাজে উপস্থিত ছিলেন দেয়ানা উত্তরপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা হাবিবুর রহমান, দেয়ানা জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আরিফ বিল্লাহ, সুলতানিয়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি মাওলানা নাজমুল হাসান, মুর্তজা আল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মেহেদী হাসান আল হাদী, দেয়ানা মহিলা দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম হোসাইন, পিলখানা জামে মসজিদ ঢাকার ইমাম ও খতিব মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক।

খুলনায় প্রস্তুত ২৮৩টি আশ্রয় কেন্দ্র : খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা ও কয়রায় পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর তত্ত্বাবধানে বেড়িবাঁধ আছে ৫১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে ৪৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এ ছাড়া বাঁধে ছিদ্র থাকায় বিভিন্ন স্থানে তা নড়বড়ে হয়ে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে এসব স্থানে বাঁধ ভাঙলে বিস্তীর্ণ এলাকা আবারও লবণ পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে কৃষিজমি ও মাছচাষের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ায় উপকূলীয় খুলনার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ঝড়ের আগে যাতে উপকূলীয় এলাকার সাধারণ মানুষ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে, সে জন্য জেলার ২৮৩টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। এতে ১ লাখ ৯০ হাজার ৩৭০ জন আশ্রয় নিতে পারবেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসনের পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে যাতে স্থানীয় লোকজন থাকতে পারেন, সেজন্য ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

প্রস্তুত চট্টগ্রাম : ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সামগ্রিক প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন প্রস্তুত করেছে আশ্রয় কেন্দ্র, প্রতিটি উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নগদ টাকা, পরিষ্কার করা হয়েছে জরাজীর্ণ আশ্রয় কেন্দ্র, সংযোগ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫০০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। ইতিমধ্যে পাঁচজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক উপকূলবর্তী উপজেলাগুলোর আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছেন।

বরিশালে প্রস্তুত ১০৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র : বরিশালে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩১৬টি সাইক্লোন শেল্টার এবং আরও ৭৫৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের সময় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে গতকাল বরিশালের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিস্ট সব কর্মকর্তাদের সঙ্গে জুম কনফারেন্স করেছে জেলা প্রশাসক। সভায় ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগেই সব এলাকায় সতর্কতামূলক মাইকিং করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগেই সাইক্লোন শেল্টারসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গবাদি পশুসহ সবাইকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক। এদিকে বরিশালে গত এক সপ্তাহ ধরে মাঝারি তাপদাহ বিরাজ করছে। প্রখর রোদ এবং তীব্র গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। বিপন্ন প্রাণীকুল। গতকাল বরিশালে তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ থেকে বরিশালে ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর