সোমবার, ২৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

সড়ক নির্মাণে মানসম্মত বিটুমিন ব্যবহার হয় না

সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে সড়ক নির্মাণে মানসম্মত বিটুমিন ব্যবহার করা হয় না বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা মানসম্মত বিটুমিনের ব্যবহার দেখছি না। মুনফা লুণ্ঠন করতে গিয়ে সড়কে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে প্রতি বছর ২০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ দিচ্ছে। আমরা মানসম্মত বিটুমিন, পাথরসহ অন্যান্য উপকরণের ব্যবহার সঠিক মাত্রায় চাই। এই মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এখানে দুর্নীতি জড়িত। এটা যাদের মনিটরিং করার দায়িত্ব, তাদের মনিটরিং করবে কে? এমনকি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট মিলে যে মান নির্ধারণ করেছিল, তাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন-বারভিডা সভাপতি আবদুল হক, বেসরকারি সংস্থা নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরিফ প্রমুখ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমরা মনে করি- নিরাপদ সড়ক পাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে। দেশে রোড সেফটি অডিট বিভাগ থাকলেও, বাস্তবে তাদের কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না। তাদের প্রতি বছর সড়ক অডিট করে জাতির সামনে উপস্থাপন করতে দেখি না। এখানে জবাবদিহিতা প্রয়োজন। সবার আগে মানসম্মত উপকরণ ব্যবহার হচ্ছে কিনা, সেটা দেখা উচিত। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এই সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে, এখনো তিন বছর হয়নি। এই সড়ক নির্মাণে যে সমস্ত উপকরণ ব্যবহার হওয়ার কথা, বিশেষ করে বিটুমিন, পাথরসহ অন্যান্য উপদান সঠিক মাত্রায় ব্যবহার হয়েছে কিনা, তাও জরিপ করে দেখা উচিত। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব আরও বলেন, আমারা দেখতে পাচ্ছি- উন্নত বিশ্ব কিংবা আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে সড়ক নির্মাণে যে অর্থ খরচ হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ খরচ হয় বাংলাদেশে। ওইসব দেশের সড়ক যত টেকসই ও স্থায়িত্ব হয়, বাংলাদেশে তেমন হয় না। আমরা কোনো কোনো সড়কে দেখি, নির্মাণ কাজ ১ কিলোমিটার শেষ হওয়ার আগেই, যে দিক থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল, সেই দিক থেকে রাস্তার ওপরের অংশ উঠে যাচ্ছে। অর্থাৎ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রশ্নোত্তরে বলেন, এক সময়ে ব্যবসায়ীরা ঠিকাদারি করতেন, এখন রাজনৈতিক নেতারা ঠিকাদারি করছেন। রাজনৈতিক নেতারা ঠিকাদারি করলে জবাবদিহির ঊর্ধ্বে চলে যান। আমলারা তাদের কাছ থেকে কাজ বুঝে নিতে পারেন না। এর ফলে সড়কের মান নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। বছর বছর সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণা-বেক্ষণ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। এখন বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা পৌঁছে গেছে। যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ হচ্ছে, সেই পরিমাণ ও মানের রাস্তা জনগণ পাচ্ছে না। ফলে যাত্রীদের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে জীবন দিতে হচ্ছে। সে কারণে এসব বিষয়ে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনের তথ্যনুযায়ী- করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি যাতায়াতে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ও ৬২২ জন আহত হয়েছেন। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে বলা হয়- মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩২ দশমিক ৩৮ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪০ দশমিক ৮৮ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২২ দশমিক ৩২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এ ছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১ দশমিক ২৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে সংঘটিত হয়। যাত্রী কল্যাণ সমিতি দুর্ঘটনার কারণসমূহ তুলে ধরে বলেছে- মহাসড়কের নিমাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা রয়েছে। এই দুর্ঘটনা প্রতিরোধের সুপারিশে সংগঠনটি বলেছে, মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা এবং নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করতে হবে। এতে বারভিডা সভাপতি আবদুল হক বলেন, গাড়ির ফিটনেস ও অন্যান্য সেবাসমূহ নিতে গিয়ে বিআরটিএ-তে অস্বাভাবিক হয়রানি ও ঘুষবাণিজ্যের শিকার হচ্ছেন গাড়ির মালিকরা। ফলে ফিটনেসবিহীন গাড়ি বাড়ছে, ঘটছে দুর্ঘটনা। শরিফুজ্জামান শরীফ বলেন, দূর পাল্লার বাস বন্ধ করে যে যেখানে আছে সেখানে ঈদ করবে এটি সঠিক সিদ্ধান্ত থাকলেও বাস্তবায়নে নানা জটিলতায় কিছু মানুষের বাড়ি যাওয়া অত্যন্ত ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর